গোয়াইঘাটের জলমহাল নিয়ে বিরোধ বন্ধ হয়নি পুলিশি হয়রানী

উর্ধ্বতন মহলে স্বারকলিপি প্রদান

হামলায় আহত যুবক।
হামলায় আহত যুবক।
হামলায় আহত যুবক।
হামলায় আহত যুবক।
হামলায় আহত বৃদ্ধ।
হামলায় আহত বৃদ্ধ।
হামলায় আহত দুই শিশু।
হামলায় আহত দুই শিশু।

সুরমা টাইমস ডেস্কঃ গোয়াইঘাটের থুবরী শিলচান জলমহালের ইজারা নিয়ে একের পর এক হামলায় আব্দুল মনাফ গংদের আহতদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। গতকাল নাছির উদ্দিন (৪০) নামে আরোও একজনকে আহত করে তিতু রঞ্জন গংরা। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়। এসব হামলা ও পুলিশি হয়রানী বন্ধ এবং জলমহালের ইজারা বাতিল ও জন্য উর্ধ্বতন মহলে স্বারকলিপি প্রদান করেছেন বীরকুলি গ্রামবাসী। গতকাল সিলেটের জেলা প্রসাশক , সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি, পুলিশ সুপার সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কার্যলয়ে এ স্বারকলিপি প্রদান করা হয়। স্বারকলিপিতে উল্লেখ করাহয়, গোয়াইনঘাট থানার তোয়াক্কুল ইউনিয়নের থুবরী শিলচান জলমহালের বিরোধকে কেন্দ্র করে বর্তমানে জাঙ্গাইল বীরকুলি গ্রামবাসী পুলিশি অত্যাচারে নিস্পেসিত। গ্রামের ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক থেকে শুরু করে সকল পেশার মানুষ এমনকি মহিলা ও শিশুরা পর্যন্ত গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের নির্মম নির্যাতনের শিকার। পুলিশ প্রতিদিন আমাদের গ্রামে অভিযান চালিয়ে নিরীহ মানুষ ও মহিলাদের গ্রেফতার করছে। পুলিশি ধরপাকড়ে আতঙ্কিত মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেনা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। দুধের শিশুকে বাড়িতে রেখে মা জেল কাটছেন। স্কুলছাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেথে ভয় পাচ্ছে। রোগিকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে পুলিশ গাড়ি চালককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই গ্রামবাসী প্রতিটা মুহূর্ত কাটাচ্ছেন পুলিশি আতঙ্কে। থুবরী শিলচান জলমহালটি ২০১২ইং সালে ৬ বছরের জন্য ইজারা গ্রহণ করে স্থানীয় মানাউরা প্রভাতী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। ২০১৩ সালে জলমহালটি স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি সাবেক মেম্বার আব্দুল মনাফ গংরা ৪০ লক্ষ টাকায় প্রভাতী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির কাছ থেকে সাব-লিজ মর্মে ক্রয় করেন। তখন সমিতির অন্যান্য সদস্য ও নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে টাকার লেনদেনও করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গ্রামের ময়বুর রহমান (বুলাই), ফয়জুল করিম (বছই), আমি রুশন আলী, বৌল গ্রামের press conparence picআফতাব উদ্দিন, পাইকরাজ গ্রামের তোতা মিয়া,আফতাব উদ্দিন,ফরিদ উদ্দিন, ইন্তাজ আলী মেম্বার প্রমুখ। তখন আব্দুল মনাফ সমিতির অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতি প্রস্তাব করেন জলমহালটি সাব-লিজের চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য। কিন্তু সমিতির সাধারণ সম্পাদক তিতু রঞ্জন চালাকি করে বলেন, জলমহাল নীতিমালায় চুক্তিপত্রের কোনো বিধান নেই। চুক্তিপত্র করলে সমিতির লীজ বাতিল হয়ে যাবে। এভাবেই চুক্তিপত্র না দিয়ে জলমহালটি আব্দুল মনাফ গংদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকেই জলমহালটির ভুগদখল করে আসছেন আব্দুল মনাফ গংরা। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো এ জলমহালটিতে কাঁটা, কোপা, মাছের খাদ্য, পাহারাদার নিয়োগসহ যাবতীয় রক্ষনাবেক্ষণ করে আসছেন আব্দুল মনাফ গংরা। গত ২ নভেম্বর জলমহাল থেকে মাছ সংগ্রহ করতে গেলে আব্দুল মনাফকে বাধা প্রদান করেন প্রভাতি সমিতির সেক্রেটারী তিতু রঞ্জন ও আমিরুল,আনোয়ার হোসেন, হেলাল, সামছুদ্দিন আল-আজাদ,আজ্জুল গংরা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে আব্দুল মনাফ গংদের পক্ষের দুই শিশুসহ ২০ জন আহত হয়। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সাবেক ইউপি সদস্য ইন্তাজ আলী মেম্বার ও ইশ্রাব আলী এখনও মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এ ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আমিরুল গংরা তিতু রঞ্জনকে দিয়ে আব্দুল মনাফ গংদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। আব্দুল মনাফ গংদের পক্ষে রুশন আলী বাদী হয়ে ০৪/১১/২০১৪ইং গোয়াইনঘাট থানায় পাল্টা মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলা দায়েরের পর থেকে পুলিশ রহস্যজনক কারণে একপেশে মনোভাব প্রদর্শন করছে। শুধু তাই নয় আব্দুল মনাফ গংদের উপর হামলা ও মামলা নৎসাত করতে ইতোমধ্যে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশকে দিয়ে পরিকল্পিত ভাবে পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করে। এই এসল্ট মামলাকে পুঁিজ করে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আমাদের আহত ব্যক্তিরা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়লেও এ নিয়ে থানা পুলিশের কোনো ভূমিকা লক্ষ করা যাচ্ছে না। এছাড়া আমাদের দায়ের করা মামলায় আসামি গ্রেফতার না করে বরং উল্টো আমাদের আহত লোকদের মারপিট করে থানা পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করে হয়রানি করা হচ্ছে। পুরুষশূণ্য বীরকুলি গ্রামে গত ৮ নভেম্বর রাত ৩টার দিকে মনির উদ্দিনের স্ত্রী ছালেহা বেগম ছেলে মেয়ে নিয়ে ঘুমন্ত ছিলেন। পুলিশের ডাক শুনে তিনি ভয়ে একাঘরের দরজা খুলতে চাননি। এতে পুলিশ আক্রোশ আন্বিত হয়ে উক্ত ঘরের দরজা ভেঙ্গে ছালেহা বেগমের ঘরে প্রবেশ করে ছালেহা বেগমকে মারপিট করে আহত করে। পুলিশের বন্দুকের আঘাতে ছালেহা বেগমের বাম হাতে মারাত্বক জখম হয়। পরে গোয়াইনঘাট হাসপাতালে নিয়ে ১২টি সেলই ও অল্প কিছু ঔষধ পত্র দিয়ে তাকে এসল্ট মামলায় আটক দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরন করে পুলিশ। অথচ এসল্ট মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে আটক ছালেহা বেগম পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গাড়ি থেকে পড়ে আঘাত প্রাপ্ত হন। সালেহা বেগমের দুধের শিশুরা তাদের মায়ের জন্য প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি করছে। ঐ দিন রাতে পুলিশ ছালেহা বেগমের পাশের ঘরের দুই স্কুলছাত্র ও মহিলাসহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। যাবার পথে কয়েক রাউন্ড ফাকা রাবার বুলেট ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে পুলিশ। পরবর্তিতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ এসল্ট মামলা ও সংবাদপত্রে গোয়াইনঘাটে মনাফ বাহিনীর হামলায় ওসিসহ ১৯ পুলিশ আহত শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, পরিকল্পিত ও বানোয়াট। এ সংবাদ দেখে আমরা পুরো গ্রামবাসী বিস্মিত ও হতবাক হয়েছি। ঐদিন পুলিশের সাথে কোনো ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। অথচ পুলিশ এসল্ট মামলায় বলে, আটক সালেহা বেগম, নাজমা বেগম ও মনির উদ্দিনের ৭ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেছে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ। এ মামলার পর থেকে পুলিশ মেতে উঠেছে ধরপাকড় বাণিজ্যে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের মামলায় ঢুকানোর ও গ্রেফতার করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। প্রকতৃ ঘটনা হচ্ছে মানাউরা প্রভাতি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতির নিকট থেকে থুবরী শিলচান জলমহালে সাব-লিজ গ্রহণ করেন আব্দুল মনাফ গংরা। জলমহালটি এক বছর ভোগ করার পর সমিতির সেক্রেটারী তিতু রঞ্জন ছল চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে জলমহালটি এলাকার নোয়াগাঁও গ্রামের আব্দুল মনাফের পুত্র প্রভাবশালী আমিরুল ইসলামের নিকট পুনরায় বিক্রি করে দেয়। এ নিয়ে আমিরুল ইসলামের সাথে আব্দুল মনাফের বিরোধ সৃষ্টি হয়। আমিরুল ইসলাম সকল নিয়ম কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে জোরপূর্বক জলমহালটি দখলে নিতে চায়। এ জন্য সে যা যা করা দরকার তার সবটুকু করছে। এলাকার স্বনামধন্য ব্যক্তি আব্দুল মনাফকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গায়েল করতে চায়। আব্দুল মনাফ সাবেক মেম্বার ও বিগত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তিনি বর্তমান ইউপি আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। তার এ জনপ্রিয়তা ধ্বস নামাতে বিভিন্ন পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন ও মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমিরুল তার নিজ গ্রামসহ অন্যান্য গ্রামের কতিপয় সন্ত্রাসীকে নিয়ে গড়ে তুলেছে একটি বাহিনী। এ বাহিনী এলাকার নিরীহ মানুষকে মামলা-হামলা করে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। শুধু তাই নয় ওই বাহিনী আব্দুল মনাফকে আলোচিত প্রফুল্ল হত্যা মামলায় আসামি করেছিল। উক্ত মামলায় বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন। একইভাবে মৃত এবাদুর রহমানের স্ত্রী ফুলবান বিবিকে দিয়ে আব্দুল মনাফের বিরুদ্ধে ওই চক্র নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দায়ের করেছিল। মামলা নং ১০৩/২০০৬। উক্ত মামলা থেকে তিনি বেকসুর খালাস পান। বর্তমানে ঐ ফুলবান বিবির মেয়ে আফতেরা বেগমকে দিয়ে আব্দুল মনাফ মেম্বারকে আরেকটি নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করেছে এ মহিলা। এভাবে নামে-বেনামে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে তারা আব্দুল মনাফকে গায়েল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। পুলিশ এসল্ট মামলা নং ১২/২৫৯। মামলায় গ্রামের নারী শিশু, স্কুল ছাত্র ও শিক্ষক, চাকুরীজীবি, ডাক্তারসহ এজহারনামীয় ৬০ জন এবং অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ স্থানীয় সোনার বাংলা উচ্চবিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে এবং প্রতিভা বিদ্যানিকেতনের শিক্ষক আবুল কালামকে ধরে নিয়ে যায়। এছাড়া বীরকুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফখরুল ইসলাকেও পুলিশ এসল্ট মামলায় আসামি করা হয়। এদিকে আমিরুল ইসলাম গংদের বিরুদ্ধে তাদের অপকর্ম তুলে ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা রুশন আলী বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন। যার নং ৬/২৫৩। পুলিশ এ মামলার কোনো আসামিকে গ্রেফতার না করে উল্টো উনার ছেলে বীরকুলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিক ফয়সল আহমদকে গ্রেফতার করে বিনা অপরাধে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। সর্ব শেষ এভাবেই গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ বীরকুলি গ্রামবাসীকে হয়রানি করছে। এলাকার প্রভাবশালী আমিরুল বাহিনীর প্রধান আমিরুল ইসলাম ও তার সন্ত্রসী বাহিনীর দূনীতি হামলা ও মামলার বিষয়গুলো নিয়ে গত ১২/১১/২০১৪ইং তারিখে সিলেট প্রেসক্লাব ও সিলেট জেলা প্রেসক্লাব এ সংবাদ সম্মেলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রুশন আলী। সংবাদ সম্মেলন শেষে বাড়ী ফেরার পথে বীর মুক্তিযোদ্ধা রুশন আলীকে আটক করে সালুটিকর পুলিশ ফাঁড়ির এস.আই খাইরুল বাশার। এনিয়ে গোটা গ্রামবাসী পুলিশি আতংকে দিনাতিপাত কাটছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, জলমহাল নীতি অনুযায়ী বাংলা ১৫ইং ফাল্গুন জলমহালের পানির বাধ ছাড়ার কথা কিন্তু প্রভাবশালী মহল এসবের তোয়াক্কা না করে এখনই জলমহালের বাধ ভেঙ্গে দিচ্ছে। এতে এলাকার লক্ষ লক্ষ হেক্টর বুরো কৃষি জমি ও ধান ক্ষেত শুকিয়ে চৌচির হয়ে বিরাট ক্ষতি সাধিত হবে। এছাড়া এই বিরুধ পূর্ণ জলমহালের বাধ এখন ভেঙ্গে দিলে বড় ধরণের সংঘর্ষ ও প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই জলমহালের লিজ ফাল্গুন মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।
অতএব, বিনীত প্রার্থনা উপরোক্ত বিষয়গুলো মানবিক দিক বিবেচনা করে জলমহালের লিজ ফাল্গুন মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও তিতু রঞ্জন গংদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতঃ এলাকার স্বনামধন্য ব্যক্তি আব্দুল মনাফকে মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি এবং বীরকুলি গ্রামের নিরীহ মানুষকে পুলিশি হয়রানী থেকে রক্ষা করতে আপনার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।