ইউপি সদস্য থেকে জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক শামীম অপরাদ জগতের সম্রাট

Shamim-JAPAস্টাফ রিপোর্টার :: তিনি জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক। নিজেকে প্রভাবশালী মনে করেন। প্রভাব প্রতিপত্তি আর বিতর্কিত কর্মকান্ড যেনো তাকে ঘিরে রেখেছে। ছোটখাটো অপরাধ থেকে শুরু করে বৃহৎ অপরাধের সাথেও তার যোগাযোগ প্রকট। তার নাম ইশরাকুল হোসেন শামীম। দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা। অপরাধরাজ্যে তার বিচরণ অনেক আগে থেকেই। সাবেক এই ইউপি সদস্য মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বনে যান। এক সময়ের সুরমা মার্কেট কেন্দ্রীক অপরাধ চক্রের নিয়ন্ত্রক শামীম ক্ষমতার দাপটে কাউকে পরোয়া করেন না। এই ক্ষমতার দাপট দেখাতে গিয়ে তিনি জজের টিলার খুটি উপড়ে ফেলতেও পিছপা হননি। তার বিরুদ্ধে জজের পেশকার কোতোয়ালি থানায় মামলা করলে বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।
এক কালের যুবসংহতি নেতা শামীমের উত্থান মূলত সিলেটের বিতর্কিত সুরমা মার্কেট থেকে। সুরমা মার্কেটের সকল জালিয়াতি আর জুয়ার আসরের নিয়ন্ত্রক হিসেবে তার পরিচিতি ছিলো। এছাড়া বন্দরবাজার কেন্দ্রিক সকল অপরাধের নিয়ন্ত্রক হিসেবে সুরমা মার্কেট এলাকার আতঙ্কের আরেক নাম ছিলো শামীম। দক্ষিণ সুরমায় যুবসংহতি ও জাতীয় পার্টির নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপকর্ম করায় ওয়ান ইলেভেনের সময় গণধোলাইর শিকার হন শামীম। যার চিহ্ন আজো তার শরীরে রয়ে গেছে।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর শামীম বেপরোয়া হয়ে উঠেন। জাতীয় মহিলা পার্টির নেতা-কর্মীদের সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে। কথিত আছে জাতীয় মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদিকা হেনা বেগমের সাথে রয়েছে তার অবৈধ সম্পর্ক। শিশু অপহরন ও মুক্তিপন আদায়কালে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া হেনা বেগমকে মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে নানা তদবির করেছেন শামীম। আর এ সকল বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য তিনি আলোচিত সমালোচিত। দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগে পার্টি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ যাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খলতা, পার্টি অফিসে মাদক সেবন, ফৌজদারী মামলায় বিতর্কিত হচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
সিলেট নগরীর ধোপাদীঘিরপারে জাপার কেন্দ্রিয় নেতা আতিকুর রহমানের বাসভবনে সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির অফিস। এ অফিসে জাতীয় পার্টি, মহিলা জাতীয় পার্টি, যুব সংহতি ও ছাত্রসমাজের নেতাকর্মীদের দেখা যায় অফিসে। পার্টি অফিস নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই নেতাকর্মীদের। নানা ধরণের অনিয়মের জন্ম হচ্ছে এখানে।
লিখিত অভিযোগে নেতাকর্মীরা পার্টি চেয়ারম্যানকে জানান, জাতীয় পার্টির অফিস সন্ধ্যার পর থেকেই জেলার নেতাদের দখলে চলে যায়। এ সময় জাতীয় মহিলা পার্টি কিংবা যুব সংহতি ও ছাত্রসমাজের নেতাদের অফিসে দলীয় কার্যক্রম করতে বাধা দেওয়া হয়। রাত বাড়ার সাথে সাথে পাল্টে যায় অফিসের চিত্র। অফিসের ভেতরে বসেই ধুমপানের পাশাপাশি অনেকে মাদকদ্রব্যও সেবন করেন। সকালে অফিসে গেলে দেখা যায় এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চেয়ার টেবিল। যেনো ঝড়ের দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে গোটা কার্যালয়। সিলেটে আওয়ামী লীগের কোনো অফিস না থাকলেও মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির অফিস রয়েছে। প্রায়ই সকাল বেলা অফিসে ফেনসিডিলের খালি বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ড চলে অফিসে। কেউ বাধা দিলে তাকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হয়। মহানগর মহিলা পার্টির সভাপতি দিবা রানী দে দায়িত্ব নেওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কারণ দিবা রানী কোনো কোনো নেতার অনৈতিক দাবিতে সাড়া দেয়নি। এছাড়া শিশু অপহরণ মামলার আসামী জেলা মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদিকা হেনা বেগমও জেলার সাধারণ সম্পাদক ইশরাকুল হোসেন শামীমের শেল্টারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বার বার মৌখিকভাবে তাকে সতর্ক করা হলেও তা আমলে নিচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইশরাকুল হোসেন শামীমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি সরকারের অংশ। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ থাকায় অনেকে নানা ধরণের অভিযোগ করে থাকেন। তবে এ সকলের কোনো ভিত্তি নেই।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক জানান, ইশরাকুল হোসেন শামীম ও হেনার বিরুদ্ধে দলের অনেকে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারো ব্যক্তিগত অপরাধের দায়ভার জাতীয় পার্টি বহন করবে না।