সারি নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশে এলাকায় ক্ষোভ : উৎসমুখ ভরাটের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

Jaflongসুরমা টাইমস ডেস্কঃ গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত সারি নদী থেকে বালু উত্তোলনের উপর নিষেধাজ্ঞায় ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় এলাকাবাসী ও বালু শ্রমিকদের মধ্যে। বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞার কারনে এই উপজেলার কয়েক শতাধিক বালু শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে, পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের দাবি বালু উত্তোলন সম্পূর্ন বন্ধ করে দিলে ভরাট হয়ে পড়বে সারি নদীর উৎসমুখ। তাদের অভিমত, সরকারের উদ্যোগে নদী ড্রেজিং করার পূর্ব পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সারি নদী থেকে বালু উত্তোলন করা যেতে পারে। 
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৩ ফেব্র“য়ারি সারি নদীর স্বচ্ছ পানি প্রবাহ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর দায়েরকৃত এক রিটের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত এ নদী থেকে বালুসহ সকল প্রকার খনিজ দ্রব্য উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে গত ৬ এপ্রিল জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম এক আদেশে সারি নদী থেকে বালিসহ সকল প্রকার খনিজ সম্পদ উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেন।
এদিকে, প্রশাসনের এ ঘোষণায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বালু উত্তোলনের উপর নির্ভরশীল স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। শ্রমিকরা জানান, সারি নদীর বাগছড়া থেকে পুটিখাল পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা নাব্যতা হারিয়ে বালুচরে পরিণত হয়েছে। শুকনো মৌসুমে নদী ভরাট হয়ে ছড়ায় পরিণত হয়। ভারতের পাহাড় থেকে ঢলের সাথে বালু নেমে ভরাট হয়ে পড়ছে নদীর উৎসমুখ। উৎসমূখ থেকে বালু উত্তোলন করা না হলে নদী ভরাট হয়ে যাবে।
জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আবদুল কাদের বলেন, বেলচা আর বালতির সাহায্যে বালু উত্তোলন করে শ্রমিকরা নদীর নাব্যতা রক্ষায় ভূমিকা রাখছেন। দেশের বালুর চাহিদাও মেটাচ্ছেন। বালু উত্তোলন বন্ধ এই এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি মো. আবদুল হাই বলেন, ভারত কর্তৃক উজানে বাঁধ নির্মানের কারনে সীমান্ত নদী সারি ভরাট হতে শুরু করেছে। এই ভরাট অংশ থেকে প্রচলিত পদ্ধতিতে বালু তুললে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাবে ও স্বাভাবিকতা বজায় থাকবে। এ ব্যাপারে নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে আরো চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন এবং উত্তোলনের জন্য পরিবেশবান্ধব সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মো. নুরুদ্দিন বলেন, ঢালাওভাবে স্থানীয় জনগন ও শ্রমজীবী মানুষদের পরিবেশের প্রতিপক্ষ ভাবা অনুচিত। সারি নদীর যে অংশ থেকে বালু উত্তোলন করা হয় তা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহের অন্তরায় নয় বরং সহায়ক। এ ব্যাপারে জনগনকে পরিবেশের মুখোমুখি দাঁড় না করিয়ে পরিবেশের বন্ধু করা প্রয়োজন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড এনভায়রমেন্টাল সায়েন্সের বিভাগীয় প্রধান ড. জহির বিন আলম বলেন, নদীর বুকে জেগে উঠা চর অপসারন করে নাব্যতা ঠিক রাখা সরকারের দায়িত্ব। সারি নদীতে সে দায়িত্ব স্থানীয় জনগনই পালন করছে। এটা অবশ্যই পরিবেশবান্ধব।