বালাগঞ্জের ইতিহাসে সর্বগ্রাসী বড়ভাগা নদী এখন বড় অভাগা

picturesশাহ মো. হেলাল, বালাগঞ্জঃ বালাগঞ্জের বড়ভাগা নদীর স্থানে স্থানে দখলের প্রতিযোগীতা শুরু হওয়ায় ও অধিক নাব্যতায় চর গজিয়ে উঠায় বড়ভাগা নদী এখন যেন খালে পরিনত হয়েছে। যে নদীর উত্তাল তরঙ্গে কম্পিত ছিল মানুষের প্রাণ, কালের পরিবর্তনে সে আজ নিজের অস্থিত হারিয়ে বসেছে। নদীটির এই পরিবর্তনের ধারায় তার নামও পাল্টে কে যেন নাম দিয়েছে বড় অভাগা। ইতিহাসের পাতায় যদিও আদি একটা নাম রয়েছে বড়ভাগা।

সুরমা নদীর একটি শাখা বড়ভাগা নাম ধারণ করে সুরমা নদী থেকে মেদি -বানাইয়া হাওর ছুঁয়ে মোগলা বাজার, সিলাম, জালালপুর, দয়ামীর, দেওয়ানবাজার, উসমানপুর, পশ্চিম গেীরীপুর, বোয়ালজু হয়ে প্রায় ৬০কিলোমিটার আকাবাকাঁ পথ পাড়ি দিয়ে বালাগঞ্জে সদরে এসে কুশিয়ারার সাথে মিলিত হয়েছে।
জানা যায়, এক সময় এই বড়ভাগা নদীর করাল গ্রাসে নদীর গর্ভে তলিয়ে গেছে অনেক মানুষের প্রাণ, বসতী ঘর-বাড়ী, ক্ষেতের ফসল। বর্ষাকালে বড়ভাগার বাঁধভাঙ্গা ঢেউয়ের গর্জনে মানুষ দিশেহারা হয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতো। ইতিহাসের সেই সর্বগ্রাসী নদী এখন তার বুকে আশ্রয় দিচ্ছে শত-সহস্্র মানুষকে। শুকিয়ে যাওয়া বড়ভাগার দু’পাশে এমনকি কোথাও মধ্য খানে গড়ে উঠেছে শতাধিক গ্রাম হাজারো মানুষের বসতি। স্থানে স্থানে নদী দখলের প্রতিযোগীতা শুরু হওয়ায় ও অধিক নাব্যতায় চর গজিয়ে উঠায় বড়ভাঙ্গা এখন মৃত প্রায়।
এক সময় এই নদীতে জেলেরা মাছ ধরতেও সাহস পেত না। এ নদীর জোয়ারে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন এমন দৃষ্টান্তÍও রয়েছে। কিন্তু এখন এ নদী ছোট ছেলে মেয়েদের খেলার সাথী হয়ে গেছে। এর প্রস্থ্য এখন মাত্র ১৩-১৭ ফুট। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে এই মরা নদীতে কিছুটা পানি জমাট হলেও কোন স্রোত থাকে না। অন্যান্য মৌসুমে শুধু পলক দেখা যায়। মনে হয় না এটা একটা বিশাল নদী ছিল। ১৮২২ সালে আসামে চা শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে চালু হয় আসাম-কলকাতা নৌ রাস্তা। বড়ভাগা নদী দীর্ঘদিন যাবত সংস্কারের অভাবে জল শুণ্যতায় এখন চলছে বালুর শাসন।
কতিত আছে ভারতের করিমগঞ্জ বায়া প্রায় ১২৮০ কিলোমিটার ব্যাপি বি¯তৃত বড়ভাগা নৌপথে পনেরটি গুরুত্বপূর্ন ঘাটে স্টীমার ও লঞ্চ নোঙ্গর করত। এর মধ্যে বালাগঞ্জ বাজার স্টীমার ঘাটে যাত্রাবিরতি ছিল তুলনার চাইতে বেশী। এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন লঞ্চ ও নৌ সার্ভিস ছিল। বড়ভাগা নদী একদিন তার আপন সৌন্দর্যে প্রকৃতিকে সৌন্দর্যমন্ডিত রেখেছিল। বিস্তৃর্ণ জনপদে এ নদীর সেচের পানিতে চলতো চাষাবাদ। অনেক পরিবারের প্রতিদিনের চাহিদা মেটাত এই বড়ভাঙ্গা নদীতে। দিন দিন যেন নিথর হয়ে আসছে তার গতিপথ। জোয়ারের পরিবর্তে আজ কেবল দু’ফোটা অশ্রুই যেন বড়ভাগার বুকে। নদীতে বিশেষ স্বার্থানেষী মহল যেন দখল দখল খেলায় মগ্ন। সরকারের সুদৃষ্টি এবং সংষ্কার পেলে হয়তো কিছুটা হলেও ফিরে পেতে পারে বড়ভাঙ্গা নদী তার প্রাণ।