শুভ নববর্ষে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড়

মাধবকুন্ডে সাতার কাটছে পর্যটকরা। 
মাধবকুন্ডে সাতার কাটছে পর্যটকরা।

এম এম সামছুল ইসলাম, মাধবকুন্ড থেকে ফিরে:
প্রাকৃতীক সৌন্দর্যের অনুপম সৃষ্টি মাধবকুন্ড। মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের ধারা পতনের অবিরাম শব্দ সৃষ্টি করছে মায়াময় পরিবেশের। প্রকৃতী যেন বর্ণনার উপাচার নিয়ে সামনে দাঁড়ায়। পর্যটকদের জন্য উৎকৃষ্ট পর্যটন কেন্দ্র মাধবকুন্ড জলপ্রপাত। অপরূপ সৌন্দযের লীলাভূমি মৌলভীবাজারের (জুড়ী-বড়লেখা) উপজেলার মাধবকুন্ড জলপ্রপাত এবার নববর্ষে পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে । নববর্ষের সুযোগে সব ধর্ম-বর্ণের পর্যটকের আগমনে আনন্দ পুরিতে পরিণত হয়ে উঠেছে জলপ্রপাত ও আশপাশের এলাকা। পর্যটকদের আগমনে হাসি ফুটে উঠেছে মাধবকুন্ডের হোটেল-মোটেলসহ ছোট-বড় সব ধরনের ব্যাসায়ী মহলে। নববর্ষের ১ম দিন বৃহস্পতিবার মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে সরজমিনে গেলে দেখা যায়, সরু রাস্তায় গাড়ির দীর্ঘ লাইন। ওই দিন প্রায় অর্ধলক্ষাধিক পযটকের আগমন ঘটেছে। মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্মিত যানবাহন রাখার টার্মিনালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় সরু রাস্তার উপর যানবাহন রাখায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। হাজারও পর্যটককে অনেক দূরে গাড়ি রেখে হেটে যেতে হয় জলপ্রপাতের কাছে। সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞ অমান্য করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২’শ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় জলপ্রপাতের উপরে ও পাহাড়ে বিচরন করতে দেখা যায় অনেক যুবককে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পাহাড়ে উঠার পথগুলোতে পুলিশের পাহারা থাকার পরও গোপন ¯পট দিয়ে উপরে উঠে যায় পর্যটকরা। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাই। কিন্তু তারপরও পাহাড়ে উঠে পর্যটকেরা। গত বছরের ১৩ মার্চ এক তরুণী পাহাড় থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করে ও ৮ জুন জলপ্রপাতের পানিতে গোসল করতে নেমে এক সাথে ঢাকার তিন ছাত্রের করুন মৃত্যু হয়। জলপ্রপাতে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাওন ও আদনান জানান, আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি। কিন্তু রাস্তার যে বেহাল দশা তাতে অনেক পর্যটকের কান্তি নেমে আসে। সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা ছাত্র ইমন, সুমন ও মিলি জানায়, আমরা বছরের শেষদিন এখানে এসেছি এবং নববর্ষের দিন ও এখানে উদযাপন করছি। এখানে সরকারের পক্ষ থেকে আরো দৃষ্টিনন্দন করার ও নিরাপত্তা ও সতর্কতা অবলম্বনের জন্য গুরুত্ব দেওয়া দরকার। হবিগঞ্জ বৃন্দবন কলেজ থেকে আসা শিক্ষক অধ্যাপক অরুন চন্দ্র দাস জানান, রাস্তার যে বেহাল দশা তাতে পর্যটক কমবে। দ্রুত তা সমাধান করা দরকার। প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে অবিরাম ঝর্ণাধারা এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় বড়লেখা সদর থেকে প্রায় ১৫ কি: মি: সমতল ও পাহাড়ী আঁকাবাকা রাস্তার বেহাল দশা পযটকদের দুর্ভোগের প্রধান কারণ। রাস্তা ছোট হওয়ায় এ ভাবেই ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। সরু রাস্তা হওয়ায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। আর এই সুযোগে গাড়ির ড্রাইভাররা পর্যটকদের কাছ থেকে অধিক ভাড়া আদায় করছে। যুগ যুগ ধরে এ পাহাড়ী জলকন্যা সৌন্ধর্য ও ভ্রমনপিপাসু পযটকদের কাছে টানছে। বড়লেখা উপজেলার ৮ নং দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের গৌড় নগর মৌজায় পাথারিয়া পাহাড়ে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের অবস্থান। পাহাড়ি ছড়ার প্রায় ২’শ ফুট উপর থেকে যুগ যুগ ধরে গড়িয়ে পড়ছে পানি। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে প্রতি বছরের ন্যায় বছরের শুরুতে নারী-পুরুষ, শিশু ও বিদেশী পর্যটকের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত। ভ্রমনপিপাসু পযটকের জলপ্রপাতে এসছে ছবি তোলা, জলপ্রপাতের কুন্ডের পানিতে নেমে আনন্দে গোসল করতে দেখা গেছে। কয়েক যুগ ধরে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের অঝরধারা প্রবাহমান থাকলেও সত্তরের দশকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে এর পরিচিতি প্রকাশ পায়। জলপ্রপাত এলাকায় মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় রেষ্ট হাউস, পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে রেস্তুরা। বাংলাদেশের প্রথম ইকোপার্ক, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, আশপাশ এলাকার চা-বাগান ও পাহাড়ি টিলা দেশি- বিদেশী পযটক ও ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণীয় স্থান।