খালেদার কার্যালয়ে তল্লাশির নির্দেশ

gulshan-1সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের তল্লাশির চালানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গুলশান থানার একটি মামলায় রোববার বিকেলে এ নির্দেশ দেন ঢাকার সিএমএম আদালত। গুলশান থানার ২৫ (২) ১৫ (হত্যাচেষ্টা) মামলায় এ আদেশ দেয়া হয়।
খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশির আদেশ দেয়া হয়েছে এমন একটি খবর আদালতে অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরা এ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট মামলার জিআর শাখায় হুমড়ি খেয়ে পড়েন। কিন্তু নানাভাবে চেষ্টা করেও ওই মামলার কোনো নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং জিআর শাখা, ডেসপাচ শাখা এবং সংশ্লিষ্ট আদালতের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
আদালতের একটি সূত্র জানায়, গুলশান থানার ওই মামলায় এজাহারনামীয় ১৪ জন আসামি খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে লুকিয়ে আছেন এবং সেখানে নাশকতার জন্য বিস্ফোরক দ্রব্য থাকতে পারে এমন সন্দেহের ভিত্তিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কার্যালয়ে তল্লাশির জন্য আদালতে অনুমতি প্রার্থনা করেন। শুনানি শেষে বিচারক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মাসুদ জামান তল্লাশির অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ এবং জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে সেই মামলায় খালেদা জিয়ার বাসভবনের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি সেখানে না থাকায় এবং তিনি বর্তমানে গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছেন জানা থাকলেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না।
সেজন্য আইনগতভাবে তার অবস্থান নির্ণয় ও সেখানে প্রয়োজনে প্রবেশ করে তাকে যাতে গ্রেপ্তার করা যায় সেজন্য ওই কার্যালয়ে খালেদা জিয়া অবস্থান করছেন মর্মে আদালতে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে সেখানে তল্লাশি চালানোর আদেশ প্রার্থনা করেছেন সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
এই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত এই আদেশটি দিয়েছেন বলে ওই সূত্রটি জানায়। তবে জিআর, ডেসপাচ, সংশ্লিষ্ট আদালতের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বীকার বা অস্বীকার করেননি।
এ বিষয়ে ঢাকার সিএমএম বিকাশ কুমার সাহার সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় এ পরোয়ানা জারি করা হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ৬৩ কার্যদিবসের মধ্যে মাত্র ৭টি দিবস আদালতে হাজির ছিলেন। বুধবার ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার আবেদনের শুনানিকালে ওই তথ্য প্রকাশ করেন। এদিন এ মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচারক খালেদা জিয়াসহ মোট তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
একই মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৪ মার্চ আদালতে হাজিরা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তিতে গত ৫ জানুয়ারি সরকার কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়ায় অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া। এর দু’দিন আগে থেকেই তিনি অবশ্য তার গুলশানের কার্যালয়ে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তবে কার্যালয়ের সামনে থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সরিয়ে নেয়া হলেও এখনো বাসায় না গিয়ে কার্যালয়েই অবস্থান করছেন খালেদা। এর মধ্যে তার কার্যালয়ের গ্যাস, বিদ্যুৎ, স্যাটেলাইট টিভি, ইন্টারনেট এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলেও অন্যান্য সংযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন আছে বলে অভিযোগ করছে বিএনপি। খালেদার কার্যালয়ের বাইরে থেকে খাবার প্রবেশেও বাধা দেয়া হচ্ছে।