ঈদকে সামনে রেখে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হিজড়া বাহিনী

Hijra_Sylhetসুরমা টাইমস ডেস্কঃ ঈদকে সামনে রেখে রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হিজড়া বাহিনী। বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নামে বিভক্ত হয়ে অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে সর্বত্র চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছে তারা। এ ছাড়া শিশু নাচানোর নাম করে পরিবারের কাছ থেকে জোর করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। ইদানীং তাদের মাত্রাতিরিক্ত অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রাজধানীবাসী। তারা বলছেন, হিজড়াদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না, যে কারণে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। পক্ষান্তরে, বিপদে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
এ দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, হিজড়াদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র মতে, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি থেকে হিজড়াদের টাকা তোলা নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে হিজড়ারা টাকা তোলার এই রীতি চলে আসছে। মানুষও সাধ্যমতো তাদের টাকা ও বিভিন্ন মালামাল দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু গত কয়েক বছর হিজড়াদের আচরণ বদলে গেছে। পাল্টে গেছে তাদের টাকা চাওয়ার ধরনও। আগের দিনের সেই টাকা তোলা এখন চাঁদা আদায়ে পরিণত হয়েছে। রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকানপাট যেখানে-সেখানে মানুষকে টাকার জন্য নাজেহাল করছে। চাঁদার জন্য মানুষকে জিম্মি করে ফেলা হচ্ছে। ঈদের আগে তাদের উৎপাত অনেক বেড়ে গেছে। হিজড়াদের কাজে কেউ বাধা দিলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে। প্রকাশ্যেই কাপড়-চোপড় খুলে ফেলছে। বিশেষ ভঙ্গিতে হাততালি দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
Hijraউল্লেখ্য, হিজড়াদের চাঁদাবাজির মধ্যে নবজাতক শিশু নাচানো অন্যতম। আগে হিজড়ারা শিশু নাচালে পরিবারের সদস্যরা সামর্থ্য অনুযায়ী যে টাকা দিতেন হিজড়ারাই তাই নিয়ে যেত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তাদের অত্যাচার বেড়ে গেছে। শিশু নাচানোর নাম করে ১০ হাজার থেকে শুরু ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করা হচ্ছে। তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে শিশুটিকে জিম্মি করা হচ্ছে। তাদের কর্মকাণ্ডে শিশুটি কান্নায় ভেঙে পড়ছে। কিন্তু টাকা না দেয়া পর্যন্ত শিশুটিকে মা-বাবার কোলে ফিরিয়ে দেয় না তারা। এ দিকে বুকের মানিককে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে বাবা-মা হিজড়াদের অনৈতিক দাবি পূরণ করছে। অনেক সময় এসব বিষয় নিয়ে এলাকাবাসী ও হিজড়াদের সাথে প্রথমে বাগি¦তণ্ডা পরে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।
যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, ফকিরাপুল, এলিফ্যান্ট রোডের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, নামকরা শীর্ষ সন্ত্রাসী, মওসুমি চাঁদাবাজ, এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসীরাই শুধু চাঁদা নিচ্ছে না। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে চাঁদা আয় করছে হিজড়ারা। মূলত হিজড়ারা সারা বছরই চাঁদা আদায় করে। ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, হিজড়াদের টাকায় বিষয়টিকে অনেকে স্বাভাবিক মনে করে থাকেন। এটি নিয়ে কোনো মামলা বা জিডি করা হয় না। কিন্তু যাদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হচ্ছে তারা বুঝতে পারেন এর যন্ত্রণা কী। সাধারণত প্রতি সপ্তাহে তারা চাঁদা নিতে আসে। দোকান বা ব্যবসায়ের ধরন বুঝে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। টাকা দিতে না চাইলে বা একটু নেগেটিভ ধরনের কথা বললেই ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও মন্তব্য করে ওঠে। গালিগালাজ ও অভিশাপ দিতেও বাদ দেয় না। হিজড়ারা প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে বলে তারা জানান। পুলিশও ভয় পায় হিজড়াদের। কেননা প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। উপরন্তু কখনো কোনো হিজড়াকে আটক করলে তাদের বাহিনীর সদস্যরা ছুটে আসে। তারা থানা ঘেরাও করে, ভাঙচুর চালায়, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে। সে কারণে কেউ থানায় এলে পুলিশ মীমাংসা করে ফেলার পরামর্শ দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে পুরান ঢাকায় হিজড়াদের বিচরণ ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে সম্প্রতি রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে হিজড়াদের কার্যক্রম। বাদ যাচ্ছে না অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরাও। হিজড়াদের কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠনের মধ্যে রয়েছে চরম দ্বন্দ্ব। মাঝে মধ্যে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে চাঁদা আদায়ের এলাকা ভাগ করা নিয়েই দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষে রূপ নেয়। অভিযোগ রয়েছে, কোনো ঝামেলা ছাড়া অর্থ উপার্জনের জন্য অনেকে হিজড়া না হয়েও হিজড়া সেজে চাঁদাবাজি করছেন। পুরুষ ও পতিতারাও হিজড়া সংগঠনে ঢুকে পড়েছে। সাজগোজ করে তারা হিজড়া হয়ে যায়। এমন কয়েকজন ভুয়া হিজড়াকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। জানা গেছে, লালবাগের সুমন ওরফে সুমনি নামের এক হিজড়ার নেতৃত্বে রয়েছে বিরাট একটি গ্রুপ। তার এই দলে রয়েছে হাকিম ওরফে হাসু, চামেলি, কাকন ওরফে রিয়াসহ ২০-২২ জন। অন্য দিকে মিরপুর, শেওড়াপাড়া এলাকায় পারুল হিজড়ার নেতৃত্বে রয়েছে আরো একটি চক্র।
কথা সুলতানা নামে একজন হিজড়া জানান, আমাদেরও বাঁচার অধিকার আছে। দেশে বা সমাজের কোথাও আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। আমারা তাহলে কী করব। চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি বলেন, হিজড়ারা চাঁদাবাজি করে না। এ ব্যাপারে জানতে হিজড়া নেতা পারভীন ওরফে জয়নালের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলেননি।
পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, হিজড়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না, এটা সঠিক নয়। কেউ হিজড়াদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে শক্ত কোনো অভিযোগ করেন না। অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই হিজড়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।