জামালগঞ্জে একই দিনে আ’লীগের দু’গ্রুপের ডাকা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চরম উক্তেজনা

এক গ্রুপ অনুমতি পেলেও অন্য গ্রুপ অনুমতি পায়নি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিবদমান দু’গ্রুপের একই দিনে ডাকা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উক্তেজনা বিরাজ করছে। সম্মেলনের দিন অথবা সম্মেলনের পুর্বেই এ নিয়ে শাসক দলের নেতার্মীদের মধ্যে বড় ধরণের সংঘর্ষ ছাড়াও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশংকা করছেন উপজেলাাসী। উপজেলা আ’লীগের বিববদমান দু’গ্রুপের নেতাকর্মীরা আগামী শনিবার একই দিনে পৃথক পৃথকভাবে উপজেলা সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন। দু’পক্ষের এমন প্রচারণা ও নিজ নিজ অবস্থানে অনঢ় থাকাতে কেন্দ্র সম্মেলন স্থল উপজেলার সাচনাবাজারের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরেই টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
দলীয় নেতার্মীদের সুত্রে জানা যায়, জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামালগঞ্জের সাচনাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীম সমর্থকরা সাচনাবাজার হাইস্কুল মাঠে ও জামালগঞ্জের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউসুফ আল আজাদের সমর্থকরা সাচনাবাজার বটতলা প্রাঙ্গনে এই সম্মেলন আহ্বান করে প্রচারণা শুরু করেছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইউসুফ আল আজাদ সমর্থকরা সাচনাবাজার বণিক সমিতির সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা করেছেন। ইউসুফ আল আজাদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন- আ’লীগ নেতা আব্দুশ শহীদ তালুকদার, মানিক লাল রায়, চিত্ত রঞ্জন পাল, মন্তোষ সরকার, পঙ্কজ পাল চৌধুরী, নূর মিয়া, রতিশ দেব প্রমুখ।
অপরদিকে, রেজাউল করিম শামীম মঙ্গলবার সাচনাবাজার সিএ-বি রোডে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন। সন্ধ্যায় সিএ-বি রোডে সাচনাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে উপজেলা সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন শামীম।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে। দলীয় সভাপতি করম আলী তালুকদারের মৃত্যুর পর সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মদ আলী ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম শামীম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ লাভ করায় জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদকের পদ ছেড়ে দেন এবং গত ১৬ বছর ধরেই উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক হিসাবে নবী হোসেন দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম শামীমের আধিপত্য জামালগঞ্জে আওয়ামী লীগে দীঘদিন ধরে। এই নিয়ে রেজাউল করিম শামীমের সঙ্গে তাঁর ভোটের রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বি আরেক আ’লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আল আজাদের দ্বন্দ্বও বহুদিনের। গেল উপজেলা নির্বাচনে রেজাউল করিম শামীম আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লড়েছেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউসুফ আল আজাদ। এ কারণে দুজনেই জোঠ প্রার্থীর কাছে হেরেছেন বিপুল ভোটের ব্যবধানে।
শনিবারের সম্মেলন প্রসঙ্গে সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউসুফ আল আজাদ বলেন,‘আওয়ামী লীগ কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি, এমন না যে, ইজারাদার যাকে পাহাড়ায় নেবে, সেই পাহাড়াদার। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার আদর্শে আমি উজ্জ্বীবিত। দল করার জন্য আমাকে কারও কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে না। শনিবার জামালগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ডাক দিয়েছি আমরাও। সাচনাবাজারের বটতলায় এই সম্মেলন হবে, আমাদের সম্মেলনে দলের নেতাকর্মী যারা আসবেন, মনের টানে আসবেন, ওখানে যারা যাবেন- খরচা পাতি পেয়েই যাবেন’। তিনি দাবি করেন তাঁদের সম্মেলনে বাধা দেওয়া হলে ঐ সম্মেলনেও কেউ যেতে পারবেন না।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম শামীম বলেন,‘ইউসুফ আল আজাদ আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেন এ কথা বলা যায় না, গেল দুটি জাতীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিরোধীতা করেছেন তিনি। গেল নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ রফিকুল হকের ফুটবলের পক্ষে কাজ করেছেন তিনি। গেল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তিনি আমার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে আমার চেয়ে ৮ হাজার ভোট কম পেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সম্মেলন করারও কেউ নয়, আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ পুরো কমিটি একসঙ্গে আছেন। তিনি আরো জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক সাচনাবাজার হাইস্কুল প্রাঙ্গণে ৮ নভেম্বর শনিবার দলের সম্মেলন করার জন্য প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছেন।
ইউসুফ আল আজাদ অবশ্য এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমার সঙ্গে কোন সন্ত্রাসী থাকে না, সুতরাং পুলিশও আমাকে সমাজ বিরোধী মনে করে না, কাজেই যেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আমরা সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিয়েছিল আশা করি প্রশাসনও কারো ইন্দনে অহেতুক সম্মেলনে বাধা দিতে আসবেন না। শামীমের দেয়া বক্তব্য সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করতে গিয়ে আরো বললেন, কি আর বলব শামীম জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক পদ আঁকড়ে ধরে আছেন গত ১৭ বছর কিন্তু জেলা সদরে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে একদিনের জন্যও তাকে দেখা যায়নি, দলের নেতাকর্মীরা যুদ্ধাপরাধী জামাত ও বিএনপি জোঠ বিরোধী আন্দোলন হরতাল প্রতিহত করতে মিছিল সমাবেশ করলেও সেখানে নেই তার অংশ গ্রহন, যতমধু জামালগঞ্জে, আর জামালগঞ্জে সম্মেলনের নামে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে তার ব্যাক্তিগত লোক দিয়ে পকেট কমিটি বানাতে এখন তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। শামীমের কাছে দল নয় তার ব্যাক্তিগত প্রভাব আর নিজের স্বার্থই বড় কথা, দলের হাইকমান্ডও এসব বিষয় জানেন কে আ’লীগ করেন আর কে নিজের ফায়দা লুটতে দলের নাম ব্যবহার করছে।
দু’ গ্রুপের ডাকা সম্মেলনের অনুমতি প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস,এম শফি কামালের বক্তব্য জানতে গতকাল বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বললেন, উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক নবী হোসেন গত সপ্তাহ পুর্বে সম্মেলন করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন, তাই তাদেরকে প্রথমেই সম্মেলন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। অপরদিকে উপজেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি পরিচয়ে সায়েম নামক একজন সাচনা বাজারে শনিবার একই সময়ে সম্মেলন করার জন্য গতকাল (বৃহস্পতিবার) একটি আবেদন পত্র নিয়ে এসেছিলেন কিন্তু প্রশাসন থেকে তাদেরকে শনিবার ছাড়া অন্য যে কোন দিন সম্মেলন করার কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে একই সঙ্গে শনিবার সম্মেলন না করতেও নিষেধ করে দেয়া হয়েছে।