জাপার নিয়ন্ত্রণ তৃতীয়পক্ষের হাতে

gm-kaderসুরমা টাইমস ডেস্কঃ জাতীয় পার্টিকে দল, দেশ ও জাতির কথা বিবেচনা করে দ্রুত মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করা উচিৎ। দল সেটা চাইছেও। কিন্তু যারা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা সংসদ সদস্য হয়েছেন তারা যদি পার্টির প্রধানের কথা শুনছেন না। তাহলে তারা কার কথা শুনছেন? পার্টির এ ধরনের ব্যক্তিদের নেতৃত্ব কে দিচ্ছে? তাহলে জাপার নিয়ন্ত্রণ তৃতীয় পক্ষের হাতে! এমন বক্তব্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের।
সম্প্রতি তিনি দলের বর্তমান অবস্থা, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট মুহূর্তে প্রধান দুটি দলের অবস্থান, উত্তরণের জন্য সম্ভাব্য করণীয়সহ নানা বিষয়ে একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে খোলা কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পোর্টালটির স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মোস্তফা ইমরুল।
জাপার বর্তমানে সাংগঠনিক অবস্থা কী?
এখন খুব নাজুক মনে করছি।কেননা সাংগঠনিক মানে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নয়,কার্যকর কমিটি গঠন করতে হয়। কিন্তু এখন যে কমিটিগুলি করা হচ্ছে তার বেশিরভাগই পকেট কমিটি বা সিলেকটেট এবং ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর করা হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির উদ্দেশ্য কী আর তারা কোন পথে যাবে সেটার ওপরেই কমিটির একটি ভূমিকা থাকে। জাপার সামনে দুটি পথ আছে। একটা হলো মসৃণ যেটা একটা গর্তের মধ্যে পড়বে।আর একটা কঠিন পথ যেটা রাজপ্রাসাদে যাবে।
আমি যতটুকু দেখতে পাচ্ছি কঠিন পথে তাদের যাওয়ার কোন মনোভাব দেখতে পাচ্ছি না।
১৯৮৬ সালে যখন জাতীয় পার্টি গঠন করা হয় তখন বুদ্ধিজীবী বা দেশের রাজনৈতিক মহলে একটা মোটামুটি এই ধরনের ধ্যান ধারণা ছিল যে, একটা গণবিচ্ছিন্ন বা অবৈধ সরকারকে বৈধতা দেয়া। এটাই তাদের প্রধান কাজ। এই বৈধতা দিয়ে তাদের শাসনামলকে প্রলম্বিত করা দীর্ঘতর করা,স্থায়ী করা। এটাই তাদের মতি।
কিন্তু এটি একটি গণভিত্তি পেয়েছে। এই দলের শিকড় সাধারণ মানুষেরে মনের ভিতর চলে গেছে।
এরপর থেকে সকল নির্বাচনেই জাপা একটি নিয়ামকের ভূমিকা পালন করেছে। জাতীয় পার্টি যেদিকে গিয়েছে সেই দলটিও বিজয়ী লাভ করে সরকার গঠন করেছে। যার কারণে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জাপা তুরুপের তাসের মতো ব্যবহৃত হয়েছে।দুটি দলই ক্রমান্তয়ে এটাকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেছেন তাই তারা এটাকে ধ্বংস করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছেন।যে সরকারই এসেছেন তারাই জাপার প্রতি সত্যিকার অর্থে সুবিচার করেননি।
এরপর জাপা শুধু একটি গ্রহণযোগ্য দল নয়,জাতীয় রাজনৈতিতে জাপা নিয়ামক শক্তি বা রাজনীতিতে বিচরণ করছে পরিপ্রেক্ষিতে এখন বর্তমানে এসে ২০১৪ এর নির্বাচনের পর সেই অর্জনটা খরচের খাতায় চলে গিয়ে আমরা সৃষ্টিমূলে যে অবস্থায় ছিলাম সেই অবস্থায় চলে গেলাম। এখন সাধারণ জনগণ বা বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর মনে আবার সেই ধারণা যে, কোনো সরকারকে বৈধতা দেয়ার, তাদেরকে প্রলম্বিত করবার,তাদের শাসনকালকে স্থায়ী বা চিরস্থায়ী করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ধরনের সরকারের পরিবর্তনের সাথে সাথে দলটির অস্তিত্ব সঙ্কট হতে পারে।
আমার ব্যক্তিগত মতে জাপার সামনে এখন দুটি পথ খোলা আছে-একটি পথ হলো সরকারকে সব ধরনের সহায়তা করে তাদের ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করা,সরকারের সব ধররেন সুযোগ সুবিধা নিয়ে বেঁচে থাকা। কিন্তু সেখানে একটা সমস্যা হলো সেখানে জাপার নিজস্ব কোনো রাজনীতি থাকবে না।তারা তাদের স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে টিকতে পারবে না এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত গিয়ে তার অস্তিত্ব সঙ্কট দেখা দেবে।
অপরদিকে আরেকটি পথ হলো সত্যিকার অর্থে সরকারের বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া এবং বিরোধী কণ্ঠকে বা মানুষের ক্ষোভ ও হতাশাকে ধারণ করে সরকারের সাথে সংগ্রাম করা।তাদের অধিকার অর্জনের জন্য কাজ করা।সেখানে সরকারের বাইরে থেকে সত্যিকার অর্থে প্রতিপক্ষ হিসেবে তাদেরকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হবে।
কী করতে পারলে জাতীয় পার্টি নিয়ে মানুষের ইদানীংয়ের ভুল ধারণা দূর করা সম্ভব?
সরকারের বিরুদ্ধে যেগুলো সত্য কথা সেগুলো বলতে পারলে, সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে তাদের অন্যায় কাজগুলো থেকে বিরত রাখার যে ধরনের কাজ করার দরকার সেটা যদি তারা করতে পারে তবেই জনগণ আস্থায় নেবে। ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণ তাদের গ্রহণ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে জাপাকে দেখবে না।
রওশন এরশাদ বলেছেন,জাপা শিগগিরই মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবে। আবার চেয়ারম্যান বলেছেন, এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। আসলে কার কথা ঠিক?
দুইজনের কথাই ঠিক।কবে পদত্যাগ করবে তা বলা যাচ্ছে না।এসব কাজের জন্য নিয়ম হচ্ছে পার্টির প্রেসিডিয়াম বৈঠক বা কোনো মিটিংয়ে তুলবে আলাপ আলোচনা করবে তারপরে চেয়ারম্যান সাহেব তার মৌখিক নির্দেশনা দিবেন। কেউ যদি সরাসরি এই নির্দেশটা দিয়ে থাকেন তা আমাদের পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সঠিক হয়নি। কাজেই এরশাদ সাহেব যে বলেছেন, উনি (রওশন)এই ঘোষণা এভাবে দিতে পারেন না এটাও রাইট। তবে রওশন এরশাদ যে ঘোষণা দিয়েছেন তাতে যে এরশাদ সাহেবের অমত আছে সেটাও মনে করার কোনো কারণ নেই।পার্থক্যটা হলো এখানে যে প্রসিডিউরলি দিস ইজ ইনকালেক্ট।
চলতি বছরেই কি পদত্যাগের সিদ্ধান্তটি আসবে,নাকি দেরি হবে আরও?
ঘোষণাটি নির্ভর করছে যারা জাপার দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যটা কী। তারা কি জাপার কল্যাণ করতে চান? দেশের মানুষের কল্যাণ করতে চান নাকি নিজের কল্যাণ করতে চান।
তবে আমার মত খুবই পরিষ্কার যে, তাৎক্ষণিক এটা করা দরকার। সরকারের কাছ থেকে কোনো প্রকার সুযোগ সুবিধা নেয়া উচিৎ না।এটা আমি বারংবার বলেছি। যারা এসব কিছুর সাথে জড়িত হয়েছেন তারাতো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জড়িত হননি।চেয়াম্যান সাহেব তাদের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন যে, নির্বাচন করা যাবে না। জাপার অধিকাংশই নেতাই একমত হয়ে নির্বাচন বর্জন করেছিল।
যারা নির্বাচন করেছেন এবং সেই কারণে নেতৃত্বে আছেন তাদের একটা মতামতের গুরুত্ব এখানে আছে। পাশাপাশি যারা নির্বাচন করেননি তাদের সবার মতামত যে এটা থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ এবং কাজ করলেও বিরোধী দলের ভূমিকায় কাজ করা উচিৎ বলে আমি যতটুকু জানি। তাই যারা দায়িত্বে আছেন তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষ অনেকটা সন্দিহান।
আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি জাপার মন্ত্রীরা কেউ পদত্যাগ করতে চান না।
উনারা স্যার বললেও করবে না ম্যাডাম বললেও করবে না। কোনকিছুতেই করবেন না । তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে জাতীয় পার্টি নিয়ন্ত্রণ করছে কে? যারা মন্ত্রী হয়েছেন বা সংসদ সদস্য হয়েছেন তারা যদি পার্টির প্রধানের কথা না শোনেন তাহলে তারা কার কথা শুনছেন সেটাও বুঝতে হবে।পার্টির এ ধরনের ব্যক্তিদের নেতৃত্ব কে দিচ্ছে? বিষয়টি আমি খুলে বলতে চাই না কারণ এটা তো বোঝাই যাচ্ছে। উনাদের কথায় বোঝা যাচ্ছে তারা তাদের নেতৃত্ব না মানার অর্থ হলো তারা অন্য কারও নেতৃত্ব মানছেন।তাই পার্টিটা কোনো জায়গা থেকে হাইজ্যাক হয়েছে কি না সেটাও প্রশ্ন আসে? তাছাড়াও জাপার একটি অংশ যে হাইজ্যাক হয়ে গেছে সেটাও তো বোঝাই যাচ্ছে।
রওশন এরশাদের রাজনৈতিক উপদেষ্টাকে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত নিয়োগের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
সরকার যে কাউকে অফার করতে পারে এবং সে যদি যেতে চায় তাতে অপরাধের কিছু নেই। দেখার বিষয় এই যে তাকে কেন করলো? যেহেতু প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবেই বিষয়টি দেখেন তাই জাপার পক্ষ থেকে এমন কারও মাধ্যমে সুপারিশ করা হয়েছে যার কথা উনি শোনেন।এই বিষয়টিকে খারাপভাবে ভালোভাবে দেখার কিছুই নাই। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রধানমন্ত্রী যাকে যেখানে দরকার মনে করেন দিতে পারেন।
আপনি কি মনে করেন জাপা গত এক বছরে সত্যিকারের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে?
না, আমি মনে করি না।কোনক্রমেই মনে করি না। আমি বারংবার বলেছি বর্তমানে জাপার যে পরিস্থিতি তাতে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা সম্ভব নয়। কেননা সাংবিধানিক ভাবে এটা সাংঘর্ষিক। গত এক বছরে তারা কোনো ‘না’ ভোট দেয়নি বলে আমি শুনেছি।কাজেই এ ধরনের বিরোধী দলকে নাম ছাড়া কোনো মাপকাঠিতেই বিরোধী দল বলা যায় না।
দলীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডিয়ামদের ডাকা হয় না বলে অনেকের অভিযোগ।
প্রেসিডিয়ামদের সব ব্যাপারে ডাকতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যেটা শৃংঙ্খলামূলক সিদ্ধান্ত তার ব্যাপারে পার্টির চেয়ারম্যানকে একটা পাওয়ার দেয়া আছে। এটা প্রত্যেক দলেই আছে।যেহেতু পার্টির গঠনতন্ত্রটা আমিই তৈরি করেছিলাম তাই সেখানে তাকে সবকিছুর বাইরেও একটা পাওয়ার দেয়া আছে যে তিনি যেকোনো কাউকে নিতে পারেন আবার তাকে যেকোনো পজিশন দিতেও পারেন।
আমাদের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, প্রেসিডিয়ামের আলোচনা সাপেক্ষে চেয়ারম্যানের কোনো চিঠি দেয়া ছাড়া অন্য কোনো দলের সরকারের মন্ত্রী বা কোনো কিছুর মর্যাদা নিতে পারবে না। আর নিলেই তার প্রাইমারি সদস্যপদ বাতিল বলে গণ্য হবে।সে হিসাবে জাপার যারা মন্ত্রী হয়েছেন আমার জানাতে তাদের কেউই চেয়ারম্যানের কোনো লিখিত অনুমতি নেননি। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানও প্রেসিডিয়ামে কোনো আলাপ করেননি।
কাজেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের কারোরই প্রাথমিক সদস্য পদ থাকে না। তাদের প্রাথমিক সদস্য পদ না থাকলে মন্ত্রিত্বও থাকার কথা নয়। আর এটা না থাকলে তাদের পুনরায় টেকনোক্রেট মন্ত্রী করে নিতে হয়। কাজেই আইনের কথা ধরলে জাপায় যে আইনগুলি এখনও আছে সেই অনুযায়ী অনেক কিছুই করা যায় আবার যাচ্ছে না।আইনগত ভাবে যায় কিন্তু যেকোন কারণে তা যাচ্ছে না।জাপার নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যানের হাতে আছে বাহ্যদৃষ্টিতে সেটা দেখা যায় না।
তার মানে কি কার্যত পার্টির গঠনতন্ত্র বলে কিছু নেই?
না, গঠনতন্ত্র আছে কিন্তু মানার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি দেয়া হচ্ছে না।
দেশের সঙ্কট নিরসনে দুই দলকে জাপার পক্ষ থেকে আলোচনায় বসতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে জাপা কোনো উদ্যোগ নেবে কি না?
তারা (বিএনপি) এখন প্রধান বিরোধী দল।যাদের সরকারের সঙ্গে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে তারাই মূলত বিরোধী দল। বিরোধী দল তারাই এবং সঙ্কট যে বিষয়ে তৈরি হয়েছে সেটা খুবই খাঁটি কারণ। তাদের যেটা দাবি ছিল সুষ্ঠ নির্বাচনের দাবি আর সেই দাবিতেই তারা সংগ্রাম করেছিল। তাদের সেই সংগ্রামকে দমন করে সুষ্ঠু নির্বাচন না করেই একটা সরকার গঠন করা হয়েছে।তারা পুনর্গঠিত হয়ে আবার সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সংগ্রাম করছে।এই পর্যায়ে দেশ এখন আছে। তারা কিন্তু বলছে না যে আমাদের ক্ষমতা দাও। তারা বলছে আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।
যেখানে সরকার প্রথম থেকেই সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি এ কথাটাকে গ্রহণ করতে চাইছে না এবং জোর করে এটাকে চাপিয়ে দিতে চাইছেন। তখন এই সঙ্কটের সমাধান শান্তিপূর্ণভাবে হওয়ার আর কোনো উপায় নেই।তাই যারা আন্দোলন করছেন তাদেরও কিছুই করার নাই।তারা আগেও বলেছে এখনও বলছে আর তারা যা বলছে তাদের দাবিটা যৌক্তিক বলে আমি মনে করি।তাদের কথাটা ন্যায়সঙ্গত এবং কথার মাঝে জনগণের সমর্থন আছে।
দুই দলেরই কিছু কিছু করে দাবি মেনে নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে যাতে ভবিষ্যতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়।আর এ বসাটা জাপা বললেও হবে না কেউ বললেও হবে না।এজন্য সরকারকে নিজেই এগিয়ে আসতে হবে। সরকার হয়ত মনে করছে তারা শক্তিশালী পর্যায়ে আছে কিন্তু বিরোধী দল যে কথাটা আসছে তাদের সে কথাতো ন্যায়সঙ্গত এবং এটার মাঝে জনগণের সমর্থন আছে।যদি এ জিনিসটিকে এখন দমিয়েও দেয়া যায় তবু আমার আশঙ্কা ভবিষ্যতে কোনো না কোনো এক সময়ে যেকোন ফর্মে এটি আবার পুনরায় আসবে।
তার মানে কি দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে যাবে?
পরিস্থিতি এখন গৃহযুদ্ধের দিকেই যাচ্ছে। ধরা যাক সরকার এটিকে দমন করে ফেলল তখন আর সারফেস করতে পারছে না।কিন্তু মানুষের মাঝে অর্থনৈতিক সঙ্কট বাড়তে থাকবে, বেকারত্ব বাড়তে থাকবে,প্রতিরোধ বাড়তে থাকবে এবং এসবকে পুঁজি করে বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠন গড়ে উঠবে,তখন যদি সরকারকে তারা মোকাবেলা না করতে পারে তবে চোরাগোপ্তা মোকাবেলা করবে।একটা সময়ে গিয়ে দেশটা অকার্যকর দেশে পরিণত হবে।
সরকারতো সাবেক বিরোধী দলের কোনো দাবিকেই তোয়াক্কা করছে না।তাহলে দেশ কোন পথে যাবে?
জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকলে দেশের জন্য ভালো হবে না জনগণের জন্যও ভালো হবে না। এটাতে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখা। তাহলে আগামীর সংসদ নির্বাচনও হবে টিক মার্কা। যাকে টিক মারা হবে তাকেই শুধু নির্বাচিত করে আনা হবে। আর এভাবেই যদি চলতে থাকে তবে দেশে তা একশত বছরও চলতে থাকবে। আমাদের মতো দেশে এই পরিস্থিতি কখনই দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে আমার ধারণা। ফলে দেশ একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে আস্তে আস্তে তা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে এবং এটা কারও জন্যই মঙ্গল হবে না। যেহেতু সরকার শুনছে না তাই বলেতো লাভ নাই। শোনার মন মানসিকতা যদি কারও না থাকে তবে কাউকে শোনানো যায় না। জোর করাতে হবে হয়ত।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
এটা গণতন্ত্রের জন্য বড় ধরনের একটা হোঁচট। বেশিরভাগ জায়গা আগে সিডিউল ঘোষণা হয়েছে ফলাফল ঘোষণা হয়েছে। যেসব জায়গায় নির্বাচন হয়েছে বলে বলা হচ্ছে ওইসব জায়গায় ভোটার সংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম এবং ফলাফল যেটা দেয়া হয়েছে তাতে আমরা অভিযোগে শুনেছি, বেশিরভাগ জায়গায় প্রার্থী যাই হোক পাস করানো হবে এবং ভোট যাই পড়ুক ফলাফল সেভাবে ঘোষণা হবে এমন সিদ্ধান্ত ছিল। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা যতটুকু গণতন্ত্র ছিল তাও হারিয়েছি আর সেটাকে যদি পুনরায় অর্জন করতে পারি তবে হয়ত পারতে পারি। আর যদি এই অবস্থা চলতেই থাকে তবে গণতন্ত্রের কবর রচনা হবে।
আপনাদের আগের মত করে কেন পার্টির কোন প্রোগ্রামে ডাকা হয় না?
কে বলছে ডাকা হয় না, ডাকা হয়। পার্টির মধ্যে তো নির্দিষ্টভাবে শৃঙ্খলার অভাব আছে, নিয়মানুবর্তিতার অভাব আছে, নির্দেশনার অভাব আছে, পরিচয়ের অভাব আছে। আমরা কী এবং কী করতে চাচ্ছি, পার্টি কোন পথ যাবে এটা নিয়েও পার্টির মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে। পার্টির অধিকাংশ লোক এখন কঠিন পথটা বেচে নিতে চাইছে। তারা পার্টিকে সত্যিকার বিরোধী দল হবো রাজনীতি করবো। আবার কিছু লোক আছে যারা এখন পদ পদবী নিয়ে আছে তারা সুবিধাবাদী ভূমিকা পালন করছে।পার্টির মধ্যেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব এবং ঐক্যের অভাব সেখানে তো সভা সেমিনার করতে গিয়ে মারপিট লাগা ছাড়া তো কিছু হবে না। আর তারা যে প্রেসিডিয়াম সভায় যাচ্ছেন না সেটাও একটা কারণ হতে পারে। আর আমি যেটা বিশ্বাস করি আরেকজন সেটা বিশ্বাস করে না। সে যেটা করতে চায় আমি সেটাতে রাজি না। কাজেই বিশৃঙ্খল সৃষ্টির খুব সম্ভবনা আছে।
ম্যাডাম বলেছেন প্রতি নির্বাচনের আগেই পার্টি বিভক্ত হয়ে পড়ে।
উনি যা বলেছেন এটা শতভাগ ঠিক নয়। প্রতি নির্বাচনে জাপা বিভক্ত হয়নি। এ নির্বাচনে হয়েছে কিন্তু আগের কোনো নির্বাচনে হয়নি। যেমন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু শেখ হাসিনার সাথে যোগ দিয়েই দল ভাঙার চেষ্টা করেছে, নাজিবুর রহমান তার আগে করেছেন। এসব বিভক্তি ঠিক কোনো সময়েই তেমনভাবে হয়নি। সত্যিকার অর্থে সমস্যাসঙ্কুল বিভক্ত এবার হয়েছে এবং যেটার নেতৃত্ব দিয়েছেন রওশন এরশাদ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামসে বালুর ট্রাক রাখা হয়েছে তাদের কোনো সভা সমবেশ করার অনুমতিও দেয়া হচ্ছে না। ডিএমপি বলেছিল এ নিষেধাজ্ঞা অনির্দিষ্টকালের জন্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ তো সমাবেশ করলো। তাদের তো অনুমতি দেয়া হয়েছে। আপনি সরকারের এই আচরণকে কীভাবে দেখছেন?
এ সরকার নিজেকে দাবি করে যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার। আমি মনে করি যে, এই আচরণটাই মুক্তিযুদ্ধের আচরণের সবচেয়ে পরিপন্থি। সেটা হলো বৈষম্যমূলক আচরণ। বাঙালিরা মনে করতো যে বিহারীরা পাকিস্তানীরা আমাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করে। আমাদের সব জায়গায় পিছিয়ে হটিয়ে দেয়। এই সরকার শুধু নয় এর আগের সরকারও দেখেছি, এটা প্রবলভাবে আওয়ামী লীগ হলে এক ধরনের সুযোগ সুবিধা আর আওয়ামী লীগ না হলে আরেক ধরনের। এই ধরনের নীতিটা হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চরম অবমাননা।গণতন্ত্রের তো বটেই।
বিএনপির নেতাকর্মীরা সবখানেই বাধা পাচ্ছে। এ অবস্থায় তাদের কী করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
তারা আন্দোলন না করলে তাদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাবে। আমি মনে করি বিএনপি শেষ হলে হতে পারে, জামায়াত শেষ হতে পারে যারা আন্দোলন করবে তাদের অনেককে দমিয়ে দেয়া হতে পারে কিন্তু এ ধরনের আন্দোলন কখনও চাপা থাকে না। আবার এটি ভেসে উঠবে। তা ক্যানসারের মতো ভেসে উঠবে। তখন এটা আরও বিপদজনকভাবে উঠবে। তখন মানুষ চোরাগোপ্তা হামলা করবে। এখন তারা প্রতিবাদ করছে আপনি ধরছেন মারছেন আর তখন কে করছে কেন করছে বুঝতে পারবেন না ধরতে পারবেন না, তারা ট্রেন উড়িয়ে দেবে, বাসে আগুন দেবে, মানুষ ভুগবে, আর প্রতিবাদের এরকম ভাষা দেশের জন্য কারও জন্যই ভালো হয় না। দেশকে আমরা এ রকম প্রতিবাদের ভাষার দিকে ঠেলে দিচ্ছি কি না সেটাই প্রশ্ন।
দেশের বর্তমান সঙ্কট নিরসনে মধ্যবর্তী নির্বাচনই কি সমাধান? এ নির্বাচন দেশে শান্তি আনতে পারে কি?
অবাধ ও অংশদারিত্বমূলক যদি একটি নির্বাচন হয় অন্ততপক্ষে দেশের মানুষের জন্য শান্তি হবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা যদি শক্তিশালী করার চেষ্টা করি তাহলে শান্তিটা দীর্ঘস্থায়ী হবে। আর পুনরায় যদি ক্ষমতালিপ্সুর রাজনীতিতে চলে যাই তবে শান্তিটা আবার কিছুদিন পর বিঘ্নিত হতে পারে। তবে এটা ছাড়া দেশে আর শান্তির পথ নাই।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে আদালত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা কি বাকস্বাধীনতা হরণ নাকি আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ?
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করে কিছু বলাটা তার উচিত হয়নি। সত্যিকার অর্থে কী হরণ হবে আর কি হবে না আমি সেটা নিয়ে কিছু বলব না। এ বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে তাকে অতি মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে আমার ধারণা।
সবশেষ প্রশ্ন, পার্টির বিষয়ে আপনার কোনো মতামত নেয়া হয় কি না?
না হয় না, আমার কাছে কেন কারও কাছেই চাওয়া হয় না। বাস্তবে কোনো সময়েই নেয়া হতো না। এরশাদ সাহেব যেরকম সিদ্ধান্ত দেন পার্টি সেভাবেই চলে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তার সিদ্ধান্তটা লঙ্ঘন হওয়া শুরু হয়েছে । কিছু লোক মনে করেন কর্তৃত্ব অন্যখানে চলে গেছে।সব মিলিয়ে একটা জগাখিচুড়ি অবস্থা। আর এখানে পরামর্শের কোনো সুযোগও নেই।কেউ বলছে রওশন এরশাদ বললেও মানব না এরশাদ বললেও মানব না। জাতীয় পার্টিকে সাইনবোর্ড পার্টিতে রূপান্তর করার চেষ্টা হচ্ছে।