পুনর্গঠন ঘিরে দ্বন্দ্ব বেড়েছে মৌলভীবাজার বিএনপিতে

moulovibazar bnpডেস্ক রিপোর্টঃ কেন্দ্র থেকে দলকে পুনর্গঠন ও ঐক্যবদ্ধ করার নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও মৌলভীবাজার বিএনপিতে কোনো নির্দেশনাই বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বরং কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে জেলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, মোলভীবাজারে বিএনপির রাজনীতি চলছে দুই ধারায়। ফলে আলাদা আলাদা চলছে পুনর্গঠন কার্যক্রম। এই দুই ধারার একটির নেতৃত্বে রয়েছেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে জেলা সভাপতি এম নাসের রহমান। অন্যটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন নির্বাহী কমিটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও জেলা সাধারণ সম্পাদক বেগম খালেদা রাব্বানী।
দলীয় সূত্র জানায়, সাইফুর রহমান ছিলেন পুরো সিলেট বিভাগের বিএনপির অভিভাবক। তখন নেতাদের মধ্যে পদ-পদবি নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও কোন্দল করার সাহস দেখাননি কেউ । ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে দলকে ঢেলে সাজানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে সাইফুর রহমানের মৃত্যুতে তা ব্যাহত হয়। ফলে মৌলভীবাজারে দলটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার শুরুতেই পদ-পদবি নিয়ে বিভক্তি ঘটে নেতাদের মধ্যে। অভিভাবকহীন এই জেলার সাত উপজেলায় এখনো চলছে সেই বিভক্তি।
দলীয় নেতাদের মতে, ২০০৯ সালে সাবেক এমপি এম নাসের রহমান কেন্দ্র থেকে যে কমিটি নিয়ে আসেন, তাতে বাদ পড়েন অনেক ত্যাগী নেতা।
এ প্রসঙ্গে তৎকালীন জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদা রাব্বানী বলেন, ওই সময় আহ্বায়ক নাসের রহমান তার নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি করায় বাদ পড়া ত্যাগী নেতারা পাল্টা কমিটি গঠন করেন। ফলে কেন্দ্র অনেকটা বাধ্য হয়ে কিছু পদক্ষেপ নেয়।
দলীয় সুত্র জানায়, কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের জন্য এম নাসের রহমানকে জেলা সভাপতি ও খালেদা রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক এবং আবদুল মুকিতকে প্রথম যুগ্ম সম্পাদক করে একাট আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন। একই ভাবে জেলার সাত উপজেলা এবং পাঁচ পৌরসভায় উভয় পক্ষের লোকজন নিয়ে কাউন্সিল করার জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০০৯ সালের জাতীয় কাউন্সিল থেকে ফিরেই আলাদা আলাদা দলীয় কার্যক্রম শুরু করেন জেলার এই দুই শীর্ষ নেতা। এমনকি গত ছয় বছরে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি।
সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসিচিব মো. শাহজাহান এই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বেশ কবার মৌলভীবাজার সফর করেন। কিন্তু কেন্দ্রের কোনো চেষ্টাই এখানে সফল হয়নি। এমনকি ২০১৪ সালে এ বিষয়ে ডাকা একটি সভায় কেন্দ্রের নেতাদের আনা হয়। কিন্তু একপর্যায়ে শহরের হাসপাতাল রোডে দুই পক্ষের ভয়াবহ সংঘর্ষে ৪০-৫০ জনের মতো কর্মী আহত হন।
এদিকে ২০১১ সালে পৌর নির্বাচনে জেলার সব কটি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও বিগত উপজেলা নির্বাচনে সদরে সাবেক ছাত্রনেতা মিজানুর রহমান (ভিপি মিজান) ছাড়া আর কেউই এ জেলায় জয়ের মুখ দেখেননি। দলের সাধারণ কর্মীরা মনে করেন, প্রতিটি উপজেলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলাদা আলাদা প্রার্থী না দিলে দলের এই ভরাডুবি হতো না। এমনকি আগামী স্থানীয় নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন তৃণমূলের কর্মীরা।
এদিকে বর্তমান পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত সদর ও রাজনগর উপজেলা এবং মৌলভীবাজার পৌর কমিটি গঠন করেছেন সভাপতি এম নাসের রহমান। এসব কমিটি গঠনের সময় খালেদা রাব্বানীর সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন না। আবার খালেদা রাব্বানীর বাসায় অনুষ্ঠিত সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলনে যোগ দেননি জেলা সভাপতি এম নাসের রহমান ও তার অনুসারীরা।
এ ব্যাপারে জানতে জেলা সভাপতি নাসের রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
তবে সাধারণ সম্পাদক খালেদা রাব্বানী মৌলভীবাজার বিএনপিতে কোনো বিভক্তি নেই বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, শুধু জেলা সভাপতি ও তার কিছু অনুসারী সভা-সমাবেশে আসেন না। অন্য সভাই কর্মসূচিতে অংশ নেন।