স্বীর্গয় আবহে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে উদযাপিত হলো হযরত আকুরম শাহ (রহ.) ওরুস মোবারক

গত বৃহস্পতিবার হযরত শাহ সুফি আরকুম আলী (রহ.) ৭৩ ওরুস মোবারকে আলোচনাসভায় প্রধান আলোচক বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা যুক্তরাজ্য প্রবাসী জিয়া উদ্দিন লালা।
গত বৃহস্পতিবার হযরত শাহ সুফি আরকুম আলী (রহ.) ৭৩ ওরুস মোবারকে আলোচনাসভায় প্রধান আলোচক বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা যুক্তরাজ্য প্রবাসী জিয়া উদ্দিন লালা।

স্বর্গীয় আবহে, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর, নান্দনিক ও আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হলো উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফি সাধক হযরত শাহ সুফি আরকুম আলী (রহ.) ৭৩ তম বাৎসরিক ওরুস মোবারক।
গত ১৯ মার্চ বৃহস্পতিবার স্বর্গীয় আবহে আশেকান ভক্তদের মিলন মেলা ওরুস মোবারক উপলক্ষ্যে একদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা হয় হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার শরীফের মোতওয়াল্লী সরেকওম ফতেহ উল্লাহ আল-আমান কর্তৃক হযরত আরকুম আলী মাজার শরীফে গিলাপ ছড়ানোর মাধ্যমে দিনব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত, যিকির, আছকার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ হযরত আরকুম আলী (রহ.) জীবনভিত্তিক আলোচনা ও ভক্তিমূলক, আধ্যাত্মিক গানের পূর্ব শুরু হয় ভক্তদের হৃদয় নিংড়ানো সমোহনী সুরে। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি কামাল উদ্দিন রাসেলের সঞ্চালনায় আরকুম শাহের জীবনভিত্তিক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারের মোতওয়াল্লী সরেকওম ফতেহ উল্লাহ আল-আমান, মাজার পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাজী আব্দুস সালাম মূর্তুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন, সাবেক ছাত্র নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জিয়া উদ্দিন লালা। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ধরাধরপুর তথা দক্ষিণ সুরমার সকল মানুষের সহাবস্থান ও সম্প্রীতির স্থান। এ ঐতিহ্য শুধু আজকেই নয়, অতীতেও এমন ছিল।
তিনি বলেন, হিন্দু-মুসলিম রায়েটের সময় ধরাধরপুরসহ দক্ষিণ সুমরার সকল একই সাথে মিলে মিশে বসবাস করেছিলেন। তখন সারা ভারতবর্ষে রায়ট সংঘটিত হলেও ধরাধরপুর তথা দক্ষিণ সুমরায় কোনো রক্তপাত ঘটেনি। সে সময় আরকুম শাহের অমিয় বাণী অন্তরে ধারণ করে ধরাপুর তথা দক্ষিণ সুরমাবাসী হিন্দু-মুসলমান সবাই মিলে মিশে বসবাস করেছেন শান্তিতে। আরকুম শাহ একজন কামেল পীর ছিলেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনির বাণীর প্রধান কালাম গুলোতেই তার প্রমাণ মিলে। তার রচিত আধ্যাত্মিক কালামগুলো শোনার জন্যই রচিত হয়নি। তার আমাদেরকে অন্তর দিয়ে অনুধাবন করতে হবে। তার অমিয় বাণী সমৃদ্ধ কালামসমূহ আমাদের জীবনের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তাকে ও তার রচিত আধ্যত্মিক কালাম নিয়ে ভন্ডামি করা চলবে না। আরকুম শাহের জীবন দর্শন ছিল অনুপম আধ্যাতিকতায় ভরা। এখন সময়ের দাবি আরকুম শাহ গবেষণার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। তাকে নিয়ে আমাদের গবেষণা করতে হবে। তাকে জানতে হবে তবেই আরকুম শাহর আধ্যাত্মিক বাণী সমুন্নত থাকবে। আরকুম শাহ আজ ধরাধরপুর তথা উপমহাদেশের গর্ব। এই গর্ব কে খর্ব করা যাবে না। তার কীর্তিকে আমাদেরকে মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে। লালন করতে হবে সঙ্গগোপনে এবং অত্যান্ত তাজিমের সাথে। আমরা দক্ষিণ সুরমাবাসী বর্তমান সরকারের কাছে তেলিবাজারস্থ বাইপাস চত্বরকে আরকুম শাহ চত্বর হিসেবে নামকরণ করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ মাজার ফেডারেশনের সিনিয়র সহ সভাপতি মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ মকন মিয়া, তেতলি ইউনিয়নের সাবেক চেয়াম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য আলহাজ্ব মইনুল ইসলাম, বরই কান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিব হোসেন, ফায়ার সার্ভিস সিলেট বিভাগের উপ-পরিচালক মোজাম্মেল হক, কান্দিগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব চমক আলী, বিশিষ্ট সাংবাদিক আহমদ আলী ও চঞ্চল মাহমুদ ফুলর।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, মাজারের মোতওয়াল্লী মুহিব আলী, মাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজি হারুনুর রশীদ, সহ সভাপতি আহমদ হোসেন রেজা, মালিক হোসেন ইজ্জাই, গোলাম মোস্তফা কামাল, জাহির মিয়া, খলিলুর রহমান, হাজি জয়নাল আহমদ, আব্দুল খালিক, যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহীন আলী, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহীন মিয়া, নিজাম উদ্দিন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, ছাত্রনেতা তুহিন আহমদ, জুয়েল আহমদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ভক্তিমূলক সঙ্গীত পরিবেশন করেন আরকুম শাহ শিল্পীগোষ্ঠী, সংগীত শিল্পী লাভলী দেব, শামীম আহমদ, লাভলী লস্কর, মাছুমা সুলতানা সাথী, রহিমা আক্তার রুবি, মিনারা বেগম, সাবিনা আক্তার, ইমা আক্তার, নিউ শাহানা, সুমা আক্তার, সংগীত শিল্পী সৌরভ সোহেল। যন্ত্রশিল্পীতে ছিলেন কী-বোর্ডে ওয়াসিম উদ্দিন, প্যাডে অলক, বাঁশিতে কছির মিয়া, তবলায় প্রকাশ বাবু, ঢোলে জাকির হোসেন, মন্দিরায় মুনসুর আলী, ডপকিতে আব্দুল ফকির। ২য় পর্ব পরিচালনা করেন বিশিষ্ট ধারা ভাষ্যকার আব্দুল আহাদ ও সংগীত শিল্পী পপি কর প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে হযরত আরকুম শাহের মাজার পুণনির্মাণ কাজে ও দেশি-বিদেশি অতিথিবৃন্দ প্রায় দু লক্ষ টাকার মতো অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে সবাইকে ধন্যবাদ ও সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার বক্তব্যে বলেন, আগামীতে সবাই যেন এভাবে আরকুম শাহের মাজার উন্নয়নে এগিয়ে আসেন। বাদ ফজর দোয়া ও তাবারুক বিতরণের মাধ্যমে দিনব্যাপি ওরুস মোবারকের সমাপ্তি ঘটে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি