রানা দাশগুপ্তের চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দেয়া এলজিআরডি মন্ত্রী’র ভিডিও অনলাইনে

8706সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌসুলি এডভোকেট রানা দাশগুপ্তের চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সম্প্রতি ফরিদপুরে এক জনসভায় দেয়া মন্ত্রীর হুমকির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়- মন্ত্রী নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সংখ্যালঘুর সম্পত্তি দখলের অভিযোগকে রানা দাশগুপ্তের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করছেন। রানা দাশগুপ্ত পাশ্ববর্তী কোন রাষ্ট্রের এজেন্ট কিনা এমন ইঙ্গিতও করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী পরিবারের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকা এই মন্ত্রী বলেন, “আপনি যদি কোন রাষ্ট্রের এজেন্ট হয়ে থাকেন, অন্য কোন এজন্ডা নিয়ে থাকেন দয়া করে চট্টগ্রাম নিয়ে থাকেন, ফরিদপুরের দিকে চোখ দিলে আপনার চোখ তুলে নিব”।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেককেই ভিডিওটি শেয়ার দিতে দেখা যায়। সাংবাদিক প্রবীর সিকদার ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন- “দেশের খ্যাতিমান আইনজীবী রানা দাশগুপ্তকে এবার চোখ উপড়ে ফেলার হুমকি দিলেন দেশের প্রভাবশালী একজন মন্ত্রী! অবশ্য ওই মন্ত্রী তো সেটা পারেনই!”
ভিডিও শেয়ার করে ফেসবুকে পোষ্টে ব্লগার রানা মেহের লিখেছেন- “আমাদের মাননীয় এলজিআরডি মন্ত্রী বলছেন রানা দাসগুপ্ত একজন ভারতের দালাল এবং উনার চোখ তুলে নেয়া হবে। রানা দাসের অপরাধ গুরুতর। উনি আইসিটির প্রসিকিউটর। সম্প্রতি মোশাররফ সাহেবের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের হিন্দুদের জমি দখলের তদন্ত ও অভিযোগ করেছেন। এরকম মারাত্মক অভিযোগের পর চোখ তুলে নেয়ার অভিযোগতো কিছুই না। এখনো যে নেননি এইতো অনেক।”
সত্যজিত চৌধুরী নামে একজন লিখেছেন, “ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্তকে ‘বিদেশী এজেন্ট’ বললেন এবং তার ‘চোখ তুলে’ নেবার হুমকি দিলেন। এরপরও কি তার মন্ত্রীত্ব থাকা উচিত?”
ভিডিওতে মন্ত্রীকে আরও বলতে দেখা যায়, “একটি সম্প্রদায়কে আরেকটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে”। ফরিদপুরে আবহমানকাল থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করছে জানিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে উঠা বাড়ি দখলের অভিযোগ বানোয়াট বলে উল্লেখ্য করেন।
সম্প্রতি খন্দকার মোশারফফের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের অরুণ গুহ মজুমদারের বাড়ি জোর করে অল্প দামে কেনার অভিযোগ করে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ। বাড়ি বিক্রির পর অরুণ গুহকে ফরিদপুরে পাওয়া না যাওয়ায় ফেসবুকে অনেকের সঙ্গে সাংবাদিক প্রবীর সিকদার সোচ্চার হোন।
নিজের জীবনের উপর কোন হামলা আসলে তার জন্য এলজিআরডি মন্ত্রী, রাজাকার নুলা মুসা এবং যুদ্ধাপরাধী আবুল কালাম আজাদ দায়ী থাকবেন উল্লেখ্ করে স্ট্যাটাস দেয়ার পরই প্রবীর সিকদারকে গোয়েন্দা পুলিশ তাঁর অফিস থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর মন্ত্রীর মানহানি হয়েছে উল্লেখ্য করে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেন স্থানীয় এক আইনজীবি। ফরিদপুর আদালতে হাজির করে এক পা হারানো প্রবীর সিকদারকে রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেয়া হলে দেশব্যাপী তুমুল প্রতিবাদ হয়। এর একদিন পরই তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়।
এদিকে অরুণ গুহ মজুমদার ভারত থেকে দেশে ফিরে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে অস্বীকার করে নায্য দামে তার কাছে বাড়ি বিক্রির কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তবে কত টাকায় বাড়ি বিক্রি করেছেন এমন প্রশ্নের জবাব ‘জানেন না’ বলেন তিনি। প্রবীর সিকদারসহ অনেকেই অভিযোগ করেন অরুণ গুহকে হুমকি দিয়ে মিথ্যা বলিয়েছেন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ।
এই নিয়ে কয়েকদিন আগে এলজিআরডি মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন তিনি ফকিরের পুত্র নন যে সংখ্যালঘুর বাড়ি দখল করবেন।