দুই মন্ত্রীর ওপর নাখোশ প্রধানমন্ত্রী -এরশাদের বক্তব্যের জবাব দেবেন

Hasinaসুরমা টাইমস ডেস্কঃ দুই মন্ত্রীর ওপর নাখোশ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে পরোক্ষভাবে নানা কথা বলেন তিনি। এ সময় দুই মন্ত্রী নিশ্চুপ ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পর্যায়ের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও দুই মন্ত্রীর কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সকাল দশটায় ছিল মন্ত্রিসভার বৈঠক শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময়। নির্ধারিত সময়ের আগেই মন্ত্রিসভা কক্ষে হাজির হন দুই মন্ত্রী। বৈঠকে অংশ নিয়ে নির্ধারিত এজেন্ডা বা এজেন্ডার বাইরে কোন আলোচনায়ও অংশ নেননি তারা। এদিকে গতকাল দুই মন্ত্রীর দপ্তরের সামনে উদ্বিগ্ন কিছু নেতাকর্মীর ভিড় দেখা গেছে। গতকাল সবচেয়ে বেশি বিমর্ষ সময় কাটান খাদ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদ ও কার্টুন প্রকাশ হওয়ায় অনেকটা চুপসে যান। মিডিয়াকর্মীরা তার দপ্তরের সামনে গেলেও কোন কথা বলেননি। যদিও গত কয়েক দিন ধরে ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গমকে উৎকৃষ্ট মান প্রমাণের যারপরনাই চেষ্টা করে যান এ মন্ত্রী। সোমবার কয়েকটি জাতীয় দৈনিককে বিষোদ্গার করেন। অন্যদিকে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তার মন্ত্রী ও এমপি থাকার বৈধতা সম্পর্কে মিডিয়াকে কোন কথা বলছেন না। চুপ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগে নিজের কার্যক্রম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের আদেশে মায়ার সাজা খারিজের রায় বাতিল হওয়ায় ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মন্ত্রিত্ব নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ দুর্যোগমন্ত্রী মায়া ২০০৮ সালে জ্ঞাত আয়ের বাইরে অবৈধভাবে ৬ কোটির বেশি টাকার সম্পদ অর্জনের মামলায় ১৩ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। ২০১০ সালের অক্টোবরে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ শুধুমাত্র আইনি প্রশ্নে ওই রায় বাতিল করেন। দুদক এর বিরুদ্ধে আপিল করে। ১৪ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে হাইকোর্টে আপিলের পুনঃশুনানির নির্দেশ দেন। এ রায় নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে বিচার বিশ্লেষণ। দুদকের এক কমিশনার বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মন্ত্রী- এমপির দায়িত্ব চালিয়ে যেতে আইনি কোন বাধা নেই। বিপরীতে দুদকের আইনজীবী বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী তার মন্ত্রী ও এমপি পদ থাকতে পারে না। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ১৪ই জুন থেকে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়ে গেছে। এছাড়া গত বছর নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় তার জামাতা র‌্যাবের কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদের জড়িত থাকার ঘটনায় মায়া প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েন। ওই সময় ঘাতক জামাতাকে রক্ষায় মন্ত্রী মায়ার দেন-দরবার সরকারের উচ্চ মহলকে ক্ষুব্ধ করে। এদিকে ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত ৪০০ কোটি টাকার পচা গম আমদানি নিয়ে বেশ সমস্যার মধ্যে পড়েছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। খাদ্যমন্ত্রী এ মন্ত্রণালয়টির কাজে যোগদানের পর কি কি অবৈধ কাজ করেছেন সব তথ্য এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে রয়েছে। সাবেক এক মন্ত্রী খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত দেড় বছরের অপকর্ম প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট আকারে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও পচা গম সম্পর্কে পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে স্যাম্পলসহ অভিযোগ পেয়ে খাদ্য সচিব মুশফেকা ইকফাৎকে তিরস্কার করেছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এসব গম কেনায় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এত কিছুর পরও গম কেলেঙ্কারির পক্ষে সাফাই আপাতত বন্ধ করেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে খবর আছে ব্রাজিলের পর ফ্রান্স থেকেও পচা গম কেনা হয়েছে। এর আগে গেল এপ্রিলে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ক্ষমতাসীন দলের কাছে বেশ আলোচিত হন। এ দুই জনের মধ্যে মন্ত্রী মায়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থীর সরাসরি বিরোধিতা করেন। এ কারণেও তার ওপর অসন্তুষ্ট খোদ প্রধানমন্ত্রী ও দল। ওই বিরোধিতার সময় খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল তার সঙ্গী হন এমনটা বলছেন কেউ কেউ। দলের মধ্যে আলোচনা রয়েছে, মায়া-কামরুলের বিরোধিতার কারণেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগকে মরিয়া হতে হয়েছে। এদিকে ওয়ান-ইলেভেনের ভূমিকার কারণে দফায় দফায় পুরস্কার পেয়ে পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। ২০০৯ সালে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এমপি প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন এবং নির্বাচিত হয়েই প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দ্বিতীয় মেয়াদে পদোন্নতি পেয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হন। কিন্তু শুরু থেকেই গম কেনা, নিয়োগ ও বদলিসহ নানা পদক্ষেপে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। গেল দেড় বছরে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদ থেকে তিন অতিরিক্ত সচিবকে বদলি করিয়েছেন। তার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার কারণেই তাদের সরিয়ে দিয়েছেন এমন অভিযোগ করছেন কেউ কেউ।
এরশাদের বক্তব্যের ‘জবাব’ দেবেন প্রধানমন্ত্রী
নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, স্পিকার ও উপনেতাকে ‘শো-পিস’ বলে মন্তব্য করেছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচএম এরশাদ। সোমবার সংসদে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওই দিন তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা সময় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সংসদ কক্ষ। নারী এমপিদের পাশাপাশি উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীও তার ওই বক্তব্যে বিরক্তি প্রকাশ করেন। হাত নেড়ে তিনিও প্রতিবাদ জানান। তবে এতেই শেষ হয়ে যায়নি ওই মন্তব্যর রেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি সংসদের সমাপনী ভাষণে এ নিয়ে পাল্টা জবাব দেবেন। বিষয়টি তিনি এরশাদকেও জানিয়েছেন। তবে হাসিমুখে। গতকাল বাজেট পাসের পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণার পর এমপিরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে ভিড় জমান। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন নারী এমপি। এ সময় নিজের আসন ছেড়ে উঠে আসেন এরশাদ। তিনি জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো। বাবলু তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যান অধিবেশন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এরশাদকে সামনে দেখে সালাম দেন তিনি। এ সময় নারী এমপিরা ঘিরে ধরেন এরশাদকে। তারা বলেন, নারীদের আপনি এত দুর্বল ভাবেন কেন। প্রধানমন্ত্রী  তার ওই বক্তব্য নিয়ে রসিকতা করেন। এরশাদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জন্মের সময় মায়ের হাত ধরে বড় হয়েছেন। আর বড় হয়ে এখন পর্যন্ত স্ত্রীর হাত ধরেন। তার এ রসিকতায় হাসিতে ফেটে পড়েন এমপিরা। এরশাদও তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন। পরে তাকে ফোন করলে তিনি এসব তথ্য জানান। তুহিন বলেন, আপা এরশাদ সাহেবকে বলেছেন, অধিবেশনের সমাপনী দিনে আপনার এ কথার জবাব দেয়া হবে। এরশাদকে মহিলা এমপিরা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে ও সেনাসমর্থিত সরকারের সময় নারী নেতারা রাস্তায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ঝুঁকি নিয়ে মিছিল করেছেন। তাই আমাদের দুর্বল ভাবার কোন মানে হয় না। প্রসঙ্গত, সোমবার এরশাদের ওই মন্তব্য অসংসদীয় ভাষা হিসেবে গণ্য করে তা সংসদের রেকর্ড থেকে বাতিল করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে এরশাদ নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে বলেন, দেশের অনেকেই নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে প্রশংসা করেন। কিন্তু বাস্তবে তা কি ঠিক? শহীদ মিনারে, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নারীরা যেতে পারেন না, নিগৃহীত হন। আমরা কথায় কথায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, স্পিকার ও সংসদের উপনেতা নারীর কথা উদাহরণ দেই। কিন্তু আসলে তারা তো ‘শো-পিস’। দেশের বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। তার এ বক্তব্যের পর পরিস্থিতি বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করেন এরশাদ। পরের চিত্রে বিরোধীদলীয় নেতা ও তার সহধর্মিণী বক্তব্য দিতে উঠে শুরুতে ক্ষমা চেয়ে নেন। তিনি বলেন, তার হয়তো শব্দচয়ন ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতির বক্তব্য  সংসদে প্রধানমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও  অন্যান্য সদস্য বোনেরা মনে কষ্ট পেয়েছেন। এজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।