শ্রীমঙ্গলে অবৈধ ভাবে উত্তোলিতত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বালু

 বালু উত্তোলনের দায়ে ৩ জনের কারাদন্ড ৫লক্ষ টাকার জরিমানা ও আরো ৫ লক্ষ টপাকার বালি জব্দ

Srimangal baliমধু চৌবে, শ্রীমঙ্গল থেকেঃ সরকারী ভাবে বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে বালু মহালে বালু উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ থাকলেও আইনেই তোয়াক্কা না করে অবৈধ ভাবে প্রতিদিনই প্রায় অর্ধশত স্পট থেকে বালি উত্তোলন অভ্যাহত রেখেছে কয়েকটি প্রভাবশালী মহল। কেউ কেউ পরিবেশকে হুমকিতে ফেলে মেশিন ব্যবহার করেও বালি উত্তোলন অভ্যাহত রেখেছেন। আর এই উত্তোলিত বালি বিভিন্ন রাস্তার পাশে রাখায় মারাত্মক ভাবে চলাচলেও বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি সময়ে গণমাধ্যমে এরকম সংবাদ প্রকশের পর রোববার সন্ধায় ভ্রাম্যমান আদালতের একটি টিম শ্রীমঙ্গলে মাত্র কয়েক ঘন্টা অভিযান পরিচালনা করে জব্দ করেছেন প্রায় ২শ ট্রাক বালূ, আটক করেন এর সাথে সম্পৃক্ত তিনজকে। পরে আটককৃতদের ৫ লক্ষটাকা জরিমানা করা হয় এবং অনাদায়ে প্রত্যেককে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত রোববার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর অফিসে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ফারুক আহমদ, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান এবং খান আসানুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত ভ্রাম্যমান আদালত এসব আদেশ দেন। এর আগে, উপজেলার বিভিন্ন বালুুমহাল এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। দন্ড প্রাপ্তরা হলেন- মোল্লা কবির আহমদ (৪৫), টেনু মিয়া (৪২) ও মকসুদ মিয়া (৪৮)। তারা শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক আহমদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও বাজার, লছনা, মুড়াইছড়া ও আমরাইল ছড়া বালুমহাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলনের দায়ে তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরে, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তাদের মধ্যে কাদির খানকে ৩ লক্ষ ও বাকী দুইজনকে এক লক্ষ টাকা করে মোট পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে একজনের তিন মাস ও অপর দুই জনের দেড়মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয় এবং আরো প্রায় দেড় লক্ষ ঘন ফুট বালূ জব্দ করেন। যার মুল্য প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকা হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এদিকে বালু জব্দ ও জরিমানা করার ১৬ ঘন্টার মধ্যে মেশিন দিয়ে উপজেলা উদনাছড়া থেকে বালি উত্তোলনের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও উপজেলার মির্জাপুর, ভুনবীর, সাতগাও, সিন্দুর খান, শ্রীমঙ্গল সদর, কালাপুর, আশিদ্রোন ও সাতগাও ইউনিয়নে আরোও প্রায় ৩০/৩৫টি স্পট থেকে ফাঁকে ফাকে বালু উত্তোলন অভ্যাহত রয়েছে। এ ব্যাপরে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নুরুল হুদা জানান, শ্রীমঙ্গলে ৩১টি বালু মহাল রয়েছে যেগুলো দরপত্র আহববান করা হয়েছে। টেন্ডারের পর সবোর্চ্চ দর দাতাকে বুঝিয়ে দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত এখানে কেউই বালি উত্তোলন করতে পারেন না। আর যখনই অবৈধ ভাবে বালু ্উত্তোলনের খবর পান তখনই তারা অভিযান পরিচালনা করেন। রোববারের আগেও এভাবে একাধিক অভিযান পরিচালনা করে আরো ৭ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। খোজ নিয়ে জানাযায়, উপজেলার ৩১টি বালু মহালের মধ্যে বেশ কয়েকটিতে রয়েছে হাইকোটের রীট। কয়েকটি রয়েছে চা বাগানের ভিতরে যে গুলো ইজারা বহিবূত এর মধ্যে খনিজ মন্ত্রনালয় থেকে দুই বছর মেয়াদে অনুমোদন এনেছেন জৈন্তা ছড়া মো. হিমেল, বাৎসরিক দেড়লক্ষ টাকা রাজস্ব দিয়ে । দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে ইছামতি ছড়া এনেছেন মো. মকন মিয়া, ৪ লক্ষ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিলাস ছড়া ও ৯ লক্ষ টাকা দিয়ে উদনা ছড়া এনেছেন মো. কামাল মিয়া, ৪২ হাজার টাকা দিয়ে নারায়ন ছড়া এনেছেন মো. হান্নান মিয়া ও দুই লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দিয়ে আলীয়া ছড়া এনেছেন মকন মিয়া। তবে এদের বালু উত্তোলনের অনুমতি এখনও দেয়া হয়নি বলে জানান, উপজেলা সহকারী কমিশনার মো. নুরুল হুদা। কিন্তু এদের অনেকেই শুরু করেছে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন। কেউ কেউ অত্যাধিক লাভের আশায় রাস্তা ঘাট, ব্রীজ ও নদী ভাঙ্গনের কথা চিন্তা না করে অ-নিয়ম তান্ত্রিক ভাবে বালূ উঠাচ্ছেন। এ ছাড়াও শ্রীমঙ্গলে কিছু কিছু বালু ইজারাদার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে আদালতে রীট করে তারা আরো কয়েক বছর বিনা রাজস্বে বালু উত্তোলন করেন। আর এর নিয়ন্ত্রন থাকে বরাবই প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের হাতে। তবে শ্রীমঙ্গল সচেতন মহল মনে করেন প্রত্যেকটি বালু মহাল প্রকাশে দরপত্রের মাধ্যমে ও সঠিক নিয়ম কানুন বেঁধে কড়াকড়ি করে দিলে এ থেকে বছরে কোটি টাকা রাজস্ব আসবে নিশ্চিত।