দীপঙ্কর নাথের আত্মহনন : আন্দোলনের মুখে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা

north east medical collegeসুরমা টাইমস ডেস্কঃ নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী দিপঙ্কর নাথের মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষকদের মনসিক নির্যাতনেই আত্মহননের পথ বেছে নেয় মেধাবী ছাত্র দিপঙ্কর। এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচীও পালন করছে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজেরে শিক্ষার্থীরা।
এ প্রতিষ্ঠানে প্রায়ই শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ, শনিবার নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজের ছাত্র দীপঙ্কর নাথ ঢাকার একটি আবাসিক হোস্টেলে আত্মহত্যা করেন।
জানা যায়, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ’র ১৪৩তম ব্যাচের ছাত্র দীপঙ্কর নাথ (২৪) কে ১৬ নভেম্বর দুপুর ১২টায় তিনজন শিক্ষক কমিউনিটি মেডিসিন রুমে নিয়ে ৪৫ মিনিট আটক করে রেখে মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। এরপর দীপঙ্কর কলেজ ক্যাম্পাস ছাড়েন। ঢাকায় গিয়ে আত্মহত্যা করেন। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ফকিরাপুলের হোটেল এরিনার ৩০২ নম্বর কক্ষ থেকে দীপঙ্করের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আত্মহত্যার খবর তার কলেজ প্রতিষ্ঠান নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজে পৌঁছামাত্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তারা নির্যাতনকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কমিউনিটি মেডিসিন তিনটা আইটেমের জন্য দীপঙ্করকে এসেসমেন্ট পরীক্ষায় বসতে দেয়া হয়নি। তিনটা আইটেমের জন্য লেকচারারদের পায়ে ধরাটাই বাকি ছিল তার। না, সময় হয়নি তাদের। ফাস্ট টার্মেও ৬মাস লস করেছিল দীপঙ্কর। ২য় টার্মের পরীক্ষায়ও তাকে বসতে দেয়া হয়নি। ফলে তার মোট লস হয় ১ বছর। অভিভাবকদের ডিপার্টমেন্টে ডেকে এনে তাদের সামনেই যা ইচ্ছে তাই অপমান করা হয়েছিল তাকে। যার জন্য দীপঙ্কর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় দীপঙ্কর।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ তিন দিন কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেন। একই সাথে শিক্ষার্থীদের দাবি পুরণের আশ্বাস দেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আরো জানান, দীপঙ্করের অকাল মৃত্যুর কারণ ও তার জন্য যারা দায়ি তাদের নাম প্রকাশসহ ৮টি দাবি পেশ করেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাদের দাবিগুলো পুরণের আশ্বাস দিলে তারা আন্দোলন তুলে নেন। তাদের দাবি পুরণ না হলে আবার লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর আইটেম, কার্ড, টার্ম ও প্র“ফ ও চারটি মাধ্যমের মধ্যে তাদের সিলেবাস সাজানো হয়। এ চারটি পরীক্ষায় শিক্ষকদের মনমতো মার্কস না পেলে শিক্ষকরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মানসিক নির্যাতন করেন। এ জন্য কমিউনিটি মেডিসিন সেন্টারকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অভিভাবকদের ডেকে এনে তাদের সামনেই শিক্ষার্থীদেরকে মানসিকভাবে অত্যাচার করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী জানান, হোস্টেল মেডিকেল কলেজ ও খরচাদিসহ তাদের প্রত্যেকজন ছাত্রের প্রতিমাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এ অবস্থায় ১টি বিষয়ে খারাপ করলে তাদের অনেক টাকা গুনতে হয়। যে হিসেবে নিহত দীপঙ্কর সর্বমোট ১ বছর পিছিয়ে পড়েন। যা তার উপ নির্যাতনই বলা যায়।
এদিকে এক বছর পিছিয়ে পড়ে শিক্ষক পরিবারের সন্তান দীপঙ্কর হতবিহবল হয়ে পড়েন। মানসিক হতাশায় তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
অপর একজন শিক্ষার্থী আরো জানান, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে শুধু টাকার খেলা। প্রুফ লস মানেই বিশাল টাকা। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত প্রুফ পরীক্ষা না দেয়ার সুযোগ নিয়ে দেন-দরবারের খেলায় মেতে ওঠেন। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, কমিউনিটি মেডিসিন সেন্টারের নিয়মিত টর্চার সেলে ডা. ফুয়াদ, ডা. নাঈম ও তনুশ্রী শিক্ষার্থীদের সাথে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, দুর্বব্যবহার ও মানসিকভাবে আঘাত করেন।
এ ব্যাপারে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজে এর কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক ডা. ফুয়াদ’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিহত দীপঙ্করকে কমিউনিটি মেডিসিন এ নিয়ে আসার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে তিনি বলেন, দীপঙ্করকে রুমে রেখে ওইদিন নির্ধারিত ক্লাসে চলে যাই। ওইদিন রুমে অপর দু’জন শিক্ষক ছিলেন বলে তিনি জানান। তবে তাদের নাম জানান নি।
এ ব্যাপারে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. শাহরিয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা পত্রিকায় আসার মতো কোনো ঘটনা না। এটার সাথে একটা প্রতিষ্ঠান জড়িত। এ ব্যাপারে সংবাদ পরিবেশন না করলেই খুশি হবো। আর পরিবেশন করলে মনে করবো তা আমার বিরুদ্ধাচারণ।’