সিলেটে সোহানের খুনীরাই হত্যা করেছে কামালকে

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

Councelor Shahanaসিলেটে কলেজছাত্র সোহান ইসলামের খুনীরাই হত্যা করেছে ছাত্রদল সন্ত্রাসী কামালকে। এ অভিযোগ করেছেন নিহত সোহানের মা সাবেক সিটি কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু। মঙ্গলবার (২৬জানুয়ারী) পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন তিনি। সিলেট প্রেসকাব ও সিলেট জেলা প্রেসকাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাহানা জানান, ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারী তার পুত্র সিলেট মদন মোহন কলেজছাত্র সোহান ইসলামকে খুন করে স্থানীয় সন্ত্রাসী গুলজার বাহিনী। নগরীর লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সমানে তাকে কোপিয়ে খুন করে তারা। আর এ খুনের নেপথ্যে ছিল ছাত্রীগ কর্মী ঝুটন হত্যামামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত নগরীর খুলিয়াপাড়ার ছাত্রদল সন্ত্রাস কামাল। কামাল ছিল ২০১২সালে ছাত্রলীগ কর্মী ঝুটন হত্যামামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং ২০০৮ সালে জাফলংয়ে স্কুলছাত্র লিটন হত্যামামলার চার্জশিটভুক্ত আসামী । সোহান খুনের ঘটনায় তার মা শাহানা বেগম শানু বাদী হয়ে নগরীর খুলিয়াপাড়া এলাকার গুলজার, শাকিল, টিপু, টাইগার জামাল, আমির, রিপন,জামাল আহমদ, সাকিব, রিয়াজ ও কামরুলসহ ১০জনকে এজাহারভুক্ত করে সিলেট কোতায়ালী থানায় একটি মামলা (নং-৩১(১)১৪) করেন।
সংবাদ সম্মেলনে শাহানা বেগম জানান, তার পুত্র সোহনকে খুন করার পর মামলার ব্যয় ও দায়মুক্তি নিয়ে এ খুনের নেপথ্যের নায়ক কামালের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় ভাড়াটে খুনী গুলজার ও তার সহযোগীদের। এ দ্বন্দ্বের জের ধরে গুলজার ও তার খুনীচক্র ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কামালকে খুন করে। খুনের পর কামালের স্ত্রী হেপিকে ম্যানেজ করে তারা এ খুনের দায় সোহান পরিবারে উপর চাপিয়ে দেয় ও হেপিকে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সিলেট কোতোয়ালী থানায় মামলা করায়। মামলা করানোর পর তাদের পলাতক রেখে সোহান হত্যামামলা ডিবি পুলিশে নিয়ে গুলজারসহ এজাহার নামীয় ৮আসামী অব্যাহতি নেয়। সোহান পরিবারের অজান্তেই তারা অন্য লোকদের জড়িয়ে নামেমাত্র একটি চার্জশিট দাখিল করায়। এ চার্জশিটের বিরুদ্ধে তারা না-রাজি দিলে সোহান হত্যা মামলাটি বর্তমানে সিআইডি পুলিশের তদন্তে দেয়া হয়েছে। সোহানের খুনীরা কামালকে হত্যা করেছে মর্মে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী কামালের বন্ধু নগরীর দরগাহ গেইটের রিপন। কারাগার থেকে সে এ মর্মে জবানবন্দী দেয়ার জন্য আদালতে লিখিত আবেদন কররে আদালত তা নথিভুক্ত করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা রিপনের জবানবন্দী গ্রহনের ব্যবস্থা করেন নি।
শাহানা বেগম শানু আরো জানান, কামাল হত্যাকান্ডের সময় তার স্বামী নগরীর শাহী ঈদগাহে ছিলেন এবং মোবাইল ফোনে শাহানাও তার পরিবারের লোকজন বাসায় থেকে অন্যত্র মোবাইল ফোনে আলাপ করছিলেন। মোবাইল ফোনের সার্ভার চেক করালে কামাল হত্যার সময়ে তার স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের অবস্থান সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে সংশ্লিষ্টরা প্রযুক্তিগত এ তদন্তে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন।
তিনি আরো জানান, সোহানের খুনীরা কামালকে হত্যা করে এ হত্যাকান্ডের দায় তাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি তারা জনৈকা ভুয়া উরফুল বিবি ও তার কথিত মেয়ে সুমাকে বাদী ও ভিকটিম বানিয়ে সিলেটের ওসমানীনগর ও ঢাকার পল্টন থানায় তার ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে পৃথক নারী নির্যাতন মামলা করায়। তদন্তে এ দু মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয় এবং বাদী ও ভিকটিমের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনের ১৭ধারায় পাল্টা প্রসিকিউশন দাখিলের সুপারিশ করে পুলিশ।
কামালকে খুন করে সাজানো মামলা দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে সোহানের খুনী গুলজার ও তার সহযোগীরা আরো বে-পরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা তার পরিবারের অন্যদের খুন করতে মেতে উঠেছে। এর অংশ হিসেবে গত ২০ডিসেম্বর তার অপর পুত্র রায়হান ইসলামের উপর হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর জখম করে। পরে তার চোখে চুন ও মরচের গুড়ো ঢেলে তাকে জীবনের জন্য অন্ধ বানিয়ে দেয়। গুলজারদের হামলায় আহত রায়হান এখন ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এ ঘটনায় শাহানা বেগম বাদী হয়ে গুলজার, সিলেট ডিসি অফিসের সাবেক সিও আলাউদ্দিন, জামাল আহমদ, হেপি বেগম, তোফায়েল, বিক্রম, শিহাব, স্বপন, সবুজ,রিপন সহ ২১জনকে আসামী করে সিলেট কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা (নং-২৭(১২)১৫) করেন। কিন্তু ঘটনার একমাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোন আসামীকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। অজ্ঞাত কারনে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে শাহানা বেগম শানু তার পুত্রের খুনী ও তার অপর পুত্রের উপর হামলাকারী সন্ত্রাসী ্অলাউদ্দিন-গুলজার ও তাদের সহযোগীদের অবিলম্বে গ্রেফতার দাবি করেন। পাশপাশি উচ্চপর্যায়ের প্রযুক্তিগত তদন্তের মাধ্যমে কামাল হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে শাহানা বেগম শানু ছাড়াও অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রীনা বেগম,শাহানা ইসলাম, ছায়া বেগম, দৌলতী বেগম,দিলরূবা বেগম, জাহাঙ্গীর আলম ও জামাল উদ্দিন প্রমূখ।