হবিগঞ্জে কুশিয়ারার ভাঙ্গনে কোটি কোটি টাকার সম্পদ নদীগর্ভে বিলীন, প্রধানমন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা

12179806_764558120322791_1676006005_n copyশাহ মনসুর আলী নোমান: হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে বসতবাড়ি, বনজসম্পদ, চাষাবাদযোগ্য ভূমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার উপাসনালয় ইত্যাদি বিলীন হয়ে গেছে। তারপরও কুশিয়ারা নদীর ধ্বংসলীলা রোধ কল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন ।
নদী সভ্যতার প্রতীক হলেও কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী এলাকাবাসীর জন্য ধ্বংস ও ভয়ানক অভিশাপের প্রতীকরূপে বিরাজমান। তীরবর্তী এলাকাগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে কুশিয়ারা নদীর নাব্যতা হ্রাস, ঘরবাড়ি, বনজসম্পদ, চাষাবাদযোগ্য ভূমি ও বসতবাড়ি ভাঙ্গন সমস্যা, বন্যার তান্ডবলীলায় ফসলহানি, নদীতে চর জাগা , নৌযান চলাচল বিপর্যস্ত, মৎস্য সম্পদের অভাব, কুশিয়ারার তীর সংরক্ষণে উদাসীনতা ও স্থানীয় জীবনযাত্রার নিুমান সেই ব্রিটিশ শাসন থেকে অব্যাহত আছে।
কুশিয়ারা নদীর হিংস্র থাবায় ক্ষতিগ্রস্থ ও গৃহহীন হয়েছেন বারবার উত্তর নবীগঞ্জের দীঘলবাক, আহমদপুর, কুমারকাদা , গালিমপুর, মাধবপুর, ফাদুল্লা, মথুরাপুর, জগন্নাথপুর উপজেলার অটঘর, নোয়াগাঁও, রানীগঞ্জ, বানিয়াচং উপজেলার এক বিরাট জনগোষ্ঠী ।
জানাযায়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা রোধ কল্পে সামান্যতম হলেও সরকারী নানা পদক্ষেপ, ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন ও সাহায্য সহযোগিতা করা হলেও হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউ/পির জনগনকে কোন সরকারী সাহায্য, পুনর্বাসন করা হয়নি , এমনকি যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই ভাঙ্গনের তীব্রতা রোধ কল্পে বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যার ফলে উল্লেখিত জনপদের বিভিন্ন পেশার লোকজন চাষাবাদযোগ্য জমি, বাসগৃহ , বনজসম্পদ বারবার হারানোর বেদনায় এলাকার বাতাসে দুঃখ ও হতাশার করুণ ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। উল্লেখিত ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গনের ফলে মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে । যার ফলে দীঘলবাক ইউনিয়নে বেকারত্ব , অশিক্ষা, দারিদ্রতা আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
নবীগঞ্জের ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর ধ্বংসলীলা বন্ধ কল্পে স্থানীয় সমাজসেবী ও দীঘলবাক উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ্ আশ্রব আলী পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে অব্যাহত এই ভাঙ্গন রোধের জন্য পদক্ষেপ নিতে আবেদন পত্র পেশ করলে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন শাখা-৫ এর স্মারক পত্র নং- উঃ৫/বিবিধ-০৭/২০০/২০৭ (তারিখ-১৮-০৬-২০০০) মোতাবেক জরুরী ভিত্তিতে চেয়ারম্যান বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (ঢাকা) বরাবরে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিলে তাহা আলোর মুখ দেখেনি ।
সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম শাহ এ.এস.এম. কিবরিয়া এমপি ও পাউবোর তৎকালীন মহাপরিচালক মোখলেছুজ্জামান দীঘলবাক ইউ/পি ও তৎপার্শ্ববর্তী কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনকৃত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এর পরেও ভাঙ্গন রোধের কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি।
এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান প্রকৌশলী পাউবো (কুমিল্লা) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশল (মৌলভীবাজার)কে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন যা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (মৌলভীবাজার) এই ডায়েরী নং ২১০৫ তারিখ ২৮/০৬/২০০০ ইং এবং নবীগঞ্জের সাবেক ইউএনও বরাবরে দীঘলবাক এলাকার ভাঙ্গন রোধের জন্য আবেদন পত্র পেশ করলে তিনি ০৬/০৭/২০০০ ইং তারিখে কুশিয়ারা নদীর ধ্বংসলীলা ও প্রমত্ত্বতা সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে স্মারক নং- উনিও/নদী/গো:/বিবিধ ৬৫/৯৮-২০০০ইং মোতাবেক জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহন করতে ডিসি (হবিগঞ্জ) বরাবরে সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করেন। সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী শাহ মনসুর আলী নোমান কর্তৃক বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর সদস্য (পওর) বরাবরে দীঘলবাক এলাকার ভাঙ্গন প্রতিরোধের বিষয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে [ যাহা সদস্য (পওর) ঢাকা এর ডায়রী নং ৯০২ , তারিখ ১৭/০৪/২০০০ মোতাবেক] তিনি প্রধান প্রকৌশলীকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ , কলামিষ্ট এডভোকেট আনসার খাঁন এ প্রসঙ্গে বলেন , নবীগঞ্জের ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নে কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গন রোধকল্পে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য স্থানীয় ইউএনও থেকে শুরু করে প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের সময় দীঘলবাকবাসী স্মারক লিপি, আবেদন পত্র পেশ ও মন্ত্রী, এমপিদের সাথে যোগাযোগ করেও এই এতিহ্যবাহী এলাকাকে রক্ষা করার জন্য বাস্তবমুখী কোন পদক্ষেপ গৃহীত না হওয়া দুঃখজনক । তিনি এশিয়ার অন্যতম গ্যাসকূপ অধ্যুষিত ঐতিহ্যবাহী দীঘলবাক এলাকাকে প্রমত্তা কুশিয়ারা নদীর কাল থাবা ও ধ্বংসলীলা থেকে জরুরী ভিত্তিতে রক্ষা কল্পে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
দীঘলবাক উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আজিজুল হক শিবলী বলেন , দীঘলবাক এলাকায় কুশিয়ারা নদীর প্রমত্ততা রোধকল্পে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক কোন পদক্ষেপ গ্রহন করলে স্থানীয় জীবন যাত্রার মান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে , জনগন রক্ষা পাবে বসতবাড়ি ভাঙ্গনের কবল থেকে , বেকারত্বের অবসান ঘটবে ও সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। তিনি সরজমিনে তদন্ত পূর্বক দীঘলবাক এলাকায় নদী ভাঙ্গন সমস্যার সমাধান কল্পে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।