যে বাজারে আতংকে সময় কাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের

আব্দুল হাকিম রাজ,মৌলভীবাজারঃ মাইর অইব, লাঠি ঝাটা লইয়া আইরা, তাড়াতাড়ি দরজা লাগাও। এ বাক্যটি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মোকাম বাজারের দোকানীদের কাছে অতি পরিচিত একটি শব্দ। ব্যবসায়ীরা তাদের জান-মাল রক্ষার জন্য বাক্যটি একে অপরের সাথে ব্যবহার করলেও ক্রেতাদের ও ভোগান্তির শেষ নাই। দোকানীদের মুখে শব্দটি উচ্ছারিত হওয়ার সাথেই নিজের প্রান রক্ষার্থে এদিক-সেদিক খরিদকৃত মালামাল নিয়ে কিভাবে কার আগে কে, বাজার থেকে বের হবে সে নিয়ে থাকে মহা চিন্তায়। তানা হলে দুইপক্ষের সংঘর্ষে কখন কার জান-মাল যায় সেটা বলা মুস্কিল। কয়েকদিন পর-পর তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বাজারের মধ্যে একের পর এক সংঘর্ষ,মারামারির ঘটনা দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসলেও এসব বন্ধে কোন কার্যকরী উদ্যেগ নিতে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। কাজীর গরু কাগজে আছে,গোয়ালে নেই, প্রবাদবাক্যটির মত বাজার পরিচালনা কমিঠি আছে, ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বণিক সমিতি নামে আরেকটি সংগঠন ও আছে। নেই সুধু মারামারি,সংঘর্ষ বন্ধের কমিঠি। তাই বাজারের মধ্যে কখন কি ঘটনা ঘটে যায়,সে নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা সর্বদা থাকে আতংকে। একটি ঘটনার রেসারেসি শেষ হতে না হতেই জন্ম নেয় আরেকটির। এ যেন নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। তাই কোন ব্যবসায়ী, ব্যবসা গুঠিয়ে বাজার থেকে চলে যাওয়ার চিন্তা করলেও নানা কারনে যেতেও পারছেননা। কেউ এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দেনা রয়েছে, আবার কারো লক্ষ-লক্ষ টাকা কাষ্টমারদের কাছে বাকি রয়েছে। দোকান বন্ধ করলে বাকি টাকা পাওয়া অনিশ্চিত। চলতি বছরে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বাজারে ছোট-বড় ৭/৮ টি মারামারি -সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ব্যবসায়ীদের লক্ষ-লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। সর্বশেষ গত রবিবার আরেকটি রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের হাত থেকে বাজারবাসী রক্ষা পেলেও দুই পক্ষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। দোকানীরা জানান, অতীতের ঘটনা গুলো দেখে ক্রেতারা আতংকিত হয়ে অনেকেই কেনাকাঠা না করে খালি হাতে বাজার থেকে চলে গেছে। সে জন্য দোকানে বেচাকেনা হয়েছে সামান্য। আর এ ঘটনায় যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের সংঘর্ষ। ঘটনার বিবরনে জানা যায়, উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ক্কারী আব্দুল মনাফের ছেলে জয়নাল মিয়া ও গবিন্ধপুর গ্রামের কুদ্দুছ মাষ্টারের ছেলে রকিব মিয়ার মধ্যে রবিবার তুচ্ছ একটি ঘটনা নিয়ে কথাকাঠাকাঠির জের ধরে দুই গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বাজারে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। পরে বাজারবাসীর মধ্যস্থতায় তা বন্ধ হলেও উভয় পক্ষের মধ্যে বিরাজ করছে উত্তেজনা। একটি সুত্র জানায়, ঘটনার পর রবিবার রাতেই উভয় পক্ষ যার যার গ্রামে মিটিং-সমাবেশ করে প্রতিপক্ষের সাথে মোকাবেলা করার প্রতিজ্ঞা করেছে। দোকানীরা জানান, গ্রামে/বাড়ীতে একটি মুরগী নিয়ে কথাকাঠাকাঠি করলেও সে বিবাদ চলে আসে বাজারে। শক্তিশালী পক্ষের কাছে দুর্বল পক্ষ বাজারের মধ্যেই হামলা-মারামারির শিকার হয়। সুযোগ সন্ধানীরা এসবের ফাঁকে বাজারে শুরু করে লুঠপাট। দুই পক্ষের মারামারি শুরু হলে মাতব্বর নামে এলাকার কিছু দান্ধাবাজ গ্রাম্য বিচারকরা এসব ঘটনাকে তাদের রোজগারের পথ বলে এসব দমণের চেষ্টা না করে উলটা দুই পক্ষকেই উস্কানী দেয়। কারন মারামারি হলে থানায় মামলা হবে,শালিস বৈঠক হবে,আর এসবের জন্য তাদের কদর বেড়ে যায়। কেউ করবে থানার দালালী,আবার কেউ কারো পক্ষের হয়ে টাকার বিনিময়ে বিচারের নামে করবে অবিচার। অনেকের বিরুদ্ধে আবার শালিসে আমানতের টাকা মেরে দেওয়ার অভিযোগ ও কম নয়। সর্বশেষ সোমবার ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ফতেপুর ইউপি অফিসে একটি সমাবেশ হয়েছে। শেখ বশির আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সমাবেশে প্রশাষনের সাথে পরামর্শ করে আইন-শৃংখলা কমিঠি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। বাজার রক্ষায় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি সহ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন। কিন্তু কতটুকু কার্যকর হয় সেটা এখন দেখার বিষয়। ব্যবসায়ীরা জানান, এরকম সমাবেশ অতীতেও হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সভায় উপস্থিত কয়েকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার মধ্যে ১ নং ফতেপুর ইউনিয়নের মানুসজন ছিল খুবই নম্র ও ভদ্র। আর সে হিসাবেই উপজেলার মধ্যে ইউনিয়নের নামকরন হয় ১ নং। বাজারের মধ্যেই ফতেপুর ইউপি কার্যালয়। সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুর রইছ সহ এলাকার গণ্যমান্য মানুসের অনেক কষ্টের ফলে মোকামবাজারের সৃষ্টি হয়েছে। চেয়ারম্যান সাহেব জীবিত থাকাবস্থায় অনেক বড়-বড় সমস্যার সমাধান বাজারে অবস্থিত ইউপি অফিসেই হয়েছে। অনেক সময় পুলিশ এসে ও এ ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতে পারেনি। কিন্তু এত নামী-দামী এলাকার মোকামবাজার আজ যেন ধংসের দারপ্রান্তে পৌছে গেছে। নতুন কোন ব্যবসায়ী বাজারে আসছে না ব্যবসা করতে। তাই অনতি বিলম্বে ঐতিহ্যবাহী এ বাজার রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর ভুমিকা নেয়া দরকার বলে ব্যবসায়ীরা অভিমত পোষন করেছেন।