মিজানকে নির্যাতন, ফুঁসছেন সাংবাদিকরা

patuakhali-journalist-MIZANসুরমা টাইমস ডেস্কঃ পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সাংবাদিক মিজানুর রহমানের সঙ্গে জেলা হাজতে দেখা করেছেন পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতিসহ সাংবাদিক নেতারা। তারা সাংবাদিক মিজানের মুখে পুলিশি নির্যাতনের বিবরণ শুনে হতবাক হয়ে পড়েছেন। অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ দায়ী পুলিশের বিচার দাবিতে ফুঁসে ওঠেন। একজন সাংবাদিকের ওপর নির্মম পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা দেশে বিরল বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে, মিজানের ওপর নির্মম পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে আগামী রোববার সকাল ১০টায় পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে পটুয়াখালী প্রেসক্লাব। এই প্রতিবাদ সভায় বিভাগীয় পর্যায়সহ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার সাংবাদিক নেতারা অংশ নেবেন।
শুক্রবার সকালে পটুয়াখালীরা সাংবাদিক নেতারা জেল হাজতে মিজানুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে যান। এসময় তার ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা শুনে অনেকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
মিজান ওই রাতের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে জানান, হ্যান্ডকাপ পরিয়ে তাকে প্রথমে বাউফল থানার ওসির রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। তার হাত পিছনে বাঁধা থাকা অবস্থায় লোহার রড দিয়ে পেটাতে শুরু করেন পটুয়াখালী সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সাহেব আলী পাঠান। বেশ কিছুক্ষণ পেটানোর পরে ক্লান্ত হয়ে পড়েন এএসপি। এরপর ওসি নরেশ চন্দ্র কর্মকার এসে মারপিট শুরু করেন। এসময় তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন পুলিশ সদস্যও তাকে মারতে থাকেন। মনে হচ্ছিল কোনো চোরকে পেটানো হচ্ছে। পেটানোর এক পর্যায়ে ওসি নরেশ চন্দ্র মিজানকে বলছিলেন, ‘তুই পুলিশের বিরুদ্ধে লেখস, তোরে আজ শেষ কইরা দিমু।’
মিজান আরো জানান, তাকে মারধরের কারণে বেশ কয়েকবার অচেতন হয়ে পড়লে পুলিশ প্রথমে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে চিকিৎসা না করিয়ে ফের থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসক ডেকে এনে দুই দফায় চিকিৎসা দেয়া হয়।
সাংবাদিকরা মিজানের সারা শরীরে ছোপ ছোপ রক্ত জমাট বাধা অবস্থায় দেখতে পান। তাকে নিয়মিত জেল খানায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তারপরেও ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলটি ফুলে সবুজ বর্ণ ধারন করেছে। মিজান নিজের হাতে কোনো প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছেন না। বর্তমানে জেল হাজতে অন্য কয়েদীদের সহযোগিতার খাওয়া দাওয়া, টয়লেট ও গোসল করছেন বলে জানিয়েছেন মিজান।
এদিকে মিজানের ওপর যখন পুলিশ সদস্যরা নির্যাতন চালাচ্ছিল তখন সাংবাদিকসহ স্থানীয়রা মোবাইল ফোনের ভিডিওতে তার নির্যাতনের ডাক চিৎকার ও আহাজারি ধারন করা হয়েছে। তবে মিজানকে নির্যাতনকালে সাংবাদিকরা থানার সামনে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দেয়। তাদের গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়া হয় বলে জানান সাংবাদিকরা।
মিজানের নির্যাতনের চিহ্ন দেখে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন ব্যানার্জি বলেন, ‘সাংবাদিক মিজানের ওপর যে নির্যাতন করা হয়েছে সেটা অমানবিক। আমরা সাংবাদিক সমাজ এর জন্য ধিক্কার জানাই। অনতিবিলম্বে দোষী পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য গত ১৭ মার্চ সন্ধায় বাউফল থানা পুলিশ দৈনিক প্রথম আলোর পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমানকে আটক করে। পরে থানা হাজতে নিয়ে গিয়ে আমানবিক নির্যাতন চালায়। পরদিন পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে মিজানকে আসামি করে মামলা করা হয়। এরপর তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।