অবশেষে অবৈধ হলেন পূবালীর ১০ পরিচালক

pubali-bankসুরমা টাইমস ডেস্কঃ অবশেষে নানা বিতর্ক ও আইনি জটিলতার মারপ্যাঁচে পড়ে অবৈধ ঘোষিত হলেন পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের আলোচিত ১০ পরিচালক। ক্ষমতার জোরে টিকে থাকা এ ১০ পরিচালককে সরিয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি মাসের ১১ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক চৌধুরী মো. ফিরোজ বিন আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অবৈধ ঘোষিত পরিচালকরা হলেন- সাবেক এমপি ও ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার, ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, ফাহিম আহমেদ ফারুক চৌধুরী, পরিচালক মনিরুদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ মোয়াজ্জাম হুসাইন, আহমেদ শাফি চৌধুরী, রুমানা শরীফ, এম খাবিরুজ্জামান ইয়াকুব, মুসা আহমেদ এবং আজিজুর রহমান।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত ব্যাংকের ৩১তম বার্ষিক সভা ও ৩১ মার্চ ব্যাংকের ৩২তম বার্ষিক সাধারণ সভায় হাফিজ আহমেদ মজুমদার, হাবিবুর রহমান, ফাহিম আহমেদ ফারুক চৌধুরী, মনিরুদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ মোয়াজ্জাম হুসাইন, আহমেদ শাফি চৌধুরী, রুমানা শরীফ, এম খাবিরুজ্জামান ইয়াকুব, মুসা আহমেদ এবং আজিজুর রহমান অবসর গ্রহণ করেন ও পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তাদের টানা দু’টি মেয়াদ সম্পন্ন হয়েছে।
যেহেতু দ্বিতীয় মেয়াদের সময় শেষ হওয়ায় পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য নন তারা, তাই উক্ত শূন্যপদে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের পরিচালক পদে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগে পর্ষদের কেউই নির্বাচিত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করলেও নতুন যে ১০ পরিচালক আসবে তাদের অবশ্যই অনুমোদন নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এ চিঠিতে।
এছাড়া চিঠিতে পরিচালনা পর্ষদের উল্ল্যেখিত ১০ জন বাদে মনজুরুর রহমান ও আব্দুর রাজ্জাককে নিয়োগের পূর্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নথিপত্রসহ আবেদন করতে বলা হয়েছে।
তবে তৃতীয় মেয়াদে রুমানা শরীফকে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৫ শতাংশ শেয়ারধারী, আব্দুর রাজ্জাককে দ্যাটস ইট ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ২.০৩ শতাংশ শেয়ারধারী এবং আহমেদ সাফি চৌধুরীকে ট্রান্সকম লিমিটেডে ২.০১ শতাংশ শেয়ারধারী দেখিয়ে নমিনী হিসেবে পরিচালনা পর্ষদে আনা হলেও এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে কিছু বলা হয়নি।
তথ্য মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিএসইসির নিয়মকে পাশ কাটিয়ে মেয়াদ শেষে লোক দেখানো এজিএম করে (নির্বাচন ছাড়া) ঘুরেফিরে তারাই দায়িত্বে থেকেছেন। অথচ তাদের কারোরই পরিচালক পদে আসার যোগ্যতা নেই। হাইকোর্টে অনিষ্পতি হওয়া মামলা চলমান থাকার মধ্যে গত ৩১ মার্চ ৩২তম এজিএমে তৃতীয় মেয়াদে পরিচালক নিবাচিত হন। অবশ্য ব্যাংকের অধিকাংশ শেয়ারধারী প্রবাসী হওয়ায় এজিএমে তাদের অংশগ্রহণ ছিল না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১৩ সালের ৩০তম এজিএমের পূর্বে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার না থাকায় পূবালী ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচনের গঠিত কমিশন ১৪ আগস্ট হাফিজ আহমেদ মজুমদারসহ তৎকালীন আট পরিচালককে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করে। পরবর্তীতে তারা হাইকোর্টে গেলে গত বছরের ২০ আগস্ট কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেন আদালত। পরদিনই কোনো সময়ের অপেক্ষা না করেই ব্যাংকের এজিএমের আযোজন করে তারা পরিচালক নির্বাচিত হন।
পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দুই শতাংশ শেয়ার না থাকায় পূবালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও পরিচালক মোহাম্মদ ফায়জুর রহমান, আহমেদ শফি চৌধুরী, ফাহিম আহমেদ ফারুক চৌধুরী, মোহাম্মদ কবিরুজ্জামান ইয়াকুব, রুমানা শরিফ, সুরাইয়া রহমান ও আজিজুর রহমানের পদ শূন্য ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতেও এ আদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
এদিকে উল্লেখিত পরিচালকদের মধ্যে আহমেদ সাফি চৌধুরৗ, সুরাইয়া রহমান ও রুমানা শরীফের এ ব্যাংকে শেয়ারের পরিমান অতি সামান্য। সুরাইয়া রহমানকে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৫ শতাংশ শেয়ারধারী, রুমানা শরীফকে দ্যাটস ইট ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ২.০৩ শতাংশ শেয়ারধারী এবং আহমেদ সাফি চৌধুরীকে ট্রান্সকম লিমিটেডে ২.০১ শতাংশ শেয়ারধারী দেখিয়ে নমিনি হিসেবে তাদের কো-অপ্ট করা হয়েছিল। যা ব্যাংক ও কোম্পানি আইন বহির্ভূত। অবশ্য এসব বিষয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাথা ঘামায়নি।
এ ব্যাপারে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ হালিম চৌধুরী চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বাংলামেইলকে বলেন, ‘এটা আসলে বোর্ডের ব্যাপার। বোর্ড বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। এটা ব্যাখ্যাগত সমস্যা, বাংলাদেশ ও পূবালী ব্যাংকের বোর্ড নিজ নিজ ব্যাখ্যা দিচ্ছে। উভয় প্রতিষ্ঠানে যারা আছেন, তারা একসাথে হয়ে সমাধান করে ফেলবে।’
ব্যাংকের চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার বাংলামেইলকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটা বলার কারণ হলো নির্বাচিত হওয়ার আগে তাদের অনুমোদন নেইনি বলে। যেহেতু আমরা শেয়ারহোল্ডারদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি, সেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক যে আইন উল্লেখ করে আমাদেরকে চিঠি দিয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৯৯১ (২০০৩ পর্যন্ত সংশোধিত), এর ১৫(৪) ধারাটিতে এ বিষটি স্পষ্ট নয়। এ ব্যপারে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসবো।’