মহান ভাষা আন্দোলনের আতুর ঘর ছিলো সাহিত্য সংসদ

সাহিত্য সংসদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় ভাষা সৈনিক প্রফেসর আব্দুল আজিজ

kemusas picসুরমা টাইমস ডেস্কঃ কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সভাপতি প্রখ্যাত ভাষা সৈনিক ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর মো. আব্দুল আজিজ বলেছেন, ভাষা আন্দোলনের কোন ক্ষেত্রেই সিলেটের অবদান নগন্য ছিলোনা। ভাষা আন্দোলনের আতুরঘর ছিলো মুসলিম সাহিত্য সংসদ। সিলেটের মুসলিম সাহিত্য সংসদ থেকেই ভাষা আন্দোলনের সুচনা হয়। ভাষা আন্দোলন না হলে আজকের বাংলাদেশের সৃষ্টি হতোনা। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি। এই ভাষার জন্য যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হবে।
দেশের প্রাচীনতম সাহিত্য প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। গতকাল শুক্রবার নগরীর দরগাহ গেইটস্থ কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাহিত্য আসর কক্ষে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর মো. আব্দুল আজিজ আরো বলেন, প্রত্যেক জাতিই তাদের মুখের ভাষাকে সম্মান করে। অথচ এই ভাষাকেই আমরা যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারছিনা। তিনি বলেন, সিলেটের মহিলারাও ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগেই ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিলো।
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক বিশিষ্ট লেখক প্রফেসর নন্দলাল শর্মার সভাপতিত্বে ও সংসদের পাঠাগার সম্পাদক প্রভাষক কবি নাজমুল আনসারীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংসদের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আজিজুল হক মানিক।
সাহিত্য আসরের নিয়মিত লেখক কবি কামাল আহমদের পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সহ সভাপতি প্রবীন আইনজীবি এডভোকেট আজিজুল মালিক চৌধুরী, আ.ন.ম শফিকুল হক, কবি আবদুল বাসিত মোহাম্মদ, গল্পকার সেলিম আউয়াল, সহ সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী, গবেষক রুহুল ফারুক, এডভোকেট কবি কামাল তৈয়ব, অধ্যাপক কবি বাছিত ইবনে হাবীব, সংসদের কার্যকরী পরিষদ সদস্য আহমদ মাহবুব ফেরদৌস, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক এডভোকেট আবদুস সাদেক লিপন, কোষাধ্যক্ষ ছয়ফুল করিম চৌধুরী হায়াত, কার্যকরী পরিষদ সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ তাহের প্রমুখ।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশ গ্রহণ করেন সিরাজুল হক, আমিনা শহিদ চৌধুরী মান্না, সৈয়দ মুক্তদা হামিদ, মামুন হোসেন বিলাল, জালাল আহমদ জয়, এহসানুল করিম কাউছার, বাহারুল ইসলাম বাহার প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্যে আজিজুল হক মানিক বলেন, বাংলা ভাষার পক্ষে দেশের প্রথম একমাত্র মুখপত্র ছিলো প্রাচীনতম সাহিত্য পত্রিকা আল ইসলাহ। বাংলা ভাষা আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। সকলে মিলে এই স্বীকৃতির মানকে বজায় রাখতে হবে। বাংলা ভাষার সঠিক ইতিহাস সকলকে জানতে হবে।
প্রবীন আইনজীবি এডভোকেট আজিজুল মালিক চৌধুরী বলেন, বিশ্বের ১৮৮টি দেশে বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিকভাবে পালন করা হচ্ছে। এই মাতৃভাষা দিবসের অনেক তাৎপর্য রয়েছে। বাংলা ভাষার চর্চা আমাদেরকে বাড়াতে হবে।
আ.ন.ম শফিকুল হক বলেন, ভাষা আমাদের জাতির মূল সত্ত্বা। এই ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য অনেক সংগ্রাম আন্দোলন হয়েছে। যারা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে লড়াই করে শহীদ হয়েছেন তাদেরকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করতে হবে। বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সিলেটের মনীষীদের রয়েছে গৌরবজনক অবদান ।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর নন্দলাল শর্মা বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারীকে একসময় আমরা শোকের দিন হিসেবে পালন করতাম। সেই শোকের দিন আজ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বাংলা ভাষা আজ বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে দাড়িয়েছে। বাংলাভাষায় কথা বলে বাঙালি হিসেবে আমরা গর্বিত।