বর্ষীয়ান রাজনীতিবিধ সুফিয়ান চৌধুরীর মৃত্যু : সিলেটে শোকের ছায়া : আজ জানাযা

Sufiyan chowdhury Deathসুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিধ আবদুজ জহির চৌধুরী ইন্তেকাল করেছন। বুধবার বিকেল ৪ ঘটিকার সময় নিজ বাসাতে শেষ নিস্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিধ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি বেশ কয়েক মাস থেকে খাদ্যনালীর ক্যান্সারে ভূগছিলেন। নিঃসন্তান সুফিয়ান চৌধুরী মৃত্যুকালে স্ত্রী ও অসংখ্য আত্মীয় স্বজন, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সুফিয়ানের মৃত্যুতে সিলেটে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেছেন। জহির চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে বুধবার বিকেল থেকে দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ভিড় করেন প্রয়াতের বাসায়। জেলা পরিষদের এই প্রশাসকের মৃত্যুতে আজ পূর্ব নির্ধারিত বিভাগীয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা ও আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার বাদ জোহর সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ প্রাঙ্গনে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। জানাযা শেষে পাশ্ববর্তী করবস্থানে তাকে দাফন করা হবে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী।
এছাড়া সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সকাল ১১টায় আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ানের মরদেহ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আনা হবে বলে জানান তিনি।
ন্যাপ নেতা থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি : আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান ১৯৩৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি গোলাপগঞ্জের রণকেলী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তান ন্যাপে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালে সুফিয়ান আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
১৯৮০ সালে জেলা সহ সভাপতি ও ২০১১ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব লাভ করেন। ২০১২ সালে তিনি সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে মনোনিত হন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সুফিয়ান ছিলেন সৎ ও নিলোর্ভ। গত বছর খানেক রাজনীতি থেকে দুরে ছিলেন। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আর মাঠে দেখা যায়নি।
সুফিয়ানের বাড়িতে শোকার্ত মানুষের ঢল: প্রিয় নেতার মৃত্যুর খবর শুনে তাঁর বাসায় ভিড় করেন রাজনৈতিক সহকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। মৃত্যুর খবর শুনে তার বাসায় ছুটে যান নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, সিলেটের উপ মহা পুলিশ পরিদর্শক, পুলিশ সুপার, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অনেকে।
শোক : আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, প্রবীণ রজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাংসদ কেয়া চৌধুরী, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন, জেলা ও মহানগর বিএনপি, সম্মিলিত নাট্য পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ।
অর্থমন্ত্রীর শোক : শোকবার্তায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি গভীর শোক জানিয়ে বলেন, আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ানের মত সৎ, বিনয়ী ও সরল চরিত্রের মানুষ এ যুগে বিরল। সিলেটের প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। তার মৃত্যুতে সিলেটে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো তা পূরণ হবার নয়।
মন্ত্রী তার বিদ্রেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
শিক্ষামন্ত্রীর শোক : শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তার শোক বার্তায় বলেন, আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান ছিলেন আজীবন সংগ্রামী এক জননেতা। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন সিলেট আওয়ামীলীগ পরিবারের অভিভাবক- পাশাপাশি সিলেট এর আপমর জনতার কাছে পরম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন- ২০০৭ সালের ১/১১-এর সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কারাগারে ছিলেন তখন আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান সিলেট-এর আওয়ামীলীগকে সংগঠিত করে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন তিনি। কোন লোভ, প্রলোভন তাকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্ছুত করতে পারেননি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে তিনি কাজ করে গেছেন। এজন্য তাঁকে চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান-কে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের অভিভাবক উল্লেখ করে বলেন- আমার চলার পথে সুফিয়ান ভাই সমর্থন, পরামর্শ ও সাহস যুগিয়েছেন। তা আমি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ রাখবো। তাঁর মৃত্যুতে আমি এবং সিলেটবাসী হারিয়েছি আমাদের অকৃত্রিম হৃদয়ের অভিভাবককে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে- আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে তাঁর মতো নেতার বড় বেশি প্রয়োজন ছিল। তাঁর অভাব কোনদিন পূরণ হবার নয়।