পুলিশের উপ-পরিদর্শককে কিল, ঘুষি, লাথি: ইউনিফর্ম ছিড়ে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের উল্লাস!

Police wondedডেস্ক রিপোর্টঃ রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে সরকার দলীয় কাউন্সিলরের নেতৃত্বে পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলা চালিয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে কিল, ঘুষি, লাথি ও তার পোষাক ছিড়ে উল্লাসের ঘটনা ঘটলেও উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগন জেনেও না জানার ভান করে আছেন। গত ২ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে কামরাঙ্গীরচর থানার ঝাউলাহাটী চৌরাস্তার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ২ডিসেম্বর রাত ১০টার সময় তিনি তার সঙ্গীয় কয়েকজন ফোর্স নিয়ে কামরাঙ্গীরচর থানার চাঁন মসজিদ এলাকায় ডিউটি করছিলেন। এ সময় সন্দেহভাজন অন-টেস্ট (নম্বর বিহীন) একটি মোটরসাইকেলে ৩জন যুবক দ্রুতগতিতে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদেরকে তিনি মোটরসাইকেল থামানোর জন্য সিগন্যাল দেন। কিন্তু তখন মোটরসাইকেলের ৩আরোহী সিগন্যাল অমান্য করে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কালে বৃদ্ধ এক পথচারীর ওপর উঠিয়ে দেন। এতে তিনি আহত হন।

পরে এসআই আব্দুল মোতালেব তাদের আটক করেন এবং মোটরসাইকেলের বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাইলে আরোহীরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হন। এরপর তারা সরকারী দলের পরিচয় দিয়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে কামরাঙ্গীরচরের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনের কাছে মোবাইল ফোনটি ধরিয়ে দেন। এসময় মোটরসাইকেল আটক করে কাগজপত্র দেখতে চাওয়ার অপরাধে কাউন্সিলরও তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে তাকে মোটরসাইকেটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেন। আর মোটরসাইকেল ছেড়ে না দিলে তাকে শাস্তিমূলক অন্যত্র বদলি করার হুমকি দেন ওই কাউন্সিলর।

কামরাঙ্গীরচার থানার সহকারী পরিদর্শক (এসআই) মোতালেবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, একজন জনপ্রতিনিধির গালাগালি ও হুমকিতে তিনি হতাশ হয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন। এরপর বিষয়টি তিনি থানার ওসিসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঝাউলাহাটী এলাকায় দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।

এর কিছুক্ষন পর কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে রনি মার্কেটের মাহবুবুল আলম রনি, আশিক বাবু, সন্ত্রাসী সাহাবুদ্দিনসহ ২০-২৫জন যুবক কয়েকটি মোটরসাইকেল যোগে ঝাউলাহাটীতে গিয়ে এস আই মোতালেবের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়।এসময় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ হোসেনসহ সন্ত্রাসীরা এসআই মোতালেবকে কিল ঘুষি, লাথি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে তার ইউনিফর্ম ছিড়ে নেয় এবং বাঁশিটিও ছিড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এসময় তিনি ও তার সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স শর্টগানের গুলি ছোড়ার হুমকি দেন। এসময় সরকার দলের দুর্বৃত্তরা সেখান থেকে পিছু হটে তাদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। আর এই ঘটনার খবর পেয়ে কামরাঙ্গীরচর থানার এএসআই রায়হানসহ অতিরিক্ত পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলা কারীদের কবল থেকে এসআই মোতালেবসহ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করেন। এ ঘটনার পর রাতেই এসআই আব্দুল মোতালেব ডিউটি শেষে একটি জিডি করেন যার নম্বর ৭৯তাং-০২-১২-১৫।

পরে বিষয়টি লালবাগ বিভাগের উধ্বর্তন পুলিশ কর্মকর্তাদের লিখিত ভাবে জানান তিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়নি বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, কামরাঙ্গীরচর থানার ওসিসহ পুলিশ পুলিশ কর্মকর্তাগণ সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেই আগের মতোই জঙ্গিদের নিরাপত আশ্রস্থল ও মাদক ব্যবসায়ীসহ সন্ত্রাসীদের অভয়অরন্যে পরিনত হয়েছে। সেখান থেকে র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে চাঞ্চল্যকর পুলিশ হত্যার আসামিসহ জঙ্গিদের গ্রেফতার এবং গ্রেনেড ও বিস্ফোর এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।

অথচ তার থানার একজন দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তার উপর হামলা চালিয়ে ইউনিফর্ম ছিলে নিলেও তারা জেনেও না জানার ভান করে থাকছেন।

কামরাঙ্গীরচরের রনি মার্কেটের মালিক মাহবুবুল আলম রনির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনায় জড়িত না থাকার কথা জানিয়ে বলেন, আমি রাতের বেলায় কখনো কামরাঙ্গীরচরে থাকি না। আর এ ধরনের কোন ঘটনা তার জানা নাই বলে কে জানান তিনি। আর কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনের সেল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি তার ফোনটি রিসিভ করে বলেন আপনি রং নম্বরের ফোন করেছেন।

এ ব্যাপারে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি তদন্ত) মো: সাকের জুবায়ের কে জানান, হামলার ঘটনা ঘটেনি। মোবাইল ফোনে তার সাথে কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটেছে।

এ ব্যাপারে লালবাগ জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সঞ্জিত কুমার রায় কে বলেন, বিষয়টি শুনেছি। আর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।