অপহরণের অভিযোগ ‘জঘন্য’, ‘স্ব-ইচ্ছায়’ আইএস-এ যোগ দেয় বাংলাদেশী পরিবার

সেই পরিবারের সদস্যরা : (বাদিক থেকে দাঁড়ানো) রাজিয়া খানম, মো: তৌফিক হুসেন, মো: সালেহ হুসেন, রুশনারা বেগম, শেইদা খানম। (বাদিক থেকে বসা)
সেই পরিবারের সদস্যরা : (বাদিক থেকে দাঁড়ানো) রাজিয়া খানম, মো: তৌফিক হুসেন, মো: সালেহ হুসেন, রুশনারা বেগম, শেইদা খানম। (বাদিক থেকে বসা)

সুরমা টাইমস ডেস্কঃ যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাঙ্গালি পরিবারটি স্বইচ্ছায় ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এ যোগ দিয়েছে। তাদের অপহরণের সংবাদ সত্য নয়। এমনকি আইএস হেফাজতে ”আগের থেকে অনেক বেশি নিরাপদ’। বাঙ্গালি ওই পরিবারের বরাত দিয়ে এক বিবৃতিতে এমনটি দাবি করেছে ইসলামিক স্টেট। (খবর বিবিসি)
ইংল্যান্ডের লুটন শহরের বাসিন্দা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ১২জন সদস্যের এই পরিবারটি গত দেড় মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছে।
আইএস-এর সঙ্গে লড়ছে এমন একজন ব্রিটিশ বিবিসির হাতে এই বিবৃতিটি তুলে দেয়। বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়েছে এই পরিবারটিকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে আইএস-এ যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে এধরনের কথাবার্তা ”জঘন্য”।
এদিকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা প্রবাসী এই পরিবারটি বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক থেকে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে বল বৃটিশ পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন স্বজনরা। ১২ সদস্যের পরিবারের মেয়ে রাজিয়াই পুরো পরিবারকে এই পথে নিয়ে গেছে বলে ধারনা ফেঞ্চুগঞ্জে বসবাসরত এই পরিবারের সদস্য আব্দুল লতিফের।
তিনি বলেন, নিখোজ হওয়ার বেশ কয়দিন পরও বাংলাদেশে ফোন করেছিল তারা। তবে কোথা থেকে ফোন করেছে তা জানায় নি।
আইএসে যোগ দেওয়া পরিবারটির প্রধান আব্দুল মান্নানের ভাই আব্দুল লতিফ জানান, বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় পরিবারের মেয়ে রাজিয়া বিদেশে যে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেছে তার তথ্য দেয়া হয়েছে বৃটিশ পুলিশকে। তার পরই বৃটিশ পুলিশ অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে যে তারা সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে।
তাদের যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনতে বৃটিশ পুলিশের সহায়তা চাইলেও , আব্দুল লতিফ জানান, তারা নিজেরা ফিরে না আসলে তাদের কিছুই করার নেই বলে সাফ জানিয়েছে বৃটিশ পুলিশ।
এদিকে বিবিসিতে প্রকাশিত আইএস’র বিবৃতিতে এতে বলা হয়েছে এই পরিবারটি এমন দেশে পৌঁছেছে যে দেশ ”দুর্নীতি ও দমনপীড়ন মুক্ত” এবং কোনো একক ব্যক্তির ”নির্দেশে” নয় বরং ”ইসলামের খলিফাদের” নির্দেশে তারা সেখানে গেছে।
বিবৃতিতে পরিবারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে ”আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে যারা উদ্বিগ্ন তাদের জানাচ্ছি আপনারা শঙ্কামুক্ত হন। আমরা এখানে আগের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করছি।”
”সব মুসলমানদের প্রতি আমাদের আহ্বান- খলিফার নির্দেশ মেনে আপনার নিজের দেশে চলে আসুন। এই জীবনে এবং পরকালের জন্য আপনি যেখানে সম্মান আদায় করতে পারবেন সেখানে দ্রুত পৌঁছে যান।”
এর আগে ইংল্যান্ডের বেডফোর্ডশায়ারের পুলিশ বলেছিল, এই পরিবারটি সিরিয়ায় গিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এই তথ্য সম্পর্কে তারা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি।
এই বিবৃতি সঠিক কীনা তা নিরপেক্ষভাবে বিবিসি যাচাই করতে পারে নি। এই বিবৃতিতে মুহাম্মদ আবদুল মান্নানের পরিবারের দুটি ছবিও দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ বলছে ১২ সদস্যের এই পরিবারটি গত এপ্রিলের দশ তারিখে বাংলাদেশে বেড়াতে যায়। সেখান থেকে তারা তুরস্ক যায় ১১ই মে। তুরস্ক হয়ে তিনদিন পর তাদের ইংল্যান্ডে ফিরে আসার কথা থাকলেও তুরস্কে নামার পর থেকে পরিবারটির আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। মান্নানের আগের স্ত্রীর দুই ছেলেও লুটনে থাকেন, এবং তারাই পরিবারটির নিখোঁজ হওয়ার খবর পুলিশকে জানায়।
বাংলাদেশে রওনা হওয়ার আগের দিন এই পরিবারের লুটনের বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছিল সন্ত্রাসদমন আইনের আওতায়। এই পরিবারের ২১ বছর বয়সী রাজিয়া খানুম নিষিদ্ধ ইসলামী গোষ্ঠী ‘আল-মোহাজিরুনের’ সদস্য বলে মনে করা হয়।