এম এ হকের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ

মহানগর বিএনপির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ দাবি
M A Hoque

সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর নামে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে তোলপাড় চলছে। যার নামে ওই বিবৃতি পাঠনো হয়েছেন-সেই বিবৃতিদাতা শমসের মবিন চৌধুরীও জানেন না তার নামে পাঠানো বিবৃতি সম্পর্কে। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। আর বিএনপি ও ছাত্রদল নেতারা বলছেন, শমসের মবিন চৌধুরীকে বিতর্কিত করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যই এমএ হক কর্মটি করেছেন। তাকে বিবৃতি জালিয়াত বলেও আখ্যা দিয়েছেন দলীয় নেতারা।
তবে, এমএ হকের দাবি, শমসের মবিনের নির্দেশ মতো তাঁর (শমসের) বিবৃতি তিনি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন। দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরীর নামে গত ২৯ জুন রাতে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি এএ হক স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি পাঠানো হয় গণমাধ্যমে।
ওই বিবৃতিতে শমসের মুবিন চৌধুরী সিলেট মহানগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মাহবুব কাদির শাহীর বাসায় হামলা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের নিন্দা জানিয়ে বলেন- ‘প্রত্যক্ষদর্শী ও হত্যাকান্ডের সময় জিলুর সাথে থাকা ভুলন কান্তি তালুকদার হামলার সাথে জড়িত অনেকের নাম বলেছেন। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। ওই নামগুলোর মধ্যে মাহবুব কাদির শাহীর নাম ছিল না। এজন্য মামলায় শাহীকে আসামী করা ও তার বাড়িতে হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তিনি নিন্দা জানান।’
পরদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওই বিবৃতি প্রকাশ হওয়ার পর বিএনপি পরিবারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিবৃতি দেখে দলের অনেক নেতাই শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন, বিবৃতি সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু শমসের মুবিন চৌধুরী ওই বিবৃতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন বলে সাফ জানিয়ে দেন।
বিবৃতি জালিয়াতির বিষয়টি সংবাদকর্মীদের কানে এলে যোগাযোগ করা হয় শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে। ওই বিবৃতি নিজের নয় বলে সাংবাদিকদের জানান শমসের মবিন চৌধুরী। বিবৃতি নিয়ে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপি সভাপতি এম হক বলেন, ‘শমসের মবিন চৌধুরীর নির্দেশনায় তার নামে ওই বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।’ তবে, এখন কি কারণে শমসের মবিন চৌধুরী ওই বিবৃতি তার নয় বলছেন তা তিনি বুঝতে পারছেন না বলেও মন্তব্য করেন এমএ হক।
এদিকে মঙ্গলবার সিলেট মহানগর বিএনপি’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক মকসুদ আলী, দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল ওয়াছেহ্ চৌধুরী জুবের, কোষাধক্ষ্য ফরহাদ চৌধুরী শামীম ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিনার খাঁন হাসু এক যুক্ত বিবৃতিতে ভুয়া বিবৃতি প্রচার ও প্রকাশ থেকে বিরত থাকার জন্যে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
তারা বিবৃতিতে বলেন, ‘জিলু হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে দায়েরকৃত মামলাকে কনডেম করার জন্যে স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরীর নাম ব্যবহার করে প্রেরিত সিলেট মহানগর বিএনপি সভাপতি এম এ হক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমরা পত্র-পত্রিকা ও বিশ্বস্থ সূত্র থেকে জানতে পেরেছি, এম এ হক স্বাক্ষরিত বিবৃতি সম্পর্কে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী অবহিত ছিলেন না এবং তিনি বিবৃতিটি পত্রিকায় যাওয়ার পর জানতে পেরে একাধিক পত্রিকায় ফোনে বিবৃতি’র সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছেন।  যা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
আমরা মনে করি এই ভুয়া বিবৃতি প্রচার ও প্রকাশ বিএনপি’র রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরীকে অবহিত না করে, তাঁর নামে সিলেট মহানগর বিএনপি সভাপতি এম এ হক কর্তৃক প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়ে বিবৃতি দেয়ার হেতু কি তা বিএনপি’র নেতাকর্মীরা জানতে চায়।’
বিবৃতিতে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আমরা মনে করি এই ভুয়া বিবৃতি প্রচার ও প্রকাশ করে মহানগর বিএনপি সভাপতি তার পদের অপমান করেছেন, অবমাননা করেছেন রাজনীতিকে। তাই আমরা এ বিষয়ে তার ব্যাখ্যা চাই অন্যতায় তার পদত্যাগ। কারণ আমরা মনে করি ভুয়া এই বিবৃতি পত্রিকায় প্রেরণ করে তিনি তার বিশ্বস্থতা হারিয়েছেন যে কারণে আগামী দিনে রাজনীতিও তার কাছে নিরাপদ নয়।’
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন শুক্রবার নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় ছাত্রদলের মিজান গ্রুপের ক্যাডাররা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রদলের জামাল-মতি গ্রুপের নেতা জিল্লুল হক জিলুকে। জিলু গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন শেষে মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজানের হাত ধরে মহানগর ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। এরপর তাদের সঙ্গে মতপার্থক্যের জের ধরে তিনি জামাল-মতি গ্রুপে যোগ দেন।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ২৮জুন রাতে সিলেট মহানগর বিএনপি’র সহ-দপ্তর সম্পাদক মাহবুব কাদির শাহীসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০/১২ জনকে আসামি করে নিহতের বড় ভাই আহমেদ আহসান মাহবুব বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-৩৩(৬)১৪) দায়ের করেন। মামলায় মাহবুব কাদির শাহী (৪০) ছাড়াও ছাত্রদল নেতা জামাল আহমদ খান উরফে কালা জামাল (৩২), মদন মোহন কলেজ ছাত্রদল সভাপতি কাজী মেরাজ (৩৫), ছাত্রদল কর্মী জয়নাল আবেদীন (৩২), মো. ছাদিক (৩০), গাজী লিটন (৩৫), জেহীন আহমদ উরফে বোবা জেহীন (৩৫), আরাফাত চৌধুরী জাকির (৩৫), ইমাদ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী (৩০), ছালেহ আহমদ (৩৮), নেছার আলম শামীম (৩৫), ছায়েম আহমদ (২৮), কাউসার আহমদ (২৮), ফরিদ (২৫), এমরান আহমদ (৩০), নাছির উদ্দিন (৩৫), খাইরুল ইসলাম (৩৫), মনোয়ার হোসেন মঞ্জু (২৬), হেলাল আহমদ প্রকাশ কুলি হেলাল (৩৭) ও রায়হান খান বাবলাকে (২৬) এজাহারনামীয় আসামি করা হয়।

রেকর্ডের পর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহীন উদ্দিনকে। এজাহারনামীয় আসামিদের মধ্যে জিল্লুরের উপর হামলার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় রক্তমাখা রামদাসহ সায়েম আহমদ ও ফরিদকে আটক করে পুলিশ। তাদের এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আলোচিত এ মামলা রেকর্ডের পররদিন রাতে সিলেট মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি পাঠানো হয় গণমাধ্যমে। মহানগর বিএনপির সভাপতি এ্মএ হক ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালি পংকি স্বাক্ষতির ওই বিবৃতিতে উল্লেখ্য করা হয়, দলীয় নয়, স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারের বিরোধের জের ধরে ছাত্রদল নেতা জিল্লুল হক জিলু খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় বিএনপি নেতা মাহবুব কাদির শাহীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও তাকে মামলার আসামী করায় নিন্দা জানান বিএনপি নেতারা।
তারা বলেন, ঘটনার সময় জিলুর সাথে থাকা তার সহকর্মী ভুলন কান্তি তালুকদার যেসব হামলাকারীর নাম বলেছেন তার মধ্যে বিএনপি নেতা মাহবুবুল কাদির শাহীর নাম নেই। এমনকি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া দুজনও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাহবুবুল কাদির শাহীর নাম বলেনি। নেতৃবৃন্দ বলেন- একটি কুচক্রি মহল বিএনপির মধ্যে বিরোধ ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টির জন্য ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্ঠা চালাচ্ছে।