পিলখানার ঘটনার সাথে হাসিনা সরকারের সম্পৃক্ততা আছে

শহীদ সেনা দিবসের অনুষ্ঠানে সাদেক হোসেন খোকা

২০ দলীয় জোট ক্ষমতায় গেলে পিলখানার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে বিচার করা হবে

বক্তব্য রাখছেন সাদেক হোসেন খোকা। ছবি-এনা।
বক্তব্য রাখছেন সাদেক হোসেন খোকা। ছবি-এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা: পিলখানার নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। যে কারণে তারা এই হত্যাকান্ডের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করছে না। পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচার পেতে হলে এই দখলদার সরকারকে হটাতে হবে। এই দখলদার এবং ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটানোর পর যদি নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচার করা হবে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ( নিউইয়র্ক সময়) জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ আয়োজিত শহীদ সেনা দিবসের সেমিনারে বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এবং সাবেক মন্ত্রী সাদেক হোসেন খোকা এ কথা বলেন। হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্টের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং জাহিদ জামিলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে আরো উপস্থিত ছিলেন মন্ট্রিয়েল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. আবিদ বাহার, ভাসানী ফাউন্ডেশন ইউএসএ’র সভাপতি দেওয়ান শামসুল আরেফীন খান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য আনিসুজ্জামান খোকন, আবু সামিয়া, আলী ইমাম, খন্দকার ফরহাদ, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, পিলখানার মত নৃশংস ঘটনা শুধু বাংলাদেশ কেন পৃথিবীর ইতিহাস ঘাটলেও এমন ঘটনার নজির আর দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না। ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে, সেকেন্ড ল্যাফটেনেন্ট থেকে শুরু করে মেজর জেনারেল র‌্যাঙ্কের ৫৭ জন অফিসারকে রাজধানী ঢাকা শহরে কী নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তার বিবরণ বিভিন্ন সময়ে এবং এখানে ভিডিও প্রদর্শনীর মাধ্যমেও আপনাদের দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, এই নৃশংসতা বিচ্ছিন্ন কোন জনপদে হয়নিÑ যেখানে হয়ত লোক পাঠানো বা সৈন্য পাঠানো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার ছিলো। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এবং সাভার ক্যান্টনমেন্ট ঢাকা শহরের পিলখানায় পৌঁছাতে আধা ঘন্টা থেকে ৪৫ মিনিটেরও পথ নয়। সেখানে সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলো। অর্থাৎ সেনা অফিসারদের যাতে হত্যা করা যায়, সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিলো। সুতরাং যে কোন বিবেচানায় এটা বলা যায়, এই হত্যাকান্ড পরিকল্পিত হত্যাকান্ড এবং এখানে সরকারের প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ছিলো। ইতিমধ্যেই আপনারা জেনেছেন যে, সরকারের একজন সংসদ সদস্য (ঐ এলাকার) তার সাথে বিডিআরের সদস্যরা নাকি বিভিন্ন সময়ে তাদের অসোন্তষের কথা জানিয়েছেন। তাহলে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে তিনি অসোন্তষের কথা শুনে তাদেরকে উস্কানি দিয়েছেন? তার কী দায়িত্ব ছিলো না বিষয়টি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা? এই ঘটনাটা ঘটে যাবার আগেই এর একটা নিষ্পত্তি ঘটানো? তাছাড়াও ডিজিডিএফআইসহ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে। এই রকম একটি নৃশংস ঘটনা ঘটে গেল বা ঘটে যেতে পারলো এখানে সরকার কিছুই জানলো না, কিছুই বুঝলো না, শুধু মাত্র তাদেরকে সময়ই দিয়ে গেল যাতে তারা হত্যাকান্ডগুলো সংঘঠিত করতে পারে। । তিনি বলেন, আপনারা জানেন গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সারা পৃথিবী প্রত্যাখ্যান করেছে কিন্তু ভারতের তৎকালীন সরকার তার পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংকে পাঠিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উপর চাপ প্রয়োগ করে প্রহসনের নির্বাচন করে। সে জন্য আজকে বর্তমান সরকার ভারতের তাবেদার সরকার। বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের প্রতি তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, কিন্তু ভারতের স্বার্থেই কাজ করছে। তার চিন্তা, চেতনায় শুধুই ভারত। তিনি আরো বলেন, আজকে বাংলাদেশে টানা ৫৫ দিন অরবোধ চলছে, এটা উপমহাদেশের ইতিহাসে বিরল। যারা টানা এই সংগ্রাম করছেন তাদের প্রতি আমরা কীভাবে কৃতজ্ঞতা জানাবো, তাদের দেশপ্রেম বোধকে শ্রদ্ধা জানাবোÑ সেটা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এতজন সেনা বাহিনীকে হারাতে হয়নি। তিনি বলেন, হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে যদি কখনো আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারি, আমাদের প্রধান দায়িত্ব হবে পিলখানার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে প্রকৃত দোষিদের জনসম্মুখে হাজির করা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আমি এই অঙ্গীকার করছি।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে পিলখানার ঘটনায় যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন ফজলুল করিম।