বাংলাদেশের মিডিয়া এখন কঠিন সময় অতিক্রম করছে

নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে নঈম নিজাম

জোরে প্রেসকাব দখল নিন্দনীয় : অধিকাংশ সিনিয়র সাংবাদিক এখন দলালিতে ব্যস্ত

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন নঈম নিজাম। ছবি- এনা।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন নঈম নিজাম। ছবি- এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা: বাংলাদেশের মিডিয়া এখন এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। সাংবাদিকতায় এখন রোল মডেল একেবারেই পাওয়া যায় না। আমরা যখন সাংবাদিকতা শুরু করেছিলাম তখন সিনিয়র সাংবাদিকদের রোল মডেল হিসাবে পেয়েছি। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তারা আমাদের ¯েœহ করতেন, আমরাও শ্রদ্ধা করতাম। এখন হাতেগোনা কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক ছাড়া অধিকাংশ সিনিয়র সাংবাদিক দলীয় দালালিতে লিপ্ত। তারা এখন সর্বোচ্চ প্রেসমিনিষ্টার থেকে সর্বনি¤œ সরকারি প্লাট পাওয়ার প্রত্যাশা করেন। আগে প্রেসকাবে সাংবাদিকরা দলমতের উর্ধ্বে উঠে তাদের দাবি- দাওয়া এবং পেশার জন্য আন্দোলন- সংগ্রাম করেছেন- এখন প্রেসকাবে দলীয় স্লোগান দেয়া হয়। দলীয় স্লোগান দিয়ে প্রেসকাব দখল করা হয়। এটা নিন্দনীয়।
গত ৭ অক্টোবর (নিউইয়র্ক সময়) সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক নঈম নিজাম এ কথাগুলো বলেন।
ঢাকা রিপোর্টস ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক মনোয়ারুল ইসলামের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম ঠিকানার সম্পাদক লাবলু আনসার, প্রবীণ সাংবাদিক মনজুর আহমদ, নিনি ওয়াহিদ, এখন সময়ের সম্পাদক কাজী শামসুল হক, দৈনিক প্রথম আলোর যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি হাসান ফেরদৌস, ঠিকানার বার্তা সম্পাদক মিজানুর রহমান, দৈনিক ইত্তেফাক ও সাপ্তাহিক বাঙালির বিশেষ প্রতিনিধি শহীদুল ইসলাম, নয়াদিগন্তের বিশেষ প্রতিনিধি শওকত ওসমান রুচি, টাইম টিভির পরিচালক আবু তাহের, বর্ণমালা সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, এনটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি দর্পণ কবীর, কানু দত্ত, প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, ইটিভির যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি ইমরান আনসারী, এনটিভির যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি আবিদুর রহিম, টিভিএন ২৪’র আশরাফুল হাসান বুলবুল, দৈনিক মানব জামিনের বিশেষ প্রতিনিধি আব্দুল হাই স্বপন, সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকি, ভোরের কাগজের প্রতিনিধি শামীম আহমেদ, আইঅন বাংলাদেশের পরিচালক রিমন ইসলাম, সাংবাদিক সাহাবুদ্দিন সাগর, আরটিভির শাহাদত হোসেন সবুজ, সাংবাদিক পিনাকি তালুকদার, মাহফুজ আদনান, মাহে আলম, আনোয়ার হোসেন, কাওসার মুমিন প্রমুখ।
সাংবাদিক নঈম নিজাম আয়োজক সাংবাদিক মনোয়ারুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজকে আমি আমার অনেক পুরানো সহকর্মীকে পেয়েছি। তাদের পেয়ে আমার কাছে ভাল লাগছে। তিনি উপস্থিত বিভিন্ন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমি ছাত্রলীগ করেছি, যুবলীগ করেছি, বলতে গেলে সব সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকেছি। রাজনৈতিক নঈম নিজাম ও সাংবাদিক নঈম নিজাম দুটো আলাদা, দুটো কখনো এক করিনি। অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন বাংলাদেশ প্রতিদিন কীভাবে শীর্ষে এলো। আমি তাদের উত্তরে বলেছি, আমি একজন পেশাদার সাংবাদিক/ সম্পাদক। আমি যখন সম্পদকের দায়িত্বে তখন আমি পেশাকে গুরুত্ব দিই দলকে নয়। আমার প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতার মূল্যায়ণ করা হয়, দলের নয়। যে কারণে আমার পত্রিকা এখন বাংলাদেশে শীর্ষে। দুই বছর আগে আমরা প্রথম আলোকে ছাড়িয়ে গেছি।
তিনি বলেন, আমি যখন সাংবাদিকতা শুরু করি তখন আমাকে সংসদের এসাইনমেন্ট দেয়া হয়। আগে একজন সাংবাদিকই একটি বিট করতেন, এখন একই বিটে অনেক সাংবাদিক। আমাদের সময় আমরা সিনিয়র সাংবাদিকদের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি, তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তারা আমাদের ¯েœহ করতেন এবং আমরাও শ্রদ্ধা করতাম। বাংলাদেশের মিডিয়া এখন কঠিন সময় অতিক্রম করছে। কারণ বাংলাদেশের অধিকাংশ সিনিয়র সাংবাদিক এখন দলীয় দালালিতে লিপ্ত। তারা দালালি করেন প্রেস মিনিষ্টার হবার জন্য, নিউইয়র্ক, লন্ডন, ভারতসহ অন্যান্য দেশে দায়িত্ব পাবার জন্য। তাদের সর্বোচ্চ প্রত্যাশা হচ্ছে প্রেসমিনিষ্টার, আর সর্বনি¤œ প্রত্যাশা হচ্ছে বাড়ি করার জন্য সরকারি প্লট। অন্যদিকে জুনিয়র সাংবাদিকদের মধ্যেও অসুস্থ প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। তাদের মধ্যে মেধার, জ্ঞানের প্রতিযোগিতা নেই, আছে জাহির করার প্রতিযোগিতা। আবার অনেকের শেখার মনোভাবও নেই। সাংবাদিক বাড়ছে কিন্তু সাংবাদিকতার গুণগত মান বাড়ছে না। কারণ কোথাও শেখার কোন উন্নত প্রতিষ্ঠান নেই। অনুবাদ করার লোক পাওয়া যায় না।
সাংবাদিক নঈম নিজাম আরো বলেন, আমাদের প্রেসকাব ছিলো ঐক্যের এবং গর্বের প্রতীক। এখন প্রেসকাবের সেই পরিবেশ নেই। প্রেসকøাব এখন জোর করে দখল করা হয়। এটা নিন্দনীয়। তিনি বলেন, প্রেসকাবে আগে সাংবাদিকরা আন্দোলন এবং সংগ্রাম করতেন নিজের পেশার জন্য। এখন প্রেসকাবে সাংবাদিকরা আন্দোলন করেন দলের জন্য। দলীয় স্লোগানে এখন প্রেসকাব তার ভাবমূর্তি হারিয়েছে, লজ্জা লাগে। প্রেসকাবের এই অবস্থা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন হয়েছে, এখনো হচ্ছে। তবে এবার বলতে গেলে জোর করেই দখল করা হয়েছে প্রেসকাব। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, দলবাজির কারণে প্রেসকাবে প্রকৃত সাংবাদিকরা সদস্য হতে পারেন না, অন্যদিকে ফকিরাপলি পত্রিকার সাংবাদিকরা প্রেসকাবের সদস্য। তিনি বলেন, এর থেকেই সহসা উত্তরণ হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। আগামী প্রজন্মই হয়ত এই অচলাবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে।