ভারত বধ : নায়ক মোস্তাফিজুর

215859সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ‘ভারতের সবাই তো ক্লাস ব্যাটসম্যান। তবে বিরাট কোহলি সবচেয়ে ফর্মে রয়েছেন। তার উইকেট নেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমার কাজই তো উইকেট তুলে নেওয়া। ওটা যত পারবো, ততই ভালো।’
ওয়ানডে দল ঘোষণা হওয়ার পরের দিন এমনটাই বলেছিলেন অভিষেক হওয়া মুস্তাফিজুর রহমান। আজ ভারতের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে কথা রেখেছেন মুস্তাফিজ। অভিষেকেই আলো ছড়িয়ে নতুন এক ভবিষ্যতের আলো ছড়ালেন তিনি।
ভারতকে ৩০৮ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেওয়ার পর যখন ব্যাট হাতে ক্রমশ স্বাগতিক দলের বোলাদেরকে হতাশ করতে শুরু করেছে তখন যে পেসারের হাত ধরে শুরু হলো, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আসা-জাওয়া, সেই তাসকিন আহমেদেরও অভিষেক ঘটে এই ভারতের বিপক্ষেই। সেই ম্যাচে তিনিও তুলে নেন পাঁচ উইকেট!
মুস্তাফিজও হাঁটলেন একই পথে। একে একে ফেরালেন রোহিত শর্মা, আজিঙ্কা রাহানে, সুরেশ রায়না, অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাদেজাকে।
ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে অভিষেক ম্যাচে এখন পর্যন্ত মোট ১০জন বোলার পাঁচ উইকেট নেওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। তার মধ্যে দুজনই বাংলাদেশ দলের। তাসকিন আহমেদ এবং মুস্তাফিজুর রহমান। বলে রাখা ভালো, দুজনের ক্ষেত্রেই প্রতিপক্ষ ভারত!
মুস্তাফিজুরের বোলিং তান্ডবে বিশ্বকাপের কথা মনে করিয়ে দিল টাইগাররা। বিশ্বকাপে না পারলেও দেহের মাটিতে ভারতকে হারিয়ে চরম প্রতিশোধ নিল টাইগাররা।
বাংলাদেশের দেয়া ৩০৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৪৫.৫ বলে ২২৮ রানে গুটিয়ে যায় ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম এ পরাশক্তি। এর ফলে ৭৯ রানের জয় পেয়েছে টাইগাররা।
রোহিত শর্মা ৬৩ এবং রায়না ৪০ ও ধাওয়ান ৩০ রান করেন। এছাড়া আর কেউ ব্যাটে এসে টাইগারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। মুস্তাফিজ-তাসকিন-সাকিব-মাশরাফিদের গর্জনে কাঁপছিলো মিরপুর।
এর আগে ৩৭ তম ওভারে বল হাতে পরপর দুই উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ। ৪০ বলে ৪০ রান করা রায়না এবং নতুন ব্যাট করতে আসা অশ্বিনকে ফেরান এ তরুন টাইগার। সাকিব ফেরান ধোনিকে। ৭ বলে ৫ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি।
এর আগে মুস্তাফিজের অসাধারণ ডেলিভারিতে সাজঘরের পথ ধরেন আজিঙ্কা রাহানে। দলীয় ২৩তম ওভারের শেষ বলে নাসির হোসেনের দারুণ এক ক্যাচে ব্যক্তিগত ৯ রান করে বিদায় নেন রাহানে।
তাসকিনের পর বাংলাদেশের আরেক তরুণ পেস তারকা মুস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন রোহিত শর্মাকে। ৬৩ রান করা রোহিত মুস্তাফিজের বলে দিশেহারা হয়ে মাশরাফির হাতে ক্যাচ তুলে দেন।
২৩ ওভার শেষে সফরকারীদের সংগ্রহ চার উইকেট হারিয়ে ১১৫ রান। দুটি উইকেট নিয়েছেন তাসকিন।
জোড়া ক্যাচ মিসের মাশুল দিয়ে যাচ্ছিল স্বাগতিকরা। ১৫ ওভার শেষ হলেও কোনো উইকেটের দেখা পায়নি টাইগার বোলাররা। তবে, দলীয় ১৬তম ওভারে তাসকিনের শেষ বলে ধাওয়ান উইকেটের পেছনে আবারো ক্যাচ তুলে দেন। এবার আর ভুল করেননি মুশফিক। ব্যক্তিগত ৩০ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন ধাওয়ান।
ইনিংসের নবম ওভারে রুবেল হোসেনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন শিখর ধাওয়ান। তবে, মুশফিকের হাত ফসকে বল বেড়িয়ে গেলে জীবন পান ধাওয়ান। পরের ওভারে মাশরাফির বলে আবারো উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ধাওয়ান। আম্পায়ারও আউটের সিদ্ধান্ত দেন। উইকেট থেকে বেরিয়ে যান ভারতীয় ওপেনার। কিন্তু, এবারো মুশফিকের হাত ফসকে বল বেরিয়ে যায়। বল কুড়িয়ে উইকেট ভেঙে দিলেও আম্পায়ার পরে তার সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।
ধাওয়ান ফিরে যাওয়ার পর দ্রুতই মুশফিকের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন বিরাট কোহলি। তাসকিনের দ্বিতীয় শিকারে সাজঘরের পথ ধরেন কোহলি। দলীয় ইনিংসের ১৮তম ওভারে দারুণ এক ডেলিভারিতে এক রান করা কোহলিকে ফিরিয়ে দেন তাসকিন।
বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ৩০৮ রানের টার্গেটে ভারতের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ান। স্বাগতিকদের বোলিং সূচনা করেন টাইগারদের বোলিং চমক মুস্তাফিজুর রহমান। এই প্রথম টাইগারদের স্কোয়াডে একসঙ্গে চার পেসার খেলেন।
এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে তামিম ইকবাল আর সৌম্য সরকারের উড়ন্ত সূচনা আর সাকিব, সাব্বির, নাসিরের দৃঢ়তায় প্রথম ওয়ানডেতে টাইগাররা সবক’টি উইকেট হারিয়ে ৪৯.৪ ওভারে ৩০৭ রান করে।
তামিম ৬০, সৌম্য ৫৪, সাকিব ৫২, সাব্বির ৪১ আর নাসির ৩৪ রান করলে ভারতের বিপক্ষে টাইগারদের দলীয় সর্বোচ্চ স্কোর দাঁড়ায়। এর আগে টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২৯৬ রান (২০১০ সালের জানুয়ারিতে)।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বিকেল ৩টায় সফরকারী ভারতের বিপক্ষে বদলে যাওয়া টাইগার বাহিনী টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে। তামিম আর সৌম্যর ব্যাটে ভর করে মাত্র ৮০ বলে দলীয় শতক পার করে টাইগাররা। আউট হওয়ার আগে তামিমের সঙ্গে ১০২ রানের জুটি গড়েন সৌম্য। যা ভারতের বিপক্ষে টাইগারদের সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি।
বৃষ্টির কারণে খেলা প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আবারো শুরু হয়। এরপর টাইগারদের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে। সাজঘরে ফেরেন তামিম ইকবাল। ব্যক্তিগত ৬০ রান করে অশ্বিনের বলে রোহিত শর্মার তালুবন্দি হন তামিম। আউট হওয়ার আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩০তম অর্ধশতক হাঁকান দেশসেরা এ ওপেনার।
দলীয় ১৪৬ রানের মাথায় টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর স্বাগতিকদের বেশ ভালো ভাবেই টেনে নিয়ে চলেন সাকিব-সাব্বির। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতকের দিকে ছুটতে গিয়ে ১৫ ওয়ানডে খেলা সাব্বির ব্যক্তিগত ৪১ রান করে বিদায় নেন। জাদেজার বলে বোল্ড হওয়ার আগে সাব্বির ৪৪ বলে ৫টি চার আর একটি ছক্কা হাঁকান। ঘুরে দাঁড়িয়ে সাকিব-সাব্বির মিলে ৮৩ রানের জুটি গড়েন।
সাব্বির রহমানের বিদায়ের পর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জুটি গড়েন নাসির হোসেন। ভারতীয় বোলারদের কোনো সুযোগ না দিয়ে ব্যাট করতে থাকা সাকিব ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৯তম অর্ধশতক হাঁকিয়ে উমেশ যাদবের লাফিয়ে উঠা বলে শট নিয়ে জাদেজার হাতে ধরা পড়েন। আউট হওয়ার আগে ৬৮ বলে ৫২ রানের একটি ইনিংস খেলেন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। নাসিরকে সঙ্গে নিয়ে ৩৮ রানের জুটিও গড়েন সাকিব।
সাকিব আল হাসান ফিরে গেলেও থেমে থাকেনি টাইগারদের রানের চাকা। নাসির হোসেন নিজের পুরোনো রূপে ফিরে ২৭ বলে তিন চার আর এক ছয়ে ৩৪ রান করেন। উমেশ যাদবের বলে জাদেজার তালুবন্দি হন নাসির। শেষ দিকে ব্যাটে ঝড় তুলে মাশরাফি খেলেন ২১ রানের ইনিংস।
ভারতের হয়ে সাতজন বোলার বল করেন। ১০ ওভারে ৫১ রান দিয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট পান অশ্বিন। এছাড়া দুটি করে উইকেট নেন ভুবনেশ্বর কুমার আর উমেশ যাদব। মোহিত শর্মা এবং রবীন্দ্র জাদেজা একটি করে উইকেট দখল করেন।