আরো ধর্মদ্রোহী হবো : লতিফ সিদ্দিকী

Latif Siddikiসুরমা টাইমস ডেস্কঃ পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে কটূক্তির অপরাধে মন্ত্রিত্ব হারানোর পরও তার কোনো আফসোস নেই। এতে তিনি কষ্ট পাননি। আর এত কিছুর পরও তিনি তার অবস্থানের কোনো নড়চড় করেননি।

রোববার আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ঢাকার একটি দৈনিককে টেলিফোনে বলেন, আমি আমার জায়গা থেকে সরছি না। আমি আমার বিশ্বাসে অটল রয়েছি। আরো শক্ত কথা বলবো। এজন্য যে শাস্তিই দেয়া হোক না কেন, তা মাথা পেতে নেব। আমি ধর্মদ্রোহী হবো। আমার রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ নেই। তবে সক্রেটিস হওয়ার সুযোগ আছে।

মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারানো আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এখন ভারতে। তিনি দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ‘সবুজ সংকেত’ পেলেই দেশে ফিরবেন। তবে সেই সবুজ সংকেত কে দেবেন, এ নিয়ে কিছু বলেননি অপসারিত এ মন্ত্রী।

লতিফ সিদ্দিকী বলেন, দেশে ফেরার জন্য তিনি আমেরিকা থেকে রোববার বিকালে কলকাতায় পৌঁছেছেন। আগামী ২-১ দিনের মধ্যেই দেশে ফেরার প্রস্তুতি নেবেন। সেটা সম্ভব না হলে কলকাতায়ই থাকবেন। আমেরিকায় রয়ে গেছেন তার স্ত্রী ও সাবেক এমপি লায়লা সিদ্দিকী। সেখানে তিনি তার ভাইয়ের বাসায় অবস্থান করছেন।

প্রশ্ন : মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের ঘটনায় কষ্ট পেয়েছেন?

উত্তর : কেন! মন্ত্রী পদে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিলে খুশি হবো আর অপসারণ করলে কষ্ট পাবো- এ কেমন কথা। অবশ্যই কষ্ট পাইনি। তা ছাড়া দোষ তো আমার। যা-ই হোক, এসব নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার আত্মমর্যাদা আছে। আমার কাছে সম্মানই সবচেয়ে বড়, পদ-পদবি নয়। আমি বেহায়া নই। আমি এসব নিয়ে ভাবি না। আমি সেবক। আমি শেখ হাসিনা ও জনগণের সেবক। তাই প্রধানমন্ত্রী যেভাবে আমাকে রাখবেন, সেভাবেই থাকবো। কাজ করবো। এতে কোনো সমস্যা নেই।

প্রশ্ন : আপনার বক্তব্য অনুযায়ী, আপনি পদত্যাগ করেছেন। সে ক্ষেত্রে পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে অপসারণের ঘটনাকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?

উত্তর : এ ক্ষেত্রে কৌশল হিসেবে আমার নেতা শেখ হাসিনা যা কিছু করেছেন, তার সবটাই সুন্দর। আর আমার দৃষ্টিতে, দেশ পরিচালনার বেলায় দেশে একমাত্র যোগ্য মানুষ হলেন শেখ হাসিনা। বয়সে তিনি আমার ছোট হলেও তার ২ পা টিপে দিতাম। তিনি যে কিভাবে সাপ-বিচ্ছু পরিবেষ্টিত হয়ে চলছেন!

প্রশ্ন : আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলী থেকে বাদ দেয়ার প্রতিক্রিয়া কী?

উত্তর : কোনো দুঃখ নেই। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অবশ্যই মেনে নেব।

প্রশ্ন : আপনাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের গুঞ্জনও আছে?

উত্তর : দল থেকে একেবারে বহিষ্কার না করলে খুশি হবো। মন্ত্রী ও সভাপতিমণ্ডলী থেকে বাদ পড়লেও দলের একজন কর্মী হিসেবে আমার কাজ করার অধিকার থাকা উচিত। তবে আমার দল আমি করবো। লেখালেখি করবো। দল শোকজ করলে অবশ্যই জবাব দেব।

প্রশ্ন : এমপি পদ থেকেও তো বাদ পড়তে পারেন।

উত্তর : এমপি পদটা কি খুবই মহার্ঘ্য জিনিস?

প্রশ্ন : কবে নাগাদ দেশে ফিরছেন?

উত্তর : আগামী ২-১ দিনের মধ্যেই দেশে ফেরার প্রস্তুতি রয়েছে। পরিণতি যা-ই হোক না কেন, সবুজ সংকেত পেলে আমি দেশে ফিরবোই। আমার কোনো দুঃখ নেই। দুঃখ একটাই, এ কি দেশ!

প্রশ্ন : দেশে ফিরলে গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন কি না?

উত্তর : সবার কাছে আমি আগে ভালো ছিলাম। এখন আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হচ্ছে। এ কারণে আমাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। যৌবনে বহু বছর জেলে ছিলাম। কোনো সমস্যা হয়নি। এখন আমার বয়স ৭৬। সে তুলনায় এখন তো কারাবাসে আমার কোনো সমস্যাই হওয়ার কথা নয়।

প্রশ্ন : নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কি ভাবছেন?

উত্তর : যা ঘটার ঘটুক এবং ঘটবে। প্রধানমন্ত্রী বললে চুপচাপ থাকবো। আমি তার তাকে বিব্রত করবো না। তবে আমি বেঁচে গেছি। আর টানতে পারছিলাম না।

প্রশ্ন : হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন কি না।

উত্তর : আমি আমার জায়গা থেকে সরছি না। আমি আমার বিশ্বাসে অটল রয়েছি। আগামীতে আরো শক্ত কথা বলবো। এজন্য যে শাস্তিই দেয়া হোক না কেন, আমি তা মাথা পেতে নেব। আমি ধর্মদ্রোহী হবো। আমার রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ নেই। তবে সক্রেটিস হওয়ার সুযোগ আছে।

প্রশ্ন : প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে?

উত্তর : কোন মুখে তার সঙ্গে কথা বলবো? আমি তাকে কম কষ্ট দিয়েছি? তার সঙ্গে কথা বলতে আমার লজ্জা লাগে না? তবে আমি কখনই তাজউদ্দীন আহমদ হবো না। শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকবো। প্রয়োজনে তার জন্য জীবন দেব। জীবনে-মরণে শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকবো। তিনি যখন ডাকবেন, তখনই তার পেছনে থাকবো। তাকে অনুসরণ করবো। আমাকে কিনতে হবে না।

প্রশ্ন : আপনাকে ঘিরে সৃষ্ট ঘটনা নিয়ে কোনো ক্ষোভ আছে কি?

উত্তর : দেশে কি একজন লোকও নেই যে তিনি প্রশ্ন করে জানতে চাইবেন, আমার বক্তব্যের খ-িত অংশ কেন প্রকাশ করা হলো? কেন পুরো বক্তব্য প্রকাশ করা হলো না? তা ছাড়া ওই অনুষ্ঠানে আমি রাজনৈতিক বক্তৃতা দেইনি। আর সেখানে যে এত কালো বিড়াল আছে, তা কি আমি জানতাম। ওটা ছিল একটা সামাজিক অনুষ্ঠান। সেখানে আমি গল্প করেছি। আমি তো কাউকে আঘাত দিয়ে কোনো কথা বলিনি।

প্রশ্ন : কোনো অনুশোচনা অনুভব করছেন কি?

উত্তর : অবশ্যই। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বিব্রত করেছি। দলকে বিপাকে ফেলেছি। নেতাকর্মীদের দুঃখ দিয়েছি। তবে আমি ধর্ম ব্যবসায়ী কাদের সিদ্দিকীর মতো ভণ্ড নই। আমি ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ব্যক্তিগত মতামত দিয়ে অন্যায় কিংবা অপরাধ করিনি। এজন্য আমার কোনো দুঃখ কিংবা অনুতাপ নেই।

প্রশ্ন : আপনার ছোট ভাই কাদের সিদ্দিকী আপনার পক্ষ হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। এ ব্যাপারে কিছু বলবেন?

উত্তর : কাদের সিদ্দিকী আমার পরিবারের কেউ নন। সুতরাং তার মতামত আমার মতামত নয়। আমি ইহজাগতিক অসাম্প্রদায়িক মানুষ। আমার নেতা ও দল আমার বিরুদ্ধে যে কোনো সিদ্ধা নিতেই পারে। কিন্তু ভ্রাপথের পথিক কাদের সিদ্দিকী আমাকে নিয়ে বলার কে? সূত্র : সমকাল।