ছোটগল্প চিংচিং – মো: শামীম মিয়া

আজ রাতে ঘুমাতে পারছেনা মুরগি গুলো। কারণ, বৃষ্টির মত কুয়াশা পড়ছে তাদের ঘরের চালে। রাতে মা মুরগি চিন্তায়ই পরে যায়, বাচ্চা গুলো ভয়ে কাঁপছে। তারা মাকে শুধু প্রশ্ন করছে, মা এমন শব্দ হচ্ছে কেন,ঘরের চালে ? মা বাচ্চাদের বললো, বৃষ্টি হচ্ছে, তাই এমন শব্দ হচ্ছে। মা মুরগি বাচ্চাদের বললেন, সাবধান এই সুযোগে শিয়াল আমাদের উপড় টোপ নিয়ে থাকতে পারে, আমাদেরকে খাওয়ার জন্য। সবার ছোট্ট মুরগির বাচ্চা চিংচিং চিচি করে বললো, মা শিয়াল আবার কে ? মা মুরগি বললো, শিয়াল আমাদের সবচাইতে বড় শত্র“ ও দেখতে ঠিক কুকুরের মত। ওকে দেখলে সবাই লুকিয়ে যাবে ওর সমনে যেন যেওনা। ও তেমাদের দেখলেই খেয়ে ফেলবে। এই কথা শুনে চিংচিং সহ বাচ্চা গুলো ভয়ে মার বুকে গেলো এবং ঘুমিয়ে পড়লো।
পরেরদিন সকালে মা মুরগি দরজায় দ্বাড়িয়ে সবাইকে বললো, তোমরা পরে নামো, আমি দেখে নেই বাহিরে বৃষ্টির পানি জমে আছে কি না ? মা মুরগি এসে দেখলো সব ঠিক আছে। কারণ রাতে বৃষ্টি হয়নি, গাছের ডালে জমে থাকা কুয়াশা গুলো চালে পরেছিলো রাতে। মা মুরগি আবারো বললো সব ঠিক আছে, তোমরা সবাই বাহিরে এসো। হৈ চৈ করে বাচ্চা গুলো বাহিরে এলো। এবং ছুটছে সবাই মা মুরগির পিছে পিছে। মাকে চিংচিং প্রশ্ন করলো মা আমরা কোথায় যাচ্ছি ? মা মুরগি বললো, আমদির পাড়া বাঙ্গালী নদীর পারে,খাদ্য সংগ্রহ করতে যাচ্ছি। চিংচিং খুশিই হলো। কারন, মার মুখে সে শুধু শুনেছে নদীর কথা, আজই প্রথম দেখবে।
মা মুরগির সাথে হাটতে পারছেনা চিংচিং। মা মুরগি আগে আগে যাচ্ছে। হঠাৎ চিংচিং এর সামনে এসে লাফাতে থাকে এক ঘাসফড়িং। চিংচিং ফড়িংটাকে ধরতে চেষ্টা করে। তবে ধরতে পারেনা। ফড়িং এর মধ্যেই, উড়ে যায় বনের মধ্যে, তার পিছে পিছে দৌড়াতে থাকে চিংচিং। মার মুরগি পেছনে আর তাকায় না। চিংচিং অনেক দুর এসেছে, মা মুরগিকে ছেড়ে। আর এগোতে পারছে না। কারণ সামানে বাধা হয়ে দাড়িয়ে আছে অসংখ্য মরা গাছের পাতা। চিংচিং একটু এগোতে চাইলো অমনী একটা বড় শুকনো পাতা এসে চিংচিং এর গায়ে পরে। চিংচিং আর নড়াচড়া করতে পারেনা। চিচি করে চিংচিং কাদচ্ছে । তখন ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিলো শিয়াল, সে থমকে দ্বাড়ালো এবং মনে মনে বললো, মুরগির জন্য এখনী মানুষের তাড়া খেয়ে আসলাম আর মুরগি বনে কাদচ্ছে। একটু এগোতেই শিয়াল দেখলো বাচ্চা মুরগিটা আটকা পরে আছে শুকনো পাতাটার নিচে। শিয়াল চিংচিংকে বাঁচিয়ে দেয় এবং চিংচিংকে শিয়ালের বাসায় নিয়ে যায়।চিংচিং কাদছে আর বলছে আমি আমার মায়ের কাছে যাবো। শিয়াল বললো, চুপ করো কান্না থামাও। তোমার মায়ের কাছে তোমাকে পৌছে দিবো। চিংচিং চিচি করে তবুও কাদছে। রাগি স্বরে বললো, আর একবার যদি তুমি কাঁদো তাহলে তোমায় আমি খেয়ে ফেলবো। চিংচিং কান্না থামিয়ে বললো, কী শিয়াল ? শিয়াল বললো হ্যাঁ আমি শিয়াল। চিংচিং বললো, আমাকে তুমি খেয়ে ফেলবে ? শিয়াল বললো, না আমি তোমাকে তোমার মায়ের কাছে দিয়ে আসবো। তুমি এবার বলো তোমার মা কোথায় ? চিংচিং বললো, মা তো নদর ধারে খাদ্য সংগ্রহ করতে গেছে। এই কথা শুনে শিয়াল দরজা বন্ধ কে চিংচিংকে বললো, তুমি এখানে থাকো আমি তোমার মাকে ডেকে আনি। চিংচিং বললো, যাও তবে তাড়াতাড়ি এসো। শিয়াল বললো, ঠিক আছে। শিয়াল বাহিরে এসে মনে মনে বললো, বাচ্চা মুরগি খেয়ে তো পানির পিপাসাই মিটবে না ,ওর মাকে ওর মাকে খেয়ে ক্ষুধা মিটাবো এবার। এই খুশিতে নাচতে নাচতে নদীর পারে আসে শিয়াল। এতক্ষনে মা মুরগি চিংচিংকে খুজতে আবার পিছনের দিকে গেছে। ক্কুরক্কুর করে চিংচংকে ডাকছে মা মুরগি। রাত হয়ে গেলো কোথাও পেলো না মা মুরগী চিংচিংকে। মা মনে করলো, হয়তো চিংচিং বাসায় গেছে। সন্ধ্যার দিকে মা মুরগি অন্য বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় এলো । সে দেখলো , চিংচিং নেই । মর মাথার মধ্যে যেন বিদ্যুৎ চমকাতে লাগলো।
এদিকে শিয়াল রাগে আগুন হয়ে বাসায় ফিরলো। বাসায় এসে শিয়াল শান্ত হলো কারণ,চিংচিং শিয়ালের ঘরটা সুন্দর করে সাজিয়েছে। শিয়াল কে দেখে চিংচিং বললো, এতো দুর্গন্ধ তোমার ঘর, আমি সব পরিস্কার করে দিয়েছি। এবার বলো আমার মা, আমার ভাই বোনেরা কোথায় ? শিয়াল বললো আমি তাদের খুজে পাইনি। চিংচিং বললো, তুমি আমার ভাই বোনদের খেয়ে ফেলেছো, তাইনা ? শিয়াল বললো, সত্যিই আমি তাদের দেখা পাইনি। শিয়ালের কথা বিশ্বাস করলো না চিংচিং। সে আবারো হাউমাউ করে কাদতে শুরু করলো। শিয়াল রেগে বললো, কান্না থামাও নইলে তোমাকে খেয়ে ফেলবো। চিংচিং কাদতেই লাগলো। শিয়াল বাহিরে এসে দুইটা ঘাসফড়িং নিয়ে গেলো চিংচিং এর জন্য, এবং খেতে বললো, প্রথমে খেতে চাইলো না চিংচিং পরে ক্ষুধার জ্বালায় খেয়ে ফেললো ফড়িং দুটিকে চিংচিং। শিয়াল চিংচিংকে অনেক শান্তানা দিয়ে বললো, আগামীকাল তোমার মাকে খুজে বেড় করবো, তুমি যাবে আমার সাথে। চিংচিং এই কথা শুনে পুরো শান্ত হয়ে গেলো।
অনেক রাত হয়েছে মা মুরগি চিন্তা করছেন, এই শীতের মধ্যে কোথায় থাকবে চিংচিং, আবার ভাবলেন যদি শিয়াল ওকে খেয়ে ফেলে। চিন্তায় কেটে গেলো সারাটা রাত মা মুরগির।
পরের দিন সকালে শিয়াল চিংচিংকে আনলো নদীর পারে। চিংচিং নিজেই জানেনা আসলে সে মা মুরগির সাথে কোন পথে এসে ছিলো নদীর পারে। মা মুরগি আজ আর এলো না নদীর পারে। অন্য পথে খুজলেন চিংচিংকে, কোথাও পেলো না। মা মুরগি মনে করলো চিংচিংকে শিয়াল খেয়ে ফেলেছে। তাই মনে আহাজারি রেখেই চিংচিং এর সন্ধান করা বাদ দিলো।
অনেক জায়গায় গিয়েছিলো চিংচিংকে নিয়ে শিয়াল, মা মুরগিকে কোথাও খুজে পায়না।
সেদিন শিয়াল চিংচিং কে বললো , তোমার মা দেখতে কেমন ? চিংচিং বললো , ঠিক আমার মতো । প্রতিবেশী মুরগি গুলো তাই বলে । শিয়াল বললো ঠিক আছে আমি খুজতেই থাকবো তোমার মাকে। এই কথা বলতেই শিয়াল তাকায় চিংচিং এর দিকে, চিংচিং ও তাকিয়ে আছে শিয়ালের দিকে। শিয়াল মনে মনে বলছে সত্যি চিংচিংকে খুব স্ন্দুর লাগছে, ও যদি আমার বন্ধু হতো বাকি জীবণ বিয়ে করতাম না। শিয়াল মনের কথা মনে রাখতে পারলো না। হঠাৎ বলেই ফেললো চিংচিং আমার বন্ধু হবে ? চিংচিং অনেক্ষন ভেবে বললো, হ্যাঁ আমি তোমার বন্ধু হবো। শিয়াল বেশ খুশি।
শিয়াল চিংচিং এর জন্য খাদ্য সংগ্রহ করে ,আর চিংচং খায়। সুখেই বসবাস করছে তারা।
চার মাস পর ঃ চিংচিং বড় হয়েছে । ওর ভাই বোনেরাও বড় হয়েছে এবং মা মুরগির বয়স হয়েছে দেখলেই বুঝা যায়। সেদিন শিকারের খোজে শিয়াল আসে মা মুরগির আস্তানায়। শিয়াল এসে দেখলো চিংচিং এর মত একটা মুরগি অন্য মুরগিদের সাথে খাদ্য সংগ্রহ করছে। শিয়াল শিকার না করে ভাবছে আমি তো বাঁচবো মাত্র কয়দিন । চিংচংকে ওর মার কাছে দিয়ে যাই এটাই ভালো হবে। তাই শিয়াল দৌড়ে গেলো চিংচিং এর কাছে। চিংচিং চিচি করে বললো, কোথায় আমার মা আমাকে মার কাছে নিয়ে যাও বন্ধু। শিয়াল আর চিংচিং এলো মা মুরগির আস্তানায়। শিয়াল আড়ালে থাকলো আর চিংচিং গেলো ওর মার কাছে। মা মুরগি চিংচিং এর দিকে তাকিয়ে আছে । মা চিনতে পারে তার মেয়ে কে। চিংচিংও মাকে চিনতে ভুল করিনী। মা কে তার হাড়িয়ে যাওয়ার কাহিনী বলে । মা আর চোখে পানি রাখতে পারলো না। মা মুরগি বললো, হ্যাঁ তুমিই আমার চিংচিং । এর মধ্যে হাজির বন বিড়াল। বন বিড়ালকে দেখে মা মুরগি দৌড়ে পালো। চিংচিং বন বিড়ালকে ভয় পায়না। কারন সবাই জানে চিংচিং শিয়ালের বন্ধু। চিংচিং সেখানে রইলো, শিয়াল গাছের আড়ালে, তাই এসব দেখতে পাচ্ছে না । আজ বন বিড়াল চিংচিং কে ছাড়লো না। চিংচিং বললো ,আমাকে তো চিনিস তোরা আমার বন্ধু শিয়াল জানলে তোকে খাবে। আমাকে ছেড়ে দে। বন বিড়াল শিয়ালের কথা শুনে আরো রেগে যায় এবং চিংচিং গলা চাপ দিয়ে ধরে। অনেক কষ্টে বন বিড়ালের হাত থেকে গলা খুলে চিৎকার দেয় চিংচিং বন্ধু বাচাও বাঁচাও। আবারো গলায় চাপ দেয় বন বিড়াল । শিয়াল ঝাপিয়ে পরে বন বিড়ালের উপড় বনবিড়াল পালিয়ে যায়। এতক্ষনে চিংচিং চলে যায় দুনিয়া থেকে। শিয়াল চিংচিংকে বুকে নিয়ে হাউমাউ করে কাদতে থাকে ।
সমাপ্ত
০১৭৮৮৪০৪২৬২