উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আ.লীগ বদ্ধ পরিকর : প্রধানমন্ত্রী

hasinaসুরমা টাইমস ডেস্কঃ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিমান বাহিনীকে আরো আধুনিক, কৌশলগতভাবে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আরো শক্তিশালী ও একটি দক্ষ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে পাঁচটি নতুন এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার, নয়টি বেসিক ট্রেনিং এবং ষোলটি কমবোট ট্রেনিং এয়ারক্রাপ্ট সংযোজন করা হবে। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী সকালে যশোরের বিএএফ একাডেমীতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) ফ্লাইট ক্যাডেট কোর্সের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভাষণ প্রদানকালে একথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। তিনি অনুষ্ঠানে ফ্লাইট ক্যাডেটদের মধ্যে ট্রফি, সনদপত্র ও ফ্লাইং ব্যাচ হস্তান্তর করেন।
প্রধানমন্ত্রী বিএএফ একাডেমীতে এসে পৌঁছলে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ান মার্শাল মোহম্মদ ইনামুল বারি ও বিএএফ একাডেমীর কমান্ড্যান্ট এয়ার কমোন্ডর এম সাঈদ হোসেন তাকে স্বাগত জানান।অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রিবর্গ, সংসদ সদস্যগণ, নৌবাহিনী প্রধান, কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ,স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং ফ্লাইট গ্রাজুয়েট ক্যাডেটগণ উপস্থিত ছিলেন।প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদ্যকমিশন প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতার নিরাপত্তর জন্য তাদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বিমান বাহিনীকে আরো আধুনিকায়ন করে একটি শক্তিশালী ও দক্ষ বাহিনী আমরা গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এবং এই বাহিনীর সদস্যদের উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছে। আমরা বিএএফ’র উন্নয়ন অব্যাবহত রাখতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান সরকার পাঁচটি নতুন এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার, নয়টি বেসিক ট্রেনিং এয়ারক্রাপ্ট, তিনটি ট্রান্সপোর্ট ট্রেনিং এয়ারক্রাপ্ট, দু’টি মেরিটাইম সার্স ও রেসক্যু হেলিকপ্টার ও ১৬ কমবোট ট্রেনিং এয়ারক্রাপ্ট ক্রয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তিনি বলেন, শিগগির এই সকল সামরিক যান বিমান বাহিনীতে সংযুক্ত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকরাই অসংখ্য বীরদের আত্মত্যাগে সমুজ্জ্বল বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। তাদের অনুসারি হিসেবে কষ্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ব এখন আপনাদের। সত্যিকার দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয় আপনাদেরকে এই মহান দায়িত্ব পালন অব্যাবহত রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাজে ও চিন্তা-চেতনায় বাংলার আকাশ মুক্ত রাখতে দৃঢ় প্রতিশ্র“তির প্রতিফলনের আহ্বান জানান। পাশাপাশি আপনাদেরকে স্বাধীনতা যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষের আত্মত্যাগে ও সংগ্রামের ইতিহাস মনে রাখতে হবে।শেখ হাসিনা সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরকে বিমান বাহিনীর ভবিষ্যৎ কর্ণধার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই বাহিনীর যৌগ্য উত্তরসুরি হিসেবে আপনাদেরকে গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহকর্মী এবং অধীনস্থদের কল্যাণকে অত্যন্ত গুরুত্ব ও সহানুভূতির সঙ্গে দেখতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, আপনারা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবেন।প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গৌরবোজ্জল ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, বিএএফ সদস্যরা প্রয়াজনীয় অস্ত্র ছাড়াই মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। সে সময় তাদের কাছে শুধুমাত্র একটি এ্যালোটি হেলিকপ্টার ডিসি-৩ এবং একটি অটার জঙ্গি বিমান ছাড়া আর কিছু ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সাহসী পাইলটরা বাংলাদেশের আকাশ সীমায় প্রবেশের মাধ্যমে প্রথম শক্রুদের স্থাপনার উপর প্রথম সফল অভিযান চালায়।তিনি বলেন, বিএএফ শুধুমাত্র একটি এ্যালোটি হেলিকপ্টার ও একটি এয়ারক্রাপ্ট দিয়ে ৪০টির বেশি সফল অভিযান চালায়। আমাদের পাইলটদের এটি ছিল একটি অসাধারণ দক্ষতা।
শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা সেক্টর কমান্ডারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছে। জাতি বিমান বাহিনীর সদস্যদের এই সাহসী অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণে রাখবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অবশ্যই একটি শক্তিশালী, পেশাদার ও আধুনিক বিমান বাহিনী দরকার।তিনি এ কথা বুঝতে পেরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্বল অর্থনীতি সত্ত্বেও স্বাধীনতার পরই একটি দক্ষ বিমান বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিমান বাহিনীর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিদেশ থেকে আধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখনি ক্ষমতায় এসেছে তখনি জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিমান বাহিনীর উন্নয়নে অবদান রেখেছে।
তিনি বলেন, আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিমান বাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান মিগ-২৯ এবং সি-৩০ পরিবহন বিমান ও উচচ ক্ষমতা সম্পন্ন এয়ার ডিফেন্স রাডার সংযোজন করেছি।শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর বিমান বাহিনীর উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন,বিমান বাহিনীতে এফ-৭ বিজি-১ যুদ্ধ বিমান, এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার, অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স মিজাইল সংযোজন করা হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটি ও কক্সবাজার বিমান ঘাঁটি একটি পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,প্রথম বারের মতো বিমান বাহিনীতে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র সংযোজন করা হয়েছে। জলসীমায় অর্থনৈতিক জোন নজরদারি করার জন্য কক্সবাজার উচচ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি এয়ার ডিফেন্স রাডার স্থাপন করা হয়েছে।তিনি বলেন, আমরা ঢাকায় ওভারহল প্লান্ট স্থাপন করেছি। বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে এ্যারোনটিক্যাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন থেকে আনা জেট ট্রেইনার কে-৮ ডব্লিউ বিমান ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য অত্যাধুনিক সুবিধাসহ বিমান বাহিনী একাডেমীতে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচেছ। পাশাপাশি জাতীয় ২০১০ এর আলোকে বিমান বাহিনী একাডেমীর অফিসার ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ জানুয়ারি মাস থেকে তিন বছরে উন্নীত করা হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার তিন বাহিনীর সদস্যদের পদ মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। চাকরির সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বিমান বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হচেছ। বিমান বাহিনীতে নতুন নতুন ইউনিট স্থাপনের ফলের জনবল বৃদ্ধি পাচেছ। পদোন্নতির পথ সুগম হচেছ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান বাহিনীর সদস্যরা জাতীয় নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচছ¡াসের ন্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচেছ। ২০৩০ এর আওতায় নতুন নতুন বিমান এবং হেলিকপ্টার যুক্ত হওয়ায় এ সকল কর্মকা- পরিচালনায় বিমান বাহিনীর সামর্থ্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচেছ।আজকের এই শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে মোট ৪২ জন ফ্লাইট ক্যাডেট অংশ নেন। এর মধ্যে ৭০ ফ্লাইট ক্যাডেট কোর্সের ২৭ জন এবং ১৪ এসএসসি ও এসপি এসএসসি থেকে ১৫ জন ফ্লাইট ক্যাডেট রয়েছেন। এদের মধ্যে ৬ জন নারী ক্যাডেটও রয়েছেন। এই মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজে নারী ফ্লাইট ক্যাডেটদের প্রাণবন্ত কুচকাওয়াজ দেখে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
ফ্লাইট ক্যাডেট উইং আন্ডার অফিসার ধ্র“বো সরকার সোর্ড অব অনার এবং কমান্ডেন্ট ট্রফি পান। ফ্লাইট ক্যাডেট সার্জেন্ট সঞ্জীত তরফদার চীফ অব এয়ার স্টাফ পান। ফ্লাইট ক্যাডেট মো: ইশতিয়াক নাফিজ চৌধুরী ফ্লাইয়িং একাডেমীতে সেরা পারফরমেন্সের জন্য লাভ করেন ‘ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ট্রফি ’ ট্রফি।