দাঙ্গা-হাঙ্গামা বন্ধে লালনের দর্শন জরুরি

Lalonসুরমা টাইমস ডেস্কঃ বর্তমানে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হচ্ছে তা বন্ধে লালনের দর্শন মেনে চলা খুবই প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী।
তিনি বলেন, ‘লালনের দর্শন, আদর্শ, চিন্তা আজ পর্যন্ত খুবই প্রয়োজন ছিলো। যার প্রয়োজন আগামীতেও রয়েছে। বর্তমান সময়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা থেকে মুক্তি পেতে হলে লালনের দর্শন মেনে চলতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ীতে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১২৪ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে ৫ দিনব্যাপী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলালিংকের পৃষ্ঠপোষকতায়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ও কুষ্টিয়া লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
লালন একাডেমির সব উন্নয়ন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘লালনের গান যাতে Lalonবিকৃত না হয় এ জন্য সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘লালন ফকির তার জাতহীন মানবধর্মে সাম্প্রদায়িকতা, সহিংসতার কথা বলেননি। তাই এই মানবতার প্রাণপুরুষ বাউল সম্রাটের জীবন-কর্ম, ধর্ম-দর্শন, মরমী সংগীত ও চিন্তা চেতনা থেকে শিক্ষা নিতে দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার ভক্ত অনুরাগী, দর্শনার্থী এখন ভীড় করে।’
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ, একটি বাড়ি একটি খামারের প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব ড, প্রশান্ত কুমার পাল, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিট কমান্ডার মো. নাছিম উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মো. আমিরুল ইসলাম ও বাংলালিংকের পি আর অ্যান্ড কমিউনিকেশন সিনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার খন্দকার আশিক ইকবাল।
এতে মুখ্য আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন বিশিষ্ট লালন গবেষক ও লেখক ড. আনোয়ারুল করিম ও লালন মাজারের প্রধান খাদেম মহম্মদ আলী।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কুমারখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহেলা আক্তার এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম হক।
দাঙ্গা-হাঙ্গামা বন্ধে লালনের দর্শন জরুরি বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ বলেন, লালনের একটি ছবি কলকাতার শান্তিনিকেতনে রয়েছে। সেই ছবিটি দেশে ফিরিয়ে আনলে হয়তোবা লালনের প্রকৃত চেহারা দেখা যাবে।’
পরে লালন মঞ্চে লালন একাডেমির নিয়মিত শিল্পীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে পরিবেশিত হয় লালন সঙ্গীত।
পাঁচদিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নেয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
উল্লেখ্য, বৃটিশ শাসকগোষ্ঠির নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষ গুরুর দিক্ষা দিতেই সেদিন মানবতার পথ প্রদর্শক হিসাবে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহর আবির্ভাব ঘটে কুমারখালির ছেঁউড়িয়াতে।
লালনের জন্মস্থান নিয়ে নানা জনের নানা মত থাকলেও আজো অজানায় রয়ে গেছে তাঁর জন্ম রহস্য। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। আর্থিক অসঙ্গতির কারণে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। যৌবনকালে পূ্ন্য লাভের জন্য তীর্থ ভ্রমনে বেরিয়ে তার যৌবনের রূপান্তর ও সাধন জীবনে প্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। তীর্থ ভ্রমনকালে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে তার সঙ্গীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করে চলে যায়। পরে মলম শাহর আশ্রয়ে জীবন ফিরে পাওয়ার পর সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সান্নিধ্যে তিনি সাধক ফকিরী লাভ করেন।
ভক্ত মলম শাহের দানকৃত ষোল বিঘা জমিতে ১৮২৩ সালে লালন আখড়া গড়ে ওঠে। প্রথমে সেখানে লালনের বসবাস ও সাধনার জন্য বড় খড়ের ঘর তৈরি করা হয়। সেই ঘরেই তাঁর সাধন-ভজন বসতো।ছেঁউড়িয়ার আঁখড়া স্থাপনের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভক্তদের নিয়ে পরিবৃত থাকতেন।
তিনি প্রায় এক হাজার গান রচনা করে গেছেন। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর ভোরে এই মরমী সাধক বাউল সম্রাট ইহধাম ত্যাগ করেন এবং তাঁর সাধন-ভজনের ঘরের মধ্যেই তাকে সমাহিত করা হয়।