উইমেন্স হাসপাতালের ৫ ডাক্তারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

sylhet-womens-medical-collegeসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ চিকিৎসায় অবহেলার কারণে সাংবাদিকপুত্র সাফির অঙ্গহানির (আঙ্গুল কর্তন) ঘটনায় সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ৫ ডাক্তারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে বাংলাভিশনের ক্যামেরাপার্সন ও টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি বদরুর রহমান বাবর এ মামলা (নং-২৬২/১৫)করেন। আদালতের বিচারক সাহেদুল করিম বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ৩ সদস্যের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দেওয়া নির্দেশ দেন। মামলার আসামীরা হলো সিলেট উইমেন্স হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও সার্জারী বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদ, ডা. শাফিনাজ, ডা. তানভীর, ডা. কাজী সেলিম, ডা. সৈয়দ মাহমুদ হাসান, ব্রাদার তারেক, হাসপাতালের চেয়ারম্যান ড. ওয়ালী তছর উদ্দীন, পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. মোজাম্মেল।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ জানুয়ারি বাসার দরজার হেজবল্টে চাপ লেগে আঘাতপ্রাপ্ত হয় সাংবাদিক বাবরের ছেলে সাফি। ডানহাতের তর্জনিতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে বাসার পার্শ্ববর্তী সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত ব্রাদার তারেক সাফির আঙ্গুলের গোড়ায় একটি রাবার ব্যান্ড বেধে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান পরিষ্কার করেন। পরবর্তীতে ডা. সৈয়দ মাহমুদ হাসানের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের ৫ তলায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও সার্জারী বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদের উপস্থিতিতে ডা. শাফিনাজ ও ডা. তানভীর শিশু সাফির আঙ্গুলে সেলাই ও ব্যান্ডেজ করেন। এ সময় সাফির মা পারুল বেগম রাবার ব্যান্ড না খুলে ব্যান্ডেজ করার কারণ জানতে চাইলে রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদ তার সাথে দুর্ব্যবহার করে বলেন, ‘ডাক্তার আমরা, না আপনি ?’
অপারেশন চলাকালে ডা. শাফিনাজ ও ডা. তানভীর মনোযোগী ছিলেন না। তারা একে অপরের সাথে ঠাট্রা মশকরা করছিলেন। এবং মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখছিলেন। অপারেশনের পর সাফিকে হাসপাতালের ৫০৫ নং কেবিনে সাফিকে নেওয়ার পর ডা. জাবের বাসা কাছে থাকায় সাফিকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। হাসপাতালের সমূদয় বিল পরিশোধ করে সাফিকে সন্ধ্যায় বাসায় নিয়ে যান সাংবাদিক বাবর।
হাসপাতালের ছাড়পত্রে ৩ দিন পর ড্রেসিংয়ের জন্য অর্থোপেডিক্স বর্হি:বিভাগে দেখানোর জন্য বলা হয়। কিন্তু বাসায় যাওয়ার পর সাফির হাতের ব্যথা না কমায় দু’দিন পর (২০ জানুয়ারি) হাসপাতালের বর্হি:বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডা. মহসিন সাফিকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এ সময় হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় নিজাম ব্যান্ডেজ খুলে আঙ্গুলে রাবার ব্যান্ড দেখে আবারো ডা. মহসিনের কাছে নিয়ে যান। পরবর্তীতে ডা. মহসিন হাসপাতালের ৫ম তলায় ডা. কাজী সেলিমের কাছে নিয়ে যান সাফিকে। সাফিকে দেখে ডা. কাজী সেলিম হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স ও সার্জারী বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদকে ডেকে এনে সাফির হাতের অবস্থা দেখান। এতে হতভম্ব ডা. জাবের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান সাফিকে। সেখানে আঙ্গুলের রাবার ব্যান্ড কেটে পরদিন আবারো ড্রেসিং করানোর অনুরোধ জানান ডা. জাবের। ভূল চিকিৎসায় সাফির আঙ্গুল নষ্ট করা হয়েছে বলে সাংবাদিক বদরুর রহমান বাবর উত্তেজিত হয়ে উঠলে চিকিৎসায় অবহেলার কথা স্বীকার করেন ডা. জাবের। সাফির পরবর্তী সকল ড্রেসিং নিজে করবেন বলেও জানান ডা. জাবের। এবং এতে কোনো সমস্যা হবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি। পরবর্তীতে ডাক্তারের কথা অনুযায়ী কয়েকবার উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ড্রেসিং করা হয় সাফির ক্ষতস্থান। এক পর্যায়ে ক্ষতস্থানে পুজ জমলে আমরা উইমেন্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও সার্জারী বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদ হাসপাতালের প্যাডে মেডিএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্লাস্টিক সার্জন ডা. আবদুল মান্নানের কাছে রেফার্ড করেন। ওই দিনই ডা. মান্নানের কাছে সাফিকে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ক্ষতস্থানে গ্যাংগ্রিন হওয়ায় ডানহাতের তর্জনী আঙ্গুল কেটে ফেলার জন্য বলেন। এদিকে সাফির আঙ্গুল যাতে রক্ষা করা যায় তার জন্য সাফির পিতামাতা তাকে নিয়ে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে গেলে সেখানেও হাতের আঙ্গুল কেটে ফেরার জন্য বলা হয়। এতে নিরাশ হয়ে সিলেট ফিরে সাফিকে ডা. আবদুল মান্নানের তত্ত্বাবধানে মাউন্ট এ্যাডোরা হাসপাতালে ভর্তি করে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অপারেশনের মাধ্যমে ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়। বর্তমানে সে হাসপাতালের ৪০৪ নং কক্ষে চিকিৎসাধীন।
আদালতে সাংবাদিক বদরুর রহমান বাবরের পক্ষে শুনানীতে অংশ নেন এ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান চৌধুরী, এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ তাজ উদ্দিন, সজল কুমার রায়, এ্যাডভোকেট আবুল হাসান, এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট সোহরাওয়ার হোসাইন খসরু, এ্যাডভোকেট নাজমুল হোসাইন, এ্যাডভোকেট সৈয়দ মুজিবুল হক জাবেদ, এ্যাডভোকেট মির্জা হোসাইন, এ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান আলেক, এ্যাডভোকেট সৈয়দ কাওসার আহমদ, এ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তালুকদার প্রমুখ।
এ ব্যাপারে বাদী পক্ষের আইনজীবি মুহাম্মদ তাজ উদ্দিন বলেন, আদালত অভিযোগ তদন্তের জন্য ৩ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সমন্বয়ে কমিটি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।