তাহিরপুর সীমান্তের বাঁশতলা থেকে ৮০ বস্তা ভারতীয় চোরাই কয়লা আটক

চোরাচালানের মুল হোতারা বিজিবির কাছে অধরাই রয়ে গেল

পাহাড়ি ছড়া নদী দিয়ে ভেসে আসা বাংলা কয়লা থেকে জয়ধর আলীর লোকজন পুলিশের নামে প্রতিটন কয়লায় আদায় করছে ১০০ টাকা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা থেকে বিনা শুল্ক নিয়ে আসা ৮০ বস্তা ভারতীয় চোরাই কয়লা বিজিবি আটক করেছে। এদিকে স্থানীয় আ’লীগের দু’নেতা ও এক নেতার তালিকাভুক্ত অস্ত্রচোরাকারবারী ছেলের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদে অবৈধভাবে গত ৬ মাসেরও অধিক সময় ধরে বিনা শুল্কে নির্ব্রিগ্নে ভারতীয় চোরাই কয়লার জমজমাট ব্যবসা চলে আসলেও বিজিবি অদৃশ্য কারনে এ চক্রের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা না নেয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে ৮-বর্ডারগার্ড ব্যাটলিয়নের চারাগাঁও বিওপির নায়েব সুবেদার মহসিন মিল্কির নেতৃত্বে সীমান্তের মেইন পিলার ১১৯৫ এর টেন-টি সাবপিলার এলাকার ১০০ গজ বাংলাদেশ অভ্যন্তর থেকে বিজিবির একটি টহল দল বিনা শুল্কে নিয়ে আসা ৮০ বস্তা (৪মে.টন) চোরাই কয়লার চালান আটক করলেও বিজিবি কোন চোরাচালানীকে আটক করতে পারেনি। এর ফলে এ কয়লা চোরাচালানের সাথে জড়িত মুল হোতারা বিজিবির কাছে শেষ পর্য্যন্ত অধরাই রয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীমান্তবর্তী এলাকার একাধিক ব্যাক্তি জানান, উপজেলার উওর শ্রীপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি জয়ধর আলীর মদদে তার অনুসারী এক সহযোগী ও তার ছেলে তালিকাভুক্ত অস্ত্রচোরাকারবারী নজরুল ইসলাম বাঁশতলা গ্রামের হাসিমের সহযোগীতায় গত ৬ মাসেরও অধিক সময় ধরে মেঘালয় পাহাড়ের মৃত্যুকুপ নামক কয়লা কোয়ারীতে রাতের আঁধারে শতাধিক শ্রমিক পাঠিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে বিনাশুল্কে চোরাই কয়লা এনে জমজমাট ভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিজিবির হাতে আটক কয়লার চালাটিও মুলত নজরুল হাসিমের ছিল বলে এলাকার লোকজন নিশ্চিত করেছেন। একই ভাবে বীরেন্দ্রনগর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকা লামাকাঁটা গ্রামের পেছনে মেইন পিলার ১১৯৪ এর টু-এস ও ১১৯৪ এর সিক্স-টির মাঝামাঝি এলাকা দিয়েও গত ৬ মাস ধরে একই কায়দায় জয়ধর আলীর আরেক ছেলে ফজলুর নিয়ন্ত্রনে লামাকাঁটা গ্রামের আব্দুল হাসিমের ছেলে ভারতীয় চোরাই মোটরসাইকেল চক্রের আরেক হোতা জামাল হোসেন ওরফে ল্যাংরা জামালের সহায়তায়তা রাধের আধারে শতাধিক শ্রমিক ওপারে পাঠিয়ে লাখ লাখ টাকার চোরাই কয়লা বিনা শুল্কে নিয়ে এসে নির্ব্রিগ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বাঁশতলা ও লামাকাঁটা এ দু’টি পয়েন্ট দিয়ে নিরাপদে চোরাই কয়লার ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নজরুল ও ফজলু তাদের কথিত দু’জন সোর্স দিয়ে এপারে আসা চোরাই কয়লার জন্য বিজিবিকে ম্যানেজ করার কথা বলে প্রতিবস্তা কয়লার জন্য ৫০ থেকে ৭০ টাকা করে আদায় করছে । অপরদিকে চোরাই পথে আসা কয়লা পিতার ক্ষমতাবলে তারা দু’ভাই নামমাত্র মুল্যে ক্রয় করছে। লামাকাঁটা ও বাঁশতলা এ দু’টি পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে মধ্যরাতে চোরাচালানের মাধ্যমে নির্ব্রিগ্নে কয়লা আসলেও স্থানীয় বিজিবির সদস্যরা অনেকটা নীরব দর্শকের ভুমিকাই পালন করে আসছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানিয়েছেন। কালেভদ্রে সিজারের (জব্দ) নামে বিজিবি যতসামান্য কয়লার বস্তা আটক করলেও রহস্যজনক কারনে চোরাচালানের মুল হোতারা থেকে যাচ্ছে পর্দার আড়ালে। চারাগাঁও শুল্কষ্টেশন, লালঘাট পশ্চিমপাড়া, বাঁশতলা, কলাগাঁও ছড়া এবং লামাকাঁটা পর্য্যন্ত পাহাড়িছড়া ও নদী দিয়ে যেসব কয়লা ভেসে আসে সেসব কয়লা (বাংলা কয়লা) থেকে থানা পুলিশের কথা বলে জয়ধর আলীর পক্ষ্যে তার ভাতিজি জামাই জিলানী তার সহযোগী একই গ্রামের চাঁনমিয়া , রজমজান প্রতিটনে ১০০ টাকা করে গত ৬ বছর ধরে চাঁদা আদায় করিয়ে আসছেন। তার ছেলে নজরুলও পৃথক হারে প্রতিমেট্রিকটন চোরাই কয়লার জন্য পুলিশের নামে চাঁদা আদায় করে আসছে। থানা পুলিশের নামে এভাবে গত ৬ বছরে বাংলা কয়লা থেকে কয়েককোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জয়ধর আলী ও তার লোকজন। এলাকার লোকজন অভিযোগ করে আরো বললেন, এসব বিষয়ে কেউ মুখ খোলার চেষ্টা করলে থানা পুলিশ কিংবা বিজিবি দিয়ে চাঁদাবাজি, মাদক, চোরাচালান সহ নানা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার জন্য অহরহ হুমকি ধামকি দিচ্ছেন জয়ধর আলী ও তার ছেলে নজরুল। জয়ধর আলী ও তার ছেলে নজরুলের কাছে জিম্মি হয়ে আছে সীমান্তের লালঘাট থেকে লামাকাঁটা পর্য্যন্ত সাত গ্রামের হাজারো সাধারন মানুষ। মিথ্যা মামলা হামলার ভয়ে এলাকার সাধারন মানুষ বাপ-বেটার গালি-গালাজ হুমকি ধামকিতে কয়লা চোরাচালান, নজরুলের অস্ত্রচোরাকারবার ব্যবসা, শামীমের অবৈধ পিস্তল দিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর গুলি বর্ষণের কথা, ও থানা পুলিশের নামে চাঁদাবাজি সহ নানা অপকর্মের কথা জানা থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না।
বাঁশতলা গ্রামের হাসিম বুধবার রাতে আটককৃত কয়লার চালানটি রাতে প্রথমে নিজের স্বীকার করলেও পরে গতকাল শুক্রবার এ চালানটি তার নয় বলে অস্বীকার করে বলেন, ঠুকঠাক (অল্প অল্প) কিছু কয়লার বস্তা বাঁশতলা দিয়ে আসে আর কে কয়লা কিনবে তার সিরিয়াল জয়ধর আলীর ছেলে নজরুল ঠিক করে দেয় মাঝে মাঝে নজরুলও এই কয়লা ( চোরাই কয়লা) কিনে।
বিস্তারিত জানিয়ে জয়ধর আলীর বক্তব্য জানতে গতকাল দুপুরে তার ব্যাক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কিংবা আমার কোন ছেলেই চোরাই কয়লার ব্যবসার সাথে জড়িত নই , আমরা এসব ব্যবসা করিনা, এসব কথা যারা বলে তারা আমার নামে মিথ্যাচার করছে তাছাড়াও থানা পুলিশের নামেও বাংলা কয়লা থেকে কোন ধরণের চাঁদা আদায় করা হয়না বলে জানান তিনি। উল্ল্যেখ যে, গত কয়েকদিন পুর্বে জয়ধর আলীর ভাতিজা শামীম অবৈধ পিস্তল দিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর তিন রাউন্ড গুলি করে আত্বগোপনে চলে যায়। এর আগে জয়ধর আলীর ছেলে নজরুলের নাম তালিকভুক্ত অস্ত্রচোরাকারবারী হিসাবে স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়নের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ-৮ বর্ডারগার্ড (বিজিবির) বীরেন্দ্রনগর বিওপির এ/কোম্পানীর কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার নুরুল ইসলাম বললেন, লামাকাঁটা দিয়ে কয়লা চোরাচালান হয় এটা আমার জানা নেই, বাঁশতলা দিয়ে চোরাই পথে কিছু কয়লা রাতে এসেছিল টহল দল তা জব্দ করলেও এসব চোরাই কয়লা কে বা কারা এনেছিল তাও জানতে পারিনি।