জামায়াতি’ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নিতে নির্দেশ

islami-bank-towerসুরমা টাইমস ডেস্ক: যুদ্ধাপরাধ আদালতের ভাষায় ‘ক্রিমিনাল দল’ জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের দাবির মধ্যে এই নির্দেশ এল।বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন খাতে জামায়াতের লগ্নি রয়েছে বলে মনে করা হয়। যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবির আন্দোলনকারীরা বলে আসছে, এর মাধ্যমে দলটি আর্থিকভাবে পুষ্ট হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আসান মো. মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিন রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে একটি চিঠি পাঠানো হয়।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে লেখা ওই চিঠিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ‘জামায়াত নিয়ন্ত্রিত’ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মো. রিজওয়ানুল হুদা স্বাক্ষরিত ওই চিঠির সঙ্গে দুই পাতার একটি বিবরণী ও ২১৬ পাতার একটি সংযোজনীও পাঠানো হয়েছে।চিঠির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার যখন নির্দেশ দিয়েছে আমরা (বাংলাদেশ ব্যাংক) অবশ্যই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব।“তবে চিঠি ও তার সঙ্গে যেসব তথ্য-উপাত্ত অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছে, প্রথমে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কতটা করার সুযোগ আছে, সেগুলোও দেখতে হবে।”২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর পর গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে জামায়াত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠে।আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ এসব প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় মালিকানায় আনার দাবি জানিয়েছেন। এসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয়ের পরামর্শও এসেছে।তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য আসেনি। অর্থ মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিলেও কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে, তা স্পষ্ট করেনি। শাহবাগ আন্দোলনের মধ্যে যে প্রতিষ্ঠানগুলো জামায়াত সংশ্লিষ্ট বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলোর কর্মকর্তারাই ওই দলটির সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।যেমন ইসলামী ব্যাংক, যাকে জামায়াত সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘স্লোগান ৭১’ এর তালিকায়। বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বিভিন্ন সময়ে জামায়াতের নেতারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।এর আগের মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা আবু নাসের মোহাম্মাদ আব্দুজ জাহের মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম এলাকায় আল বদর বাহিনীর নেতা ছিলেন বলে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতাদের দাবি।তার আগে পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত মীর কাসেম আলী। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এই সদস্য ব্যাংকটির পর্ষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের সদস্যও (প্রশাসন) ছিলেন।ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আব্দুল হান্নানও জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।শাহবাগ আন্দোলনের মধ্য থেকে ইসলামী ব্যাংকের নাম আসার পর প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়।এছাড়া জামায়াতের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি হাসপাতাল, রোগ নিরূপণী কেন্দ্র, ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়।ব্যাংকের পাশাপাশি কয়েকটি বীমা প্রতিষ্ঠানকেও জামায়াতের বলে মনে করা হয়। বলা হয়, তাদের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম, পরিবহন কোম্পানি এবং কয়েকটি আবাসন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সারাদেশে অসংখ্য কোচিং সেন্টার ও স্কুল-কলেজও জামায়াতের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বলে চিহ্নিত।