বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র খবর জানেন না সিলেটের ছাত্রলীগ নেতারা!

translate_76766সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র খবর জানেন না সিলেটের আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী। যারা জানেন তারাও বলেছেন পড়া হয়নি-অর্ধেক পড়া হয়েছে, পড়বো। তবে, কেউ কেউ বলেছেন একাধিকবার পড়া হয়েছে।
যারা জানেই না তারা বলেছেন- প্রতিদিন-ই টেলিভিশনে বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠান হচ্ছে। পত্রপত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা হচ্ছে। তারা এ প্রতিবেদককে বলেন দরকার হলে আপনি ‘নেট’এ সার্চ দিয়ে যে কোন তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। গতকাল আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের প্রায় অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মীর সাথে কথা হয়। তবে, অনেকেই বইটির খবরই জানে না।
বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী আমাদের সম্পদ। এ লেখায় বঙ্গবন্ধুর বেড়ে ওঠা, পরিবারের কথা, ছাত্র আন্দোলন, বিশাল রাজনৈতিক জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা প্রকাশিত হয়েছে।
এ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে তিনি নীতি-আদর্শ ও নেতৃত্বের স্বরূপ তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন চমকপ্রদ সরলতায়। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, জেল-জুলুম, কারাবরণ সবকিছু প্রকাশ করেছেন অত্যন্ত সাবলীল ভাষায়।
২০০৪ সালেরর শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা আবিস্কার করেন।
বইয়ের ভূমিকায় শেখ হাসিনা লিখেছেন – খাতাগুলো হাতে পেয়ে আমিতো প্রায় বাকরুদ্ধ। এই হাতের লেখা আমার অতি চেনা। ছোটবোন শেখ রেহানাকে ডাকলাম। দুই বোন চোখের পানিতে ভাসলাম। হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে পিতার স্পর্শ অনুভব করার চেষ্টা করলাম। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি তারপর এ প্রাপ্তি । মনে হল যেন পিতার আশীর্বাদের পরশ পাচ্ছি। আমার যে এখনো দেশের মানুষের জন্য-সেই মানুষ, যারা আমার পিতার ভাষায় ‘দুঃখী মানুষ; সেই দুঃখী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজ বাকি, তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ বাকি, সেই বার্তাই যেন আমাকে পৌছে দিচ্ছেন। যখন খাতাগুলোর পাতা উল্টাচ্ছিলাম আর হাতের লেখাগুলো ছুঁয়ে যাচ্ছিলাম আমার কেবলই মনে হচ্ছিল আব্বা আমাকে যেন বলছেন, ভয় নেই মা, আমি আছি, তুই এগিয়ে যা, সাহস রাখ। আমার মনে হচ্ছিল আল্লাহর তরফ থেকে ঐশ্বরিক অভয় বাণী এসে পৌছাল আমার কাছে। এত দুঃখ কষ্ট-বেদনার মাঝে যেন দিশা পেলাম।
এই লেখাগুলো বারবার পড়লেও যেন শেষ হয় না। আবার পড়তে ইচ্ছা হয়। দেশের জন্য, মানুষের জন্য, একজন মানুষ কিভাবে কতখানি ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন, জীবনের ঝুকি নিতে পারেন, জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করতে পারেন তা জানা যায়। জীবনের সুখ স্বস্থি আরাম আয়েশ, মোহ, ধন দৌলত সবকিছু ত্যাগ করার এক মহান ব্যাক্তিত্বকে খুঁজে পাওয়া যায়।
এ বইতে বঙ্গবন্ধুর বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস সচেতনতা খুবই তীক্ষ্ণ ও সুগভীর। নানা কথা বলতে গিয়ে অসম্প্রদায়িক বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘…আমার কাছে তখন হিন্দু-মুসলমান বলে কোন জিনিস ছিল না’, অসাম্প্রদায়িক চরিত্র ও নেতৃত্বের কারণে বঙ্গবন্ধু দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ও নেতাজী সুভাষ বসুর ভক্ত হয়েছিলেন। যে কারণে ভারত বিভাগের পর অন্যান্য অনেকের মতো সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরে না এসে, মহাত্মা গান্ধী ও সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে কলকাতার আশপাশে তাঁদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রাখার প্রচেষ্টায় গৃহীত শান্তি মিশনে যোগ দেন তিনি।
বইটি পাঠে এমন এক নেতাকে খুঁজে পাওয়া যাবে যিনি অকপটে বর্ণনা করেছেন টাকার অভাব দেখা দিলেই বাবা বা স্ত্রীর থেকে টাকা নিয়ে জনতার সেবায় দাঁড়ানোর প্রত্যয়ের কথা, স্কুল জীবনে ছাত্রাবস্থা থেকে শুরু করে জীবনের অধিকাংশ সময় মানুষের অধিকার আর ন্যায্যতার জন্য জেলে কাটানোর কথা, পিতা-পুত্রের নিবিড় সম্পর্কের ফুটবল টিম গঠনের কথা, রাজনীতির ক্লান্তিকর সৈনিক মৌমাছি হিসেবে গোপালগঞ্জ-চুঁচূড়া থেকে কোলকাতা, দিল্লী, লাহোর, পাঞ্জাব, করাচী, হায়দ্রাবাদ, পাটনা, মারী, রাওয়ালপিন্ডি, হাওড়া, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, নোয়াখালী, পাবনা, রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, নাটোর, নওগাঁ, নারায়নগঞ্জ, রাজশাহী, বরিশাল কমিটি, উপ-কমিটি আর নানাবিধ রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অবিরাম ছুটে চলার গল্পকথা। আর এ সফরে তিনি ভ্রমন করতেন নিম্নশ্রেণির ট্রেন, স্টিমার, নৌকা, হোটেল ও বিছানা-বেডিং সহ। নিজেই বহন করতেন তার নিজ জিনিসপত্র কুলির মত। অর্থের যোগানদাতা ছিলেন পিতা শেখ লুৎফর রহমান, স্ত্রী রেণু, আর রাজনীতির গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে যোগদানের কারণে তাকে বহিস্কার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব থেকে, যদিও কর্মচারীরা মুচলেকা দিয়ে ঠিকই যোগদান করেন তাদের চাকুরীতে। দিল্লী থেকে কোলকাতা ফেরার ৩-জনের ট্রেন ভাড়া না থাকাতে, টিকেনহীন বন্ধু নুরুদ্দিনের জন্য তারা ৩-জনেই ওঠেন ‘চাকরদের গাড়ি’ বা ‘সার্ভেন্ট কারে’, যাতে বন্ধুকে নিয়ে আসতে পারেন কোলকাতা পর্যন্ত। মানুষ ও আদর্শের প্রতি তাঁর সততা আজকের ভোগবাদী নেতারা শিখতে পারেন তাঁর জীবনাচার থেকে।
স্কুল জীবন থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত জীবনের অধিকাংশ সময় জেলে কাটানো নেতাকে বাড়ি গেলে তার ছোট ছেলে কামাল বাবা হিসেবে চিনতে পারতো না, দূরে দূরে থাকতো সে ‘অপরিচিত ঐ পুরুষটি’ থেকে। কিন্তু বোন হাসিনাকে ঠিকই বলতো,“হাচু আপা হাচু আপা তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি”, এক মহান নেতার এ হৃদয়ভেদী বাক্য মননশীল পাঠককে আপ্লুত আর অশ্রুাবৃত্ত না করে পারবে না! ।
বাঙালিরা অনেকেই জানতো না কতবড় পাপ তারা করেছে এ নেতাকে হত্যা করে! এও জানতো না, এ জাতির মুক্তির সংগ্রামে প্রতিনিয়ত অর্থ দিয়ে পরোক্ষে কিভাবে সহায়ত করতেন স্ত্রী ‘রেণু’ আর এক মধ্যবিত্ত পিতা। যেমন জানতো না গ্রীসিয়রা, সক্রেটিসকে কেন হত্যা করছে তারা! জানতে পারবে বাঙালিরা আর জ্বলতে থাকবে নিজের অন্তর্দহনে প্রতিনিয়ত যখন শেষ করবে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’।
এ জন্য বাঙালি হিসেবে সবার বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’,পড়তে হবে। ছাত্রলীগ করতে হলে এ বইটি থেকে নিতে হবে প্রাথমিক পাঠ।
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাহাত তরফদার বলেন- বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র খবর না জানা এক ধরনের অপরাধ। এ বইটি পড়ে ছাত্রলীগে যোগদানের নিয়ম করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন খান বলেন- শুধু ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরই নয়, বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের সবাইকে এ বইটি পড়া উচিত।
সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন- বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী আদর্শিক পথচলার দিক নির্দেশনা। বঙ্গবন্ধু যে আজীবন মানুষের অীধকার আদায়ে সংগ্রাম করেছেন, জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছেন তার চিত্র পাওয়া যায়। পুরো বইটি পড়লে কেউ অপকর্ম কিংবা আদর্শচ্যুত হবেনা। তিনি আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সিলেটবাসীকে এ মহান নেতার আত্মজীবনী পড়ার অনুরোধ জানান।