না.গঞ্জে ৭ মার্ডারে র‍্যাবের তিন কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত

ঘটনা তদারক করে মেজর আরিফ সহায়তা করে লে. কর্ণেল সাঈদ, লে. কমান্ডার রানা

three rab officerনারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার পুরো ঘটনাটি তদারক করেন র‍্যাব ১১-এর সাবেক মেজর (অব.) আরিফ হোসেন। আর তাকে সহায়তা করেন মন্ত্রী মায়ার লে. কর্ণেল সাঈদ আর লে. কমান্ডার রানা।
অপহরণের সময় মেজর আরিফ নিজেই স্পটে উপস্থিত ছিলেন। অপহরণের পর গাড়িতে তুলেই সাতজনের প্রত্যেকের শরীরে ইনজেকশন পুশ করে অচেতন করা হয়। কয়েক ঘণ্টা তাদের গাড়িতে রাখার পর পরিকল্পনা মতো নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে তাদের হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এই মিশনে মেজর আরিফ হোসেনকে সহায়তা করেন লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও লে. কমান্ডার এম এম রানা।
অপহরণ থেকে হত্যাকাণ্ড শেষ হওয়া পর্যন্ত নূর হোসেনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেছেন আরিফ। নূর হোসেনের সঙ্গে আরিফের ঘনিষ্ঠ সখ্য ছিল। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে নূর হোসেনের কাছ থেকে ব্যাপক আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। নূর হোসেনের সঙ্গে আরিফের মোবাইল কথোপকথনের অডিও টেপ, আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেয়া দুই প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি, ৩ র‍্যাব কর্মকর্তার রিমান্ডে দেয়া তথ্য থেকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেরেছেন। ফলে দুই দফা আদালতে তারেক সাঈদ কথা বললেও আরিফ কোন কথা বলেননি। তাকে বিমর্ষ দেখা গেছে।
সূত্র জানায়, আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমকে মারতে মেজর আরিফকে নিষেধ করেছিলেন লে. কামন্ডার এম এম রানা।
এছাড়া তদন্ত কমিটির রিমান্ডে থাকা এই তিন সেনা ও নৌ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে র‍্যাব ১১-এর আরও ১৪ কর্মকর্তার নাম। তাদের মধ্যে আরও একজন মেজর ও এএসপি রয়েছেন। র‍্যাব ১১-এর কুমিল্লার সিপিসি-টু’র পরিচালক মেজর শাহেদ, অপারেশন অফিসার এএসপি শাহরিয়ারসহ জড়িত ১৪ জন র‍্যাব সদস্যের মধ্যে সাতজন সেনা সদস্য ও ৫ জন বিজিবি সদস্য রয়েছেন- যাদের মধ্যে দু’জন র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট ১৪ জন র‍্যাব সদস্য বর্তমানে র‍্যাব ১১-তে কর্মরত আছেন। আগে থেকেই তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়ার অনুমতি চাওয়া হবে বলে জানায় তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র।
তৃতীয় দফা রিমান্ডের আবেদনে শুক্রবার বিকালে আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ওসি মামুনুর রশিদ মণ্ডল তার প্রতিবেদনেও বলেছেন, হত্যা মামলায় দুই আসামিকে ৮ দিনের রিমান্ডে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে নূর হোসেনসহ অন্য আরও অনেকের নাম বলেছে। তাদের কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেসব তথ্য যাচাই বাছাই এবং অন্য আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার জন্য এই আসামিদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালাতে হবে। তাছাড়া মামলাটির প্রধান আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে র‍্যাবের সাবেক এই তিন কর্মকর্তার গভীর সখ্য ছিল।
গত ২৭শে এপ্রিল একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের তিন দিন পর ৩০শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে নজরুল ও চন্দন সরকারসহ অপহৃত ৬ জনের এবং এর একদিন পর বাকি একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অপহরণে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় র‍্যাব-১১-এর সিও (অধিনায়ক) লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল ও জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামকে ২৯শে এপ্রিল প্রত্যাহার করা হয়। অপহরণের পর হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্পষ্ট হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৫ই মে লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেনকে সেনাবাহিনী থেকে এবং নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম.এম রানাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পরে হাইকোটের্র নির্দেশ ১৬ই মে রাতে ক্যান্টনমেন্ট থেকে লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও আরিফ হোসেনকে (অব.) ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৭ই মে তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। একই দিন রাতে ক্যান্টনমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় লে. কমান্ডার (অব.) এম এম রানাকে। ১৮ই মে আদালত তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ২২শে মে তারেক সাঈদ ও আরিফ হোসেনকে সাত খুনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ২৬শে মে এম রানাকেও সাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আজ রোববার অথবা কাল তাকে আদালতে হাজির করে আবারও রিমান্ড চাওয়া হতে পারে। এদিকে ৮ দিন রিমান্ড শেষে ৩০শে মে তারেক সাঈদ ও আরিফকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এই তিন র‍্যাব কর্মকর্তাকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।