টেংরাটিলায় বিস্ফোরণের দায় অস্বীকার নাইকোর
ডেস্ক রিপোর্টঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের দায় অস্বীকার করছে কানাডীয় কোম্পানি নাইকো রিসোর্সেস। বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তিসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে (ইকসিড) তারা এই দায়হীনতার সমর্থনে যুক্তি উপস্থাপন করেছে। এই মর্মে ইকসিডের রায়ও প্রত্যাশা করছে কোম্পানিটি।
অপরদিকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলমান এই মামলায় পেট্রোবাংলার আইনজীবী নাইকোর ওই দাবি চ্যালেঞ্জ করেননি। যদিও নাইকোর ভুলেই যে টেংরাটিলায় বিস্ফোরণ ঘটেছে, সে বিষয়ে বাপেক্সের কাছে নাইকোর লিখিত স্বীকারোক্তি রয়েছে। কিন্তু পেট্রোবাংলার আইনজীবী সেই প্রামাণ্য কাগজপত্র ইকসিডে উপস্থাপনই করেননি।
তবে আইনজীবী পরিবর্তন ও প্রামাণ্য কাগজপত্র দাখিলসহ মামলা পরিচালনায় সরকার কিছু দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ায় এখন নাইকোর দাবি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে ঢাকায় সরকার ও নাইকোর পক্ষের সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে। তারা বলছে, গত নভেম্বরে ইকসিডে অনুষ্ঠিত শুনানিতে বাপেক্সের তৎকালীন একজন মহাব্যবস্থাপকের সাক্ষ্যে আদালত অনেক নতুন তথ্য পেয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ইকসিডের পক্ষ থেকে নিযুক্ত স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞরাও নাইকোর দাবির যৌক্তিকতা খুঁজে পাননি। এই প্রেক্ষাপটে আদালত আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্যারিসে আবার শুনানি করবেন বলে জানা গেছে।
নাইকোর দায় প্রমাণিত হলে সেই দায় কতটা, তা নির্ধারণে ইকসিড পরবর্তী কার্যক্রম নিতে পারবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, পেট্রোবাংলা তথা সরকারের পক্ষ থেকে ইকসিডে নাইকোর কাছে বাংলাদেশের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও মীমাংসার আরজি জানানো হবে।
তবে এর আগে ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম বাবদ নাইকো পেট্রোবাংলার কাছে যে টাকা পাবে (সুদসহ প্রায় ২১৬ কোটি টাকা) তা একটি নিরপেক্ষ অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে হবে। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর নাইকোর গ্যাসের দাম পরিশোধসংক্রান্ত মামলায় ইকসিড এমন একটি রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু এই টাকা পরিশোধের ব্যাপারে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, তাই সরকারের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে আরজি জানানো হয়েছে নিষেধাজ্ঞাটি তুলে নেওয়ার জন্য।
মামলাগুলোর প্রেক্ষাপট: সরকার টেংরাটিলা, ফেনী ও কামতা গ্যাসক্ষেত্রকে ‘প্রান্তিক’ দেখিয়ে সেখান থেকে গ্যাস তুলতে ১৯৯৯ সালে নাইকো-বাপেক্স যৌথ উদ্যোগের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। নাইকোর অদক্ষ কূপ খনন-প্রক্রিয়ার কারণে ২০০৫ সালে দুবার (৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন) টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটে। এর ফলে ওই গ্যাসক্ষেত্র ও সন্নিহিত এলাকায় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
সরকার তথা পেট্রোবাংলা প্রথমে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করে। তা সফল না হওয়ায় ২০০৮ সালে ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ৭৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করা হয়।
অপরদিকে ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে নাইকো-বাপেক্সের যৌথ চুক্তির অধীনে গ্যাস তুলে জাতীয় গ্রিডে দেওয়া হচ্ছিল। টেংরাটিলা বিস্ফোরণের পর পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) হাইকোর্টে মামলা করে। হাইকোর্টের আদেশে নাইকোকে ফেনী গ্যাসক্ষেত্রের জন্য গ্যাসের দাম দেওয়া বন্ধ করে দেয় পেট্রোবাংলা।
কানাডার আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে, ওই চুক্তি সম্পাদনে দুর্নীতি হয়েছিল। নাইকো দোষ স্বীকার করায় আদালত দণ্ড হিসেবে ৯৪ লাখ ৯৯ হাজার কানাডীয় ডলার (৯৭ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৪ মার্কিন ডলার) জরিমানার আদেশ দেন।
ইকসিডে মামলা ও আদেশ: নাইকো ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল একটি ও ১৬ জুন আরেকটি মামলা ইকসিডে দায়ের করে। মামলা দুটিতে নাইকো ইকসিডের কাছে দুটি বিষয়ে আদেশ চায়। এক. টেংরাটিলায় বিস্ফোরণের দায় তাদের ওপর বর্তায় কি না এবং বাংলাদেশ ও পেট্রোবাংলা এই ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে কি না। দুই. ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম পরিশোধ পেট্রোবাংলা বন্ধ রাখতে পারে কি না।