দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন কমিটি গঠন

অছাত্র এক লন্ডনীকে আহ্বায়ক করায়, সাবেক ছাত্রদের ক্ষোভ

Derai picজুবের সরদার দিগন্ত, দিরাই: ১৯১৫ সালে প্রতিষ্টিত দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়টি ২০১৫ সালে শতবর্ষ অতিক্রম করবে। শতবর্ষকে সামনে রেখে গতকাল বুধবার দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্যোগে সাবেক ছাত্রদের নিয়ে বিদ্যালয়ের হলরুমে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দিরাই-শাল্লার সংসদ সদস্য ও বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সভায় শতবর্ষ উদযাপন পরিষদ নামে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ১০১ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র নন একজন লন্ডন প্রবাসীকে, যিনি বর্তমানে লন্ডন অবস্থান করছেন। এ নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রীয়া দেখা দিয়েছে, ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক ছাত্ররাও। কৌশলে দিরাই-শাল্লার সাবেক সংসদ সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরীকে বাদ দিলেও সভায় উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক কামরুজ্জামান ষ্টেইজে ছিলেন নিরব দর্শকের মত।
দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে দায়ীত্ব পালন করা দিরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, আমরা আজ টাকার কাছে পরাজিত হলাম, এমন একজনকে শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক করা হয়েছে যিনি এ স্কুলের ছাত্র নন, এমনকি তিনি আমার জানা মতে কোন স্কুল কলেজে লেখাপড়া করেননি, শিশুকাল থেকেই তিনি লন্ডনে বসবাস করছেন। দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র এবং বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাফিজুর রহমান তালুকদার বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজের দলের উচ্চ শিক্ষিত ও স্বনামধন্য ব্যাক্তিদের বাদ দিয়ে নিজস্বার্থ হাসিলের জন্য এমন এক ব্যক্তিকে ওই কমিটির আহ্বায়ক করেছেন যিনি এ দেশের কোন শিক্ষা সংস্কৃতির সাথে জড়িত নন, যিনি ছেলে বেলা থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছেন, শুনেছি লন্ডনে তিনি একজন শিল্পপতি। আজ টাকার জোড়ে তিনি লন্ডন থেকেও দিরাইয়ের স্বনামধন্য উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। দিরাইবাসী এ কমটি প্রত্যাখান করছে। এ নিয়ে সাবেক ছাত্রদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের একক সিদ্ধান্ত বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্ররাও মেনে নিতে পারেনি।
দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক, বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হাবিবুর রহমান তালুকদার বলেন, দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা দেশের মন্ত্রী, এমপি, সচিব হলেও তাদের বাদ দিয়ে দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের আহ্বায় করা হযেছে একটি মাদ্রাসায় দোওম-ছুয়ম পড়–য়া লন্ডনীকে। যা দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা মেনে নিতে পারছেনা, একটি শুভকাজের শুরুতেই তার এমন সিদ্ধান্ত আমাদের সবাইকে হতবাক করেছেন।
সাবেক ছাত্র যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক এ্যাডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল বলেন, শুধু নারীর টানে নয় এবার দেশে এসেছিলাম আমার প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্টান দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের মত বিনিময় সভায় যোগ দেওয়ার জন্য, কিন্তু মত বিনিময় সভায় যোগ দিয়ে হতাশ হলাম, আমাদের সংসদ সদস্য এমন একটি কমিটি করলেন যা দেখে মনে হচ্ছে আমরা টাকার কাছে হেরে গেছি। তিনি আরো বলেন, আমরা ১৯৯১ সালের ব্যাচ আগ থেকেই প্রস্তুত ছিলাম এ অনুষ্ঠানে বড়ধরনের একটি অনুদান দেওয়ার জন্য, আমরা এক ব্যাচের ছাত্ররাই পারি অনুষ্ঠানের সব খরচ বহন করতে, কারণ এ বিদ্যালয় আমাদের সৃষ্টি করেছে তার সামান্যতম প্রতিদান দেওয়ার একটা সুযোগ আমরা পেয়েছিলাম, কিন্তু বিদ্যালয়ের ছাত্রদের বাদ দিয়ে একজন অছাত্রকে কমিটির আহ্বায়ক করার আমরা মর্মাহত হয়েছি। শতবর্ষ উদযাপন না করে মনে দুঃখ নিয়েই হয়তোবা আবার চলে যেতে হবে লন্ডনে।
এছাড়া বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ছাত্র, ইমন, সুমন, আলেক, দুলাল, শহীদ, সুহেল, জুনেদ, পাবেল, শাহারিয়ার, রুবেলসহ ২০-২৫জন ছাত্রের সাথে কথা বলে যানা যায়, বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পালন উপলক্ষ্যে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক একজন অছাত্র হওয়ায় তাদের তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশের।