এস এম সোলায়মান প্রণোদনা অনুষ্ঠান

S m solaimanনাট্যব্যক্তিত্ব এস এম সোলায়মানের ১৩তম প্রয়াণ ও ৬১তম জন্ম দিবস উপলক্ষে থিয়েটার আর্ট ইউনিট আয়োজন করছে ‘এস এম সোলায়মান স্মারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানের। স্মারক বক্তৃতা করবেন ড. মোহাম্মদ বারী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নাট্যজন ড. ইনামুল হক এবং আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তরুণ নাট্যজন আমিনুর রহমান মুকুল।
একই অনুষ্ঠানে থিয়েটার আর্ট ইউনিট প্রবর্তিত এস এম সোলায়মান প্রণোদনা পুরস্কার প্রদান করা হবে। এ বছর প্রণোদনা স্মারক গ্রহণ করবেন প্রতিভাবান ও সৃজনশীল তরুণ নাট্যকর্মী ড. সামিনা লুৎফা নিত্রা।
২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে অনুষ্ঠান। ৬টা ৩০ মিনিটে প্রদান করা হবে ‘এস এম সোলায়মান প্রণোদনা ২০১৪’। সন্ধ্যা ৭টায় থাকবে এস এম সোলায়মানের নাট্যরুপ ও নির্দেশিত নাটক ‘গোলাপজান’। নাটকটির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকেয়া রফিক বেবী।
বাংলাদেশের নাট্যমঞ্চে ক্ষ্যাপা পাগলাখ্যাত এস এম সোলায়মান ১৯৫৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্মেছিলেন ভারতের আসাম রাজ্যের ডিগবয় শহরে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের দু’দফা (১৯৮৮-১৯৯১) সেক্রেটারী জেনারেল এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সংস্কৃতিকর্মিদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে এস এম সোলায়মানের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। এস এম সোলায়মান কালান্তর, পদাতিক নাট্য সংসদ, ঢাকা পদাতিক, অন্যদল ও থিয়েটার আর্ট ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি তিরিশটিরও বেশী নাটক রচনা, রূপান্তর এবং নির্দেশনা দিয়েছেন।
এস এম সোলায়মান বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত নাট্যকার ও নাট্যশিল্পী ছিলেন। তিনি পঁচিশটিরও বেশী টেলিভিশন নাটক রচনা করেছেন। নির্মাণ করেছেন অসংখ্য ভিডিও চিত্র, ডক্যুমেন্টারী, টিভি নাটক ইত্যাদি। প্রকাশিত হয়েছে তাঁর রচিত ও সুরারোপিত কয়েকটি মিউজিক ভিডিও এ্যালবাম, গান ও গীতিনাট্যের ক্যাসেট। তাঁর রচিত ও সুরারোপিত অধিকাংশ গান এখনো অপ্রকাশিত। ওয়ার্ল্ড ভিউ, সিডা ও নরওয়েজিয়ান দূতাবাসের সহযোগিতায় তিনি নির্মাণ করেন বেশ ক’টি ভিডিও চিত্র। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত অডিও-ভিডিও নির্মাতা হিসেবে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি তাঁর দল ও নাটক নিয়ে ভারত ভ্রমণ করেন।
১৯৯৩ সাল থেকে এস এম সোলায়মান নাটকের দ্বিতীয় কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন আমেরিকা। ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি বেশ কয়েকবার নিউইয়র্ক যান এবং দীর্ঘ সময় অবস্থান করে প্রবাসী বাঙালিদের সমন্বয়ে গঠিত দল- বাংলাদেশ থিয়েটার অব আমেরিকা’র প্রযোজনায় সাতটি নাটক মঞ্চায়ন করেন।
সঙ্গীত ও কোরিওগ্রাফির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে এস এম সোলায়মান স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নবনাট্যধারায় নির্মাণ করেন এক নতুন আঙ্গিক। তিনি ছিলেন একাধারে নাট্যকার, নির্দেশক, সংগঠক, অভিনেতা, গায়ক, ও সঙ্গীতকার।
মঞ্চনাটকে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি রংপুর পদাতিক সম্মাননা (১৯৮৮), বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডা সম্মাননা (১৯৯৪), বাংলাদেশ থিয়েটার অব আমেরিকা সম্মাননা (১৯৯৫), বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরষ্কার (১৯৯৬), বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব লস এঞ্জেলেস সম্মাননা (১৯৯৬), সুবচন নাট্য সংসদ (১৯৯৬), চট্টগ্রাম এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা সম্মননা (১৯৯৭), থিয়েটার আর্ট ইউনিট সম্মাননা (১৯৯৮), মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় সম্মাননা (২০০০), আরণ্যক নাট্যদলে ‘দীপু স্মৃতি পদক’ (মরণোত্তর-২০০১), ও ঢাকা পদাতিকের ‘আবুল কাশেম দুলাল স্মৃতি পদক’ (মরণোত্তর- ২০০২) লাভ করেন।
তাঁর রচিত ও নির্দেশিত নাটক আমিনা সুন্দরী আমেরিকার অফ ব্রডওয়েতে মঞ্চস্থ প্রথম বাংলা নাটক হওয়অর গৌরব অর্জন করে। ১৯৮৩ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর স্ত্রী সু-অভিনেত্রী রোকেয়া রফিক বেবী এবং একমাত্র কন্যার নাম আনিকা মাহিন একা। ২০০১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মাত্র ৪৮ বছর বয়সে নাট্যজন এস এম সোলায়মান এর অকাল প্রয়াণ ঘটে। বিজ্ঞপ্তি