পিলখানা ট্যাজেডি : কুলাউড়ার লে. কর্ণেল সাজ্জাদুর রহমান এখনো স্মৃতিতে অম্লান

আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই

sazzad army.1মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার : আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই বলে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে নিহত লে.কর্নেল সাজ্জাদুর রহমানের মা লুৎফুরন্নাহার। লে. কর্ণেল সাজ্জাদুর রহমান দোয়েল কুলাউড়া উপজেলার পৌর শহরের বিহালা গ্রামের ডাঃ শফিকুর রহমান‘র পুত্র বিডিআর সদর দপ্তরে কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে থাকতেন। গত ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী এইদিনে যে ৫৭জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন তাদের মধ্যে লে. কর্ণেল সাজ্জাদুর রহমান দোয়েল অন্যতম। বিদ্রোহের প্রায় ৫৮ ঘন্টা পর তার লাশ উদ্ধার করা হয় পিলখানার সদর দপ্তরের ভেতরে একটি গণকবর থেকে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানার দরবার হলে বিদ্রোহকালে তিনি প্রথমে নিখোঁজ হন। তাঁর স্ত্রী শারমিন নিশাত উর্মি জানান- ঘটনার দিন বুধবার বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে লে. কর্ণেল দোয়েল মুঠোফোনে তাঁকে বলেন, ‘আমি ভালো আছি চিন্তা করো না’। এ কথা বলে তিনি লাইন কেটে দেন। পরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। এর কিছু সময় পর বিডিআর জওয়ানরা তাঁদেরকে আটক করে ফেলে। পরদিন বৃহস্পতিবার ২৬ ফেব্রুয়ারি তাঁদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁদের দুই ছেলে মোঃ মোহতাছিন ইত্তেছাফ আদমজি কেন্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এ বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ও মোঃ তাওসীফ ইশফাক একই প্রতিষ্টানের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র। ওই নারকীয় হত্যাকান্ডের বিচার ব্যবস্থায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে নিহত লে. কর্ণেল সাজ্জাদুর রহমান দোয়েলের মা লুৎফুন্নাহার (৬৫) হাউমাউ করে কেঁদে বলেন- ‘আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই’। পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত। ঘটনার পরিকল্পনাকারি ও ইন্ধনদাতারা আজো ধরাছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারী লে. কর্ণেল সাজ্জাদুর রহমান দোয়েলের বড় ছেলে মোঃ মোহতাছিন ইত্তেছাফ এর সাথে আলাপকালে সে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়- আমি আমার বাবার প্রকৃত হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। এ দিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার উদ্যোগে শহীদ লেঃ কর্ণেল সাজ্জাদুর রহমানের স্মরণে পৌরশহরের বিহালা গ্রামের তার বাড়ির সামনের সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে শহীদ লেঃ কর্ণেল সাজ্জাদুর রহমান সড়ক’। এই পথে চলতে গিয়ে স্থানীয় লোকজন এখনো শহীদ সাজ্জাদের অতীত স্মৃতি রোমন্থন করেন গভীর শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায়। উল্লেখ্য, লেঃ কর্ণেল সাজ্জাদ ১৯৮৬ সালে ক্যাডেট হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার বিহালা গ্রামের বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবেক সাব লেঃ (অনারারী) ডাঃ শফিকুর রহমানের ও লুৎফুন্নাহারের ছেলে। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।