অপপ্রচার : শেখঘাট থেকে অপহৃত জয়ী ভারতে বন্দি?

letter-about-joyee2সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ অপহরনের প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও চার বছরের কন্যাশিশু জয়ী উদ্ধার হয়নি। অপরাধীদের গ্রেফতার করে আদালতে ১৬৪ দঃবিঃতে স্বীকারোক্তি দিলেও এই মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ষঢ়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালিয়ে তদন্ত ও উদ্ধার কার্যক্রমকে ভিন্নখাতে করছে অপহরনকারীরা।
২০১৩ সালের জুলাই মাসে সিলেট নগরীর শেখঘাট ভাঙ্গাটিকর এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় চার বছরের কন্যাশিশু জয়ী। সিলেট কোতয়ালী থানায় তাৎক্ষনিক সাধারন ডায়েরী করেন জয়ীর বাবা স্কুল শিক্ষক সন্তোস কুমার দেব। এরপর পুলিশের সহযগীতায় অনেক খোঁজাখুজি করে তার কোন সন্ধান না পেয়ে মামলা করেন জয়ীর বাবা। জয়ীকে উদ্ধারে দেশের বিভিন্ন স্থানেও অভিযান চালানো হয়। অপহরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ৩ জনকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং রিমান্ডে নিয়েও উদঘাটিত হয়নি জয়ী অপহরণের রহস্য। অপহরণের ঘটনার প্রায় আড়াই বছর সময় পার হয়ে গেলেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি জয়ীকে। চিহ্নিত অপহরনকারীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৬৪ দঃবিঃ তে স্বীকারোক্তি দেয় অপহরনকারীরা। পুলিশ নিশ্চিত উদ্ধারের দ্বারপ্রান্তে চলে গেলে একটি বানোয়াট নাটক সাজিয়ে এই উদ্ধার কার্যক্রমকে ব্যাহত করে অপহরনকারীরা। এরই অংশ হিসেবে গত রবিবার ডাকযোগে আসা রহস্যজনক এক চিঠি আবারো জয়ী অপহরণের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিকন্দর আলী সহ এলাকার বিভিন্ন জনের কাছে আসা কয়েকটি উড়ো চিঠিতে জয়ীকে অপহরণের কাহিনীর বর্ণনা দিয়েছেন জনৈক ব্যক্তি। তবে ভারতীয় নাগরিক পরিচয়ে পাঠানো ওই চিঠির কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। একটি অনলাইন পোর্টাল জানিয়েছে কাউন্সিলর সিকন্দর চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি জানিয়েছেন কোতয়ালী থানার ওসিকে। চিঠিতে অপহরণের মূলহোতা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে জয়ী অপহরণের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া শঙ্কর ও তার সহযোগী অনিতার নাম। তবে কোতোয়ালী থানার ইনস্পেক্টর তদন্ত ও জয়ী অপহরন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মোশাররফ জানান ওই উড়ো চিটিগুলোর একটি তিনি নিজেই সংগ্রহ করেছেন।
অনলাইন পোর্টালে বলা হয়, চিঠিতে জনৈক ব্যক্তি শিশু পাচারকারী হিসেবে শঙ্কর ও অনিতা বলে উল্লেখ করেন। পত্রপ্রেরক একটি ছেলে শিশু ও মেয়ে শিশু পাচারের জন্য শঙ্কর ও অনিতাকে আড়াই লক্ষ টাকা প্রদানের কথাও জানান। অপহরণের মাধ্যমে জয়ী তাদের কাছে পৌছালেও ছেলে শিশুটি পালিয়ে যায়। জয়ীর পরিবারের কাছ থেকে আরো টাকা উদ্ধারের জন্য আটকে রাখলেও পরে তারা জয়ীকে ফিরিয়ে নেয়নি। জয়ীর বাবার সাথে পারিবারিক শত্রুতার জেরে এরকম ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে জানান পত্রপ্রেরক। জয়ী বর্তমানে ভারতেই আছে বলে জানিয়েছেন ঐ অজ্ঞাত পত্রপ্রেরক। এবং ভারতে তার ঠিকানা শঙ্কর এবং অনিতা জানেন বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
অপহৃত কন্যাশিশু জয়ীর মা শর্বানী দেব তুলি ও বাবা সন্তোস কুমারের সাথে আলাপকালে তারা জানান, এরখম কয়েকটি চিঠির কথা তারা শুনেছেন। জয়ী অপহরনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো ষঢ়যন্ত্র হয়েছে এটি তারই ধারাবাহিকতার অংশ হতে পারে। পুলিশি তদন্ত ও উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত করতেই এমন উদ্যোগ বলে জানান শর্বানী দেব তুলি।
কোতোয়ালী থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত ও জয়ী অপহরন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মোশাররফ জানান, তিনি এরখম একটি চিটি সংগ্রহ করেছেন। চিটিটি ভারত থেকে নয় বরং বাংলাদেশের ডাক টিকিট সংযুক্ত বলে তিনি জানান। তিনিও এটিকে প্রাথমিকভাবে ভূয়া হিসেবেই ধরে নিচ্ছেন। তবে একেবারে ফেলনা হিসেবে ছুড়ে দিতেও তিনি নারাজ। অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধারের স্বার্থে তিনি চিটিখানাকে উভয় দিক থেকে বিবেচনা করেই তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান ইন্সপেক্টর মোশাররফ।
প্রসঙ্গত আলোচিত শিশু স্নিগ্ধা দেব জয়ী অপহরণ মামলায় নগরীর শেখঘাট ভাঙ্গাটিকর গোপীনাথ আখড়ার সেবায়েত রামেন্দ্র ভট্রাচার্যের মেয়ে অনিতা ভট্টাচার্য্য, একই এলাকার শংকর দাস ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সুলেমানপুর গ্রামের রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার করে। আদালতে রবিউল জয়ীকে অপহরনের কথা স্বীকার করে জবানবন্দিও দেয়।