ছাতকের ছৈলা গ্রামে ৫পরিবার পঞ্চায়েতের বাদ : এলাকায় আলোচনার ঝড়

ছাতক প্রতিনিধিঃ ছাতকের ছৈলা আফজলাবাদ ইউনিয়নের ছৈলা গ্রামে ৩৯দিন ধরে ৩টি ও ১৫দিন ধরে আরো ২টিসহ মোট ৫টি পরিবারকে পঞ্চায়েতের বাদ দিয়ে এক ঘরে করে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি লন্ডনে ছৈলা আফজলাবাদ ইউনিয়ন অর্গ্রানাইজেশন নামের একটি কমিটিতে গ্রামের এক ব্যক্তি সভাপতি নির্বাচিত না হওয়ায় এ প্রতিহিংসার আগুনে নির্বাচিত সভাপতি ও তার দেশে প্রতিষ্ঠিত দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এসব পরিবারকে সম্পূর্ন অন্যায় ভাবে পঞ্চায়েত থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে এ মাদরাসা ও ইয়াতিমখানায় স্থানীয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যেতে নিষেধ দিয়েছেন পঞ্চায়েত কমিটি। জানা যায়, ২০০০ সালে ছৈলা ইবতেদায়ী মাদরাসা নামে একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠার কিছু দিন পর বিভিন্ন সমস্যার কারনে মাদরাসাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে ২০০৭ সালে গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসি মুফতি মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ লতিফি ছৈলা হাফিজিয়া দাখিল মাদরাসা ও ইয়াতিমখানা নামের একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। দ্বিতল ভবন প্রতিষ্ঠানটিতে দু’শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী, ২২জন ইয়াতিম শিশু রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে মাদরাসাটি দিন-দিন শিক্ষা বিস্তারে এগুতে থাকলে মুফতি আব্দুল ওদুদ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন অনুদানের মাধ্যমে মাদরাসার সকল ব্যায়ভার বহন করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি লন্ডনে ছৈলা আফজলাবাদ ইউনিয়ন অর্গ্রানাইজেশন নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটিতে ছৈলা গ্রামের দু’ব্যক্তি সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে উপস্থিত সকল সদস্যদের সর্ব সম্পতিক্রমে মুফতি মাওলানা আব্দুল ওদুদ লতিফিকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। উক্ত নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দীতাকারী পরাজয় বরণ করে লতিফির উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় সেখানে বাক বিতন্ডারও সৃষ্টি হয়। এ খবরে সেখানে অবস্থানরত স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি দেশে ছৈলায় অবস্থানরত পরাজিত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনরাও প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলে উঠে। এর জের ধরে প্রবাসীদের কাছ থেকে মাদরাসার নামে অর্থ সংগ্রহ করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনেন লতিফির বিরুদ্ধে। তারা গ্রামে গরু জবাই করে ১১আগষ্ট একটি প্রতিবাদ সভাও করেছেন। গ্রামে দু’পক্ষ এ নিয়ে মূখোমূখি অবস্থানে রয়েছে এবং এসব কারণেই গ্রামে দলাদলী সৃষ্টিসহ ধারাবাহিকভাবে পঞ্চায়েতের বাদ নামের শব্দ ব্যবহার করে ৫টি পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। রোববার সরজমিন ঘুরে গ্রামের বিভিন্ন লোকজনের সাথে আলাপ করে অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ছৈলা হাফিজিয়া দাখিল মাদরাসা ও ইয়াতিম খানার প্রতিষ্ঠাতা প্রবাসী মুফতি মাওলানা আব্দুল ওদুদ লতিফির বড় ভাই মাদরাসার পরিচালক হাজী আব্দুল বারিক জানান, প্রবাসে বিভিন্ন লোকজনের আর্থিক সহায়তায় মাদরাসাটি পরিচালনা করা হচ্ছে। এখানে টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি সত্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যস্থ প্রবাসীদের উদ্যোগে ছৈলা আফজলাবাদ ইউনিয়ন অর্গ্রানাইজেশন কমিটিতে মুফতি আব্দুল ওদুদ লতিফিকে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী ও দেশ বিদেশে থাকা তার আত্মীয় স্বজন এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাদরাসা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রতিহিংসায় গত পহেলা আগষ্ট অর্থাৎ ঈদের পরের শুক্রবারে ষড়যন্ত্র করে পঞ্চায়েত কমিটি সম্পূর্ন বে-আইনী ভাবে সে ও তার দু’ভাইসহ ৩টি পরিবারকে পঞ্চায়েত থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এগুলো করে তারা ক্ষান্ত হয়নি। ক্রমান্বয়ে আত্মীয় স্বজন ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ মোট ৩১টি পরিবারকে পঞ্চায়েত থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে পঞ্চায়েতের আব্দুল খালিক জানান, ৩১টি পরিবারকে নয় শুধু আব্দুল বারিকের পরিবারকে পাচের বাদ করা হয়েছে। আব্দুল খালিকের ছেলে মাহবুব জানান, আব্দুল বারিক, আবু সাইদ, আব্দুর রহিম, ছয়নুর আলী, আবুল হোসেনসহ ৫টি পরিবারকে পঞ্চায়েত থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তাহিদুল ইসলাম বলেন, মাদরাসার বিরুদ্ধে কোন হিংসাত্মক মনোভাব আমাদের নেই। পঞ্চায়েতের ডাকে সাড়া না দেয়ায় এবং তার ভাইদের বিভিন্ন অপরাধের বিচার না করায় শুধু বারিক উল্লার পরিবারকে প্রায় মাস দেড়েক আগে বাদ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পঞ্চায়েতের কাছে বারিক উল্লা ক্ষমা চেয়ে নিলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। পঞ্চায়েতের কোন বৈঠকে কার সভাপতিত্বে বাদ দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। গ্রামের মনতাছির আলী ও যুবক আনছার আলী জানান, ছৈলা মাদরাসায় ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক পাঠাতে নিষেধ করা হয়েছে। ছয়নুর আহমদ ও তার ভাতিজা আবুল হোসেন বলেন, আব্দুল বারিকসহ তার পরিবারকে কেন বাদ দেয়া হয়েছে পঞ্চায়েতের কাছে এটির প্রতিবাদ করা হলে প্রতিহিংসার কারণে প্রায় ১৫দিন আগে তাদেরকেও পঞ্চায়েতের বাদ দিয়ে একঘরে করে রাখা হয়েছে। মাদরাসা পরিচালনা কমিটির উপদেষ্ঠা কমিটির সদস্য রফু মিয়া বলেন, পঞ্চায়েতের কয়েকজন লোক কর্তৃক প্রায় ৩শুক্রবার আগে তাকে পঞ্চায়েতের বাদ দিয়েছে। মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রাসেল বলেন, মাদরাসা কমিটির দায়িত্ব নেয়ায় তাকেও বাদ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩১টি পরিবারকে এক ঘরে করে দিয়েছেন পঞ্চায়েত কমিটি। পঞ্চায়েতের লোকজনের ভয়ে ঘরবাড়িতে রীতিমত বসবাস করতে পারছেন না, এজন্য তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন বলে মাদরাসার অভিভাবক কমিটির সদস্য এম এ রহিম জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্য থেকে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি মাওলানা আব্দুল ওদুদ লতিফি ফোনে বলেন, তাকে ছৈলা আফজলাবাদ ইউনিয়ন অর্গ্রানাইজেশন কমিটিতে তাকে সভাপতি করায় পঞ্চায়েতের বাদসহ বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ছৈলা আফজলাবাদ ইউপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লাল মিয়া বলেন, বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যানের ও এলাকার গন্যমান্যদের সমন্বয়ে নিস্পত্তি হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। সমাজচ্যুতের ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, ১০টি ফ্যামেলীকে এক ঘরে করা হয়েছে এমন তথ্য পেয়ে ছাতক থানার ওসির মাধ্যমে তাদেরকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশের প্রেক্ষিতে তাদেরকে ডেকে এনে বলা হয়েছে, যে মহামান্য হাইকোর্টের কড়া দির্দেশ রয়েছে কাওকে একঘরে করা যাবেনা। এব্যাপারে ছাতক থানার ওসি শাহজালাল মুন্সি জানান, গ্রাম থেকে একাধিক ব্যাক্তিকে ডেকে এনে কাওকে একঘরে করা যাবেনা বলে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন সপ্তাহ খানেকের ভিতরে উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সমন্বয়ে বিষয়টি নিস্পত্তির লক্ষ্যে বসা হবে।