আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস ৪ লাখ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী

নিউইয়র্কে সাংবাদিক সম্মেলনে মাহবুব উদ্দিন খোকন

সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাধ্য করা হবে

খোকার মামলার রায় ক্রুটিপূর্ণ

সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। ছবি- এনা।
সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। ছবি- এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা: ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন এই নির্বাচন হচ্ছে সংবিধানিক ধারাবাহিতা রক্ষার নির্বাচন। আশা করি প্রধানমন্ত্রী তার সেই কথা রক্ষা করবেন এবং সকল দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আর যদি তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা না করেন তাহলে তাকে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে। ৫ জানুয়ারি ভোটার বিহীন উপহাসের নির্বাচন করে শেখ হাসিনা এখন ক্ষমতায়। বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার হচ্ছে অবৈধ সরকার। এই সরকারের ক্ষমতার উৎস হচ্ছে ৪ লাখ আইন- শৃঙ্খলা বাহিনী। গত ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় ( নিউইয়র্ক সময়) ঐক্যবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এ কথাগুলো বলেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থবিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আব্দুস সালামের পরিচালনায় সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী ও বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী বেবি নাজনীন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ স¤্রাট, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি গিয়াস আহমেদ, সাবেক সহ সভাপতি আলহজ্ব সোলায়মান ভূইয়া, সাবেক সহ সভাপতি শরাফত হোসেন বাবু, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তারেক পরিষদ আন্তর্জাতিক কমিটির চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বাদল, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, ফারুক হোসেন মজুমদার, সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসীম ভূইয়া, যুব দলের সভাপতি জাকির এইচ চৌধুরী, নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সভাপতি মাওলানা অতিউল্যাহ আতিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, ছাত্রদলের সভাপতি আতাউর রহমান আতা, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম জনি, বিএনপি নেতা আবুল কাশেম, বেলাল চৌধুরী, ভিপি জসিম, আবুল বাসার, জাসাসের সভাপতি গোলাম ফারুক শাহীন প্রমুখ।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের ৮০% মানুষ বিএনপির পক্ষে। ইচ্ছা করলে সরকার জরিপ চালাতে পারে। বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক দল। ৫ জানুয়ারির উপহাসের নির্বাচনের পর গৃহপালিত বিরোধী দল হচ্ছে জাতীয় পার্টি এবং বিরোধী দলের নেত্রী হচ্ছেন রওশন এরশাদ কিন্তু সরকার মামলা করে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার প্রায় ৬ বছরে দু:শাসনে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় ধ্বস নেমেছে। এখন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ২০%ও নেই। প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে তারা কীভাবে ক্ষমতায়। এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস জনগণ নয়, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস হচ্ছে ৪ লাখ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। আওয়ামী লীগ এখন বাংলাদেশের দুর্বল রাজনৈতিক দল। যে কারণে দয়ার উপর নির্ভর করে তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়। দয়া আদায়ের জন্যই ১৩ লাখ সরকারি কর্মকর্তা/ কর্মচারি বেতন বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এত দুর্বল যে, নির্বাচন দিলে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীতো দূরের কথা বিরোধী দলের নেত্রীও বানাতে পারবে না। তারা এখন পুলিশ এবং সেনা বাহিনী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংবিধান আছে, বিচার ব্যবস্থা আছে, দুদক আছে। এসবের আগে স্বাধীন শব্দটি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ, দুদকসহ সর্বত্র এখন ডাবল স্ট্যান্ডাড চলছে। দুদক মামলা করে ডাবল স্ট্যান্ডাডে। বিএনপির নেতাকর্মী হলে এক রকম, আর সরকারি দলের নেতাকর্মী হলে আরেক রকম। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ১/১১ এর মঈন- ফখরুদ্দিনের অবৈধ সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। দু:খজনক হলেও সত্যি যে শেখ হাসিনার মামলা কোর্টে ওঠার সাথে সাথে খারিজ হয়ে যায়। আর বেগম খালেদা জিয়ার মামলাগুলো এখনো চলছে। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম পচা গম আনলেও তাকে গ্রেফতার বা তার বিরুদ্ধে দুদক মামলা করে না। তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি নিয়ে কিছু বললেই তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ইয়ং হলে গুম করা হয়। অন্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা য়ো হয়। কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে গ্রেফতার করা হয়, হয়রানি করা হয়। তারেক রহমান লন্ডনে বক্তব্য দেন কিন্তু মামলা করা হয় দেশে। একটু সমালোচনাও তারা সহ্য করতে পারছেন না। তিনি বলেন, বিনা ভোটের এই অবৈধ সরকার দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কুইক রেন্টালের নামে দেশে অর্থ আওয়ামী লীগের নেতাদের দিয়ে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। কারণ কুইক রেন্টালের ব্যবসা দেয়া হয়েছে বিদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এগুলো দিয়েছেন। তিনিই ঐ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। তিনি বলেন, এই দেশে চরম সংকট চলছে। দেশ, দেশের মানুষকে বাঁচাতে এই সংকটে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধ যে সব মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার মামলা সম্পর্কে বলেন, তার বিরুদ্ধে যে রায় দেয়া হয়েছে তা ক্রুটিপূর্ণ। কারণ তার মামলায় মিথ্যা সব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি যে কোম্পানীর ১.৬৬% মালিক সেখানে দেখানো হয়েছে তিনি ৭৫% মালিক। তিনি আরো বলেন, আশা করি শেখ হাসিনা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা রক্ষা করবেন। তিনি বলেছিলেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হচ্ছে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন। সুতরাং তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচন দেবেন। আর তিনি যদি মধ্যবর্তী নির্বাচন না দেন তাহলে তাকে বাধ্য করা হবে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে। কিভাবে- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি জনমত সৃষ্টি করছে এবং জনগণকে নিয়েই আন্দোলনের মাধ্যমে এ দাবি আদায় করা হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবু উদ্দিন খোকন বলেন, লন্ডনে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের সাথে আমার দেখা হয়েছে। আশা করছি বেগম জিয়া আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে যাবেন।
আব্দুল সালাম বলেন, দেশ এখন গভীর সংকটে। এই সংকটে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। তিনি জঙ্গী প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগ নিজের ফাঁদেই নিজে আটকা পড়েছে।