বাস্তব জীবনের গল্প : জাহিদ উদ্দিন

না দেখেই তোমাকে ভালবেসে যাবো

romantic eyeজাহিদ উদ্দিন:২০১৫ সালের ৯ মার্চ! গভীর রাত্রি।আকাশ চাঁদের আলোয় ভরপুর।চাঁদের আলোয় চারিদিক আলোকিত। সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।চারিদিকে কোন সাড়া শব্দ নেই।শুধু ঝিঝি পোঁকার শব্দ শুনা যাচ্ছে।আমার দু’চোঁখ থেকে অশ্রু বের হচ্ছে।বুক ফেটে যাচ্ছে কষ্টের বজ্রধ্বনিতে।রাত যেন শেষ হচ্ছে না।চোঁখের অশ্রুতে বালিশ ভিজে গেছে।আগামি কাল ৯ মার্চ।এই দিনটা হয়তো আমাকে সারাজীবন কষ্ট দিবে।কালকের সূর্য আমাকে আলোর বদলে অন্ধকারই দান করবে।নিজে নিজেকেই বলছি,যদি আগামী কালের সূর্য যদি না উদয় হত।তাহলে আমার প্রিয় মানুষটাকে হয়তো হারাতাম না।কিন্তু সূর্যকি শুনবে আমার কথা?না শুনবে না।ও তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।কালকের পর থেকে আমাকে কেউ এমন ভালবাসা মাখা সুরে বলবেনা এই তুমি কি ব্রেকফাস্ট করেছো?অসুস্থ হলে বলবেনা চিন্তা করনা তুমি সুস্থ হয়ে যাবে?সারা রাত চোখের কিনারায় ঘুম আসেনি। সারা রাত কষ্টের সাগরে ডুব দিয়ে সূর্যের আলোর দেখা পেলাম।এই আলো যেন আমার জন্য অন্ধকারের হাতছানি।যে প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে আমার এই লেখা তার নাম রিয়া জাহান।রিয়াকে ভালবাসি আমি ৪ বছর ধরে।অনেক মেয়েই আমাকে ভালবাসার বাঁধনে জড়াতে চেয়েছিল, কেউ পারেনি,রিয়া আমাকে সেই বাঁধনে জড়িয়ে নিয়েছিল।আজ সে সেই বাঁধন ছেড়ে অন্যের বাঁধনে জড়িয়ে যাবে।আমি এই বাস্তব সত্যটা যেন মেনেই নিতে পারছিনা।পরিবারের কথা ভেবে রিয়া আমার ভালবাসার ইতি ঘটাতে যাচ্ছে।পরিবারের সম্মানকেই প্রাধান্য দিতে রিয়া আর আমার এই ত্যাগ।আমার বাঁধনকে ছেড়ে যেতে রিয়াও চায়নি।সবার দিকে চেয়ে সে তার কষ্টকে চাপা রেখেছে।আমার পেটে রাতেও কিছু পড়েনি। সকালে মায়ের অনুরুধে অল্প হালকা খাবার খেলাম।মা জানেন আমি শারিরিক ভাবে অসুস্থ।হালকা খাবার শেষে বিশ্রামের উদ্দেশ্যে মাথা বালিশে লাগালাম।লাগাতেই দু চোখে বেসে এল রিয়ার ভালবাসামাখা মুখ।সারা দু’নয়নে ঘুম আসেনি, তাই রিয়াকে কল্পনা করে করে ঘুমের রাজ্যে ডুবে গেলাম।মোবাইলে হঠাৎ রিংটোন বেজে উঠলো। আমি রিংটোনের শব্দে ঘুমের রাজ্য থেকে ফিরে এলাম।মোবাইল ইস্কিনে চোখ ভুলালাম।দেখি রিয়ার চাচাতো ভাই সুমন আমাকে কল করেছে।কল রিসিভ করে তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি জন্য আমাকে ফোন দিয়েছো?সে আমাকে জবাব দিল, “জাহিদ রিয়া কবুল বলতেছেনা।তুই ছাড়া রিয়ার মুখে কেউ কবুল বলাতে পারবেনা।তুই কিছু কর জাহিদ।তানা হলে মান-সম্মান বাচানো দায় হয়ে দড়াবে”।একটা কথা বলা ভাল কবুল হল ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী পুরুষ মহিলা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ায় বৈধ মাধ্যম।তখন আমি সুমনকে বললাম , রিয়ার কানে ফোনটা ধরে রাখতে,সে ধরে রাখলো,আমি রিয়াকে বললাম যদি তুমি এরকম কর তাহলে আমি বুঝবো তুমি কখনো আমাকে ভালবাসনি।যদি আমাকে সত্যি ভালবাস তাহলে বিয়ের সম্মতি দিয়ে দাও। এই বলে আমি কল কেটে দেই।কয়েক মিনিট পর সুমন আমাকে কল করে বলে রিয়া বিবাহের সম্মতি দিয়ে দিয়েছে।শুনে আমি বাক শক্তি হারিয়ে ফেললাম।সে দিন আকাশের দিকে অনেক তাকিয়ে ছিলাম।আকাশের সূর্যটাকে অভিমানের সুরে বলেছিলাম,তুমি যদি আজ উদয় না হতে তাহলে আমার প্রিয় মানুষটাকে হারাতাম না।সূর্য আমাকে কোন জবাব দেয়নি।প্রায় তিন চার মাস কারো সাথে ভালকরে কথা বলিনি আমি।মুখে কোন হাসি ছিলনা।যে আমি সব সময় হাসিখুশি থাকতাম,সেই আমি মনমরা হয়ে থাকতাম।সব সময় রিয়ার সাথে জড়ানো স্মৃতিগুলো আমাকে কষ্ট দিত।লেখাপড়ায় আমার কোন মন নেই।এভাবে কেটে যায় প্রায় তিন-চার মাস।এরপর কালের আবর্তে সময়ের খেলায় আবারো আমি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠি। আমি রিয়াকে ভালবেসে ছিলাম তার কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশায় না বরং আমি রিয়াকে কিছু দেওয়ার জন্যই ভালবেসে ছিলাম।তাইতো আমি তাকে নিঃস্বার্থ ভালবাসা দিয়েছিলাম।পৃথিবীতে কি শুধু ভালবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্যই ভালবাসে খাঁটি প্রেমিকেরা?না,ভালবাসার মানুষকে দূর থেকে মন উজাড় করে ভালবাসাই আমি মনে করি প্রকৃত ভালবাসার পরিচয়। ভালবাসার মানুষকে সুখি দেখে খুশি হওয়ার নামই ভালবাসা। আমি চেয়েছিলাম সে সুখি হোক।জানিনা সে সুখি হয়েছে কিনা।আমি তার জন্য প্রতিদিন প্রার্থনা করি সে জেন তার নতুন ঠিকানায় ভাল থাকে।জান রিয়া আজও আমি তোমাকে কল্পনা করে ঘুমের সাগরে ডুব দেই।তোমাকে কল্পনা না করে আমার ঘুম আসেনা।তুমার দেওয়া উপহারাদি আজও যত্ন করে রেখেছি।কারো হাতের স্পর্শ লাগতে দেইনা।জানিনা আর কোনদিন তোমার সাথে দেখা হবে কিনা।না দেখেই তোমাকে আমি বাকি জীবন ভালবেসে যাবো।