দক্ষিণ সুরমায় গন্ধগোকুলে চোখে বল্লমের ঘাঁ!

gondhogokulনুরুল হক শিপুঃ লোকালয়ে অবস্থানকালে উৎসুক মানুষের বল্লমের ঘা খেয়ে আহত হয়েছে একটি গন্ধগোকুল। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের কুচাই গ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার ১০ কেজি ওজনের গন্ধগকুল প্রাণীটি আটক করা হয়। পরে গন্ধ গকুলকে নিয়ে আসা হয় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটেরিনারী ক্লিনিকে। সেখানে প্রাণীটিকে বাঁচাতে সংশিষ্ট চিকিৎসকরা প্রায় আড়াই ঘন্টা অপারেশন করে আঘাতের স্থানে সেলাই দিয়েছেন।
অপারেশন পর চিকিৎসকরা জানান, গন্ধ গকুলের অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। এখন সে আশঙ্কামুক্ত। তার শরীরের বিভিন্নস্থানে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। সেরে ওঠতে যে ধরণের ওষুধ প্রয়োজন তাও খাওয়ানো হচ্ছে তাকে।
গতকাল সকালে কুচাই ইছরাব আলী হাই স্কুল ও কলেজের পশ্চিমের রেজাউল করিম রাজনের বাড়ি ছাদের ওপর থেকে তাকে আটক করা হয়। তাকে আটক করতে প্রথমে একটি বলম দিয়ে তার পাঁয়ে ঘাঁ দিয়ে আহত করা হয়। এরপর একটি বস্তা দিয়ে তাকে চেপে ধরে আটকিয়ে দড়ি দিয়ে তার শরীর বেধে ফেলা হয়। এরপর রাজন আহমদের ছোট ভাই জুবের আহমদ বুঝতে পারেন গন্ধ গকুল প্রাণীটি মুল্যবান বিরল জাতেরপ্রাণী। তিনি প্রাণীটিকে খাওয়ার দিয়ে বাঁচিয়ে রেখে খবর দেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটেরিনারী ক্লিনিকে। সংশিষ্টরা তাকে প্রাণীটি দ্রুত ক্লিনিকে নিয়ে যেতে অনুরোধ করেন। এরপর জুবের ও তার ২ বন্ধু কামরান ও রাসেল গন্ধ গকুলকে নিয়ে আসেন ভ্যাটেরিনারী ক্লিনিকে। সেখানে চিকিৎসকরা প্রায় আড়াই ঘন্টা অপারেশন করেন তার।
জুবের আহমদ জানান, প্রাণীটিকে বাঁচাতে চিকিৎসকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। দীর্ঘ সময় অপারেশন চালিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটেরিনারী ক্লিনিকের সার্জেন ও মেডিকেল বিভাগের প্রভাষক ডা. মো মতিউর রহমান জানান, ১৯৯৫ সালে ভ্যাটেরিনারী ক্লিনিক হয়েছে এর মধ্যে এই প্রথম গন্ধ গকুল প্রাণীটির সন্ধান পাওয়া গেছে। আহত ওই প্রাণীটি এখন অনেকটা সুস্থ। শরীরের প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ টি সেলাই রয়েছে। এখন সে আশঙ্কা মুক্ত। তিনি বলেন, গন্ধ গকুল সম্পূর্ণ সুস্থ হলে তাকে আমরা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করবো।
গন্ধগোকুল নিশাচর প্রাণী। খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশ কিছু এলাকায় এদের দেখা মেলে। ধূসর রঙের এই প্রাণিটির অন্ধকারে অন্য প্রাণির গায়ের গন্ধ শুঁকে চিনতে পারার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। প্রায় পোলাও চালের মতো তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে থাকে প্রাণীটি। একসময় এর শরীরের গন্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।