অভিজিৎ হত্যায় অংশ নেওয়া ৭ জন চিহ্নিত

avijeetসুরমা টাইমস ডেস্কঃ মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় হত্যার অপারেশনে অংশ নেওয়া সাতজনকে চিহ্নিত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা সবাই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য এবং আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের মূল অপারেশনে অংশ নেওয়া সাতজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় আমরা পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা শুধু তাদের ‘নিকনেম’ জানতে পেরেছি। তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় বের করার চেষ্টা চলছে।’’
মনিরুল বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া সাতজনই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তারা সবাই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। তাদের মধ্যে একজন মেডিকেলের ছাত্র।’
২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসির সামনে দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে অভিজিৎ রায় (৩৮) ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে (৩০)। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টা ২০ মিনিটে অভিজিৎ মারা যান। গুরুতর আহত বন্যাকে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হয়। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন।
পুলিশ ঘটনাস্থলের পাশ থেকে রক্তমাখা দু’টি চাপাতি ও একটি স্কুলব্যাগ উদ্ধার করে। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন শাহবাগ থানায় অজ্ঞাতসংখ্যক আসামি করে মামলা করেন অভিজিতের বাবা শিক্ষাবিদ ড. অজয় রায়।
ওই ঘটনা তদন্তে মাঠে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় শাফিউর রহমান ফারাবী নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে হত্যাকাণ্ডে তার সরাসরি জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পায়নি পুলিশ। সে বিভিন্ন সময় অভিজিৎকে অনলাইনে হুমকি-ধমকি দিয়েছে বলে প্রমাণিত।
মামলার অধিকতর তদন্তে ৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) বাংলাদেশে আসে এবং ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করে। তবে শেষ পর্যন্ত আশানুরূপ কিছু আবিষ্কার করতে পারেনি এফবিআই।
৩ মে অভিজিৎ হত্যার দায় স্বীকার করে আন্তর্জাতিক ইসলামী জিহাদী সংগঠন আল কায়েদা।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন অভিজিতের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. অজয় রায়।
তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ওরা (ডিবি পুলিশ) একেকবার একেকটা, উল্টা-পাল্টা কথা বলে। কখনও বলে, পজেটিভলি দু’জনকে চিহ্নিত করেছি। এখন আবার বলছে সাতজনের কথা।’
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না, তারা ওই হত্যাটা নিয়ে সিরিয়াস। লোক দেখানোর জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলছে। এগুলোতে আমি আর গুরুত্ব দেই না।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরাধীরা যেভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে, অভিজিতের হত্যাকারীও পার পেয়ে যাবে। এটা আমরা ধারণা।’
তিনি বলেন, ‘তারা (পুলিশ) অপরাধীদের চিহ্নিত করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না এবং তাদের ইচ্ছাও নেই।’
অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘তদন্তে আমি সন্তুষ্ট নই। আর এতে আমি অবাকও নই, কারণ এটাই হওয়ার কথা ছিল।’
এ বিষয়ে ডিএমপির মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকাতে অবস্থানকালীন তার সঙ্গে আমরা একাধিকবার কথা বলেছি। এফবিআইও কথা বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরও কোনো বিষয়ে জানার প্রয়োজন থাকলে আমরা এফবিআইয়ের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়গুলো জেনেছি। এ ছাড়া যদি কিছু দেখানোর থাকে সেটিও এফবিআইয়ের মাধ্যমে দেখেছি। আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।’