“জীবন দ্বারা যৌবন প্রভাবিত? যৌবন দ্বারা জীবন প্রভাবিত?”

আজ আমরা “জীবন যদি বলি তাহলো একজন মানুষ তার জন্ম থেকে মৃত্যুর মধ্যখানে যতটুকু সময় পায়, তাই তার জীবন কাল” এই জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় তার যৌবন কাল, আর যা ঘটার ঘটে এই যৌবনেই, যৌবনই একটা মানুষের সর্বোচ্চ সম্পদ হতে পারে। যৌবন যদি তার জীবনের পথে ব্যায় করে। তাহলে এ জীবনই হবে শ্রেষ্ঠ জীবন, এই জীবনই হয় সৃষ্টির জীবন নতুন কিছু তৈরি করার, নতুন কিছু দিয়ে যাওয়ার জীবন, এ দেশকে, সমাজকে। জীবনের প্রয়োজন কি, জন্ম সূত্রে মা-বাবা, সৃষ্টির সূত্রে শ্রষ্ঠা, পরিবেশের সূত্রে সমাজ, স্বাধীনতার সূত্রে দেশ।
সবাই আশা করে ভালো কিছু আর তখনই পাবে তারা তোমার ভালো কিছু করার মাধ্যমে। কারণ তোমার ভালো কাজের জন্য যেমন দেশ গর্বিত, সমাজ, মা-বাবা সবাই প্রশংসিত। তেমনই খারাপ কাজের জন্য দেশ, জাতি, সমাজ সবাই কলঙ্কিত হয়।
যৌবনকাল হচ্ছে লক্ষ্যহীন নদীর স্রোতের মত, যে দিকে পথ পাবে সেদিকেই গড়াবেই। এই যৌবন চায় চরম স্বাধীনতা, বন্ধনের সীমানা ছাড়িয়ে যায় তাদের স্বপ্ন। গর্জে উঠে অন্যানের প্রতিবাদের ধ্বনি নিয়ে, তেমনি কেঁদে উঠে মন অসহায়ের মুখ দেখে। আবার শৃঙ্খলতার বন্ধন ছিড়ে উশৃঙ্খলতায় জড়িয়ে পড়ে, অন্যায় পথে প্রভাবিত হয় যা একটি জাতিকে কলঙ্কিত করতে পারে।
আমাদের এই লক্ষ্যহীন যৌবনেই লক্ষ্য স্থীর করতে হবে জীবনের প্রয়োজনে। জীবন সাজাতেই যৌবনকে ব্যয় করতে হবে, যৌবনকে নিয়ে আসতে হবে জীবনের পথে, “জীবন দ্বারাই যৌবনকে প্রভাবিত করতে হয়” যৌবন ধর্ম যেন এরকমই হয়…………. যৌবন আমায় ডাক দিয়েছে/রক্তের কণায় জ্বলছে আগুন/অঙ্গে আমার বইছে যেন চেতনার ডাক/এই সময় শিখেছি অন্যায়ের প্রতিবাদ।

ভরা যৌবনে কবি সুকান্ত লিখে গেছেন- রক্তে আনো লাল/রাত্রীর গভির বৃন্ত থেকে ছিড়ে আন ফুটন্ত সকাল। কিন্তু সুকান্তের এই ফুটন্ত সকালের মুখ আমাদের এই বাংলা একাত্তরের পর বোধহয় আর দেখেনি। আমাদের সমাজ আজ বিপদগামী, কারন আমাদের তারণ্য শক্তি আজ ভিবক্ত।
আমি এই তরুণদের তিনভাগে ভিবক্ত হতে দেখি। ১. অসভ্য ২. সভ্য ও ৩. তারুণ্যের আলো।
অসভ্য তারুণ্য শক্তি যারা ফুল তুলিতে নষ্ট ফুলে হাত ভুলিয়েছে, তারা জানে খুব সকালে বা আধার রাতে না হয় দিন দুপুরে কেড়ে নিতে ফুটন্ত প্রাণ। ক্যাম্পাস জুড়ে ঘড়িয়ে বেড়ায় অস্ত্র হাতে, রক্ত জড়িয়ে শান্ত হয় তাদের প্রাণ, শিক্ষককে লাঞ্চিত করে তাদের বৈশিষ্ট্যের তালিকায় যোগ হয় রাজপথের যুদ্ধা, রাজপথকাপানো, ন্যায়ের পথিক, মেধাবী ছাত্রনেতা বা জননেতা ইত্যাদি বুশিত করে সম্মান করা হয় তাদেরকে। এটাই আমাদের বর্তমান রাজনীতির অবস্থা। যারা ছাত্র রাজনীতি করে তাদেরকে শুধু দায়ী করা যাবে না, কারণ তাদের পিছনে কিছু ইউপুকা রয়েছে যারা তাদের শক্তি যোগান দেয়। তা না হলে একজন মেধাবী ছাত্র মেধা লড়াইয়ে ফাস্ট হয়েইত ঢাবি, শাবি, চবি ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তারপরে সে রাজনৈতিক নেতা কিভাবে হয়? অস্ত্র কোথায় পায়? সেগুলো কি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে বইয়ের পাশাপাশি অস্ত্রও জমা থাকে। না তা কখনও সম্ভব নয়। তাহলে এগুলো কোথা থেকে আসে?
সভ্য তারুণ্যদের কবি নজরুল ইসলাম হয়ত তাদেরকে ভালো করে চিনেছিলেন, তাই লিখেছেন “বহুযুবককে দেখিয়াছি যাহাদের যৌবনের ঊর্দীর নিচে বার্ধক্যের কঙ্কাল মূর্তি।” আমার মনে হয় এই সভ্য তারুণ্য তারাই যারা অসভ্য শক্তির প্রভাব দেখে সভ্যতার মুখোশ পড়ে দর্শক হয়ে আছে। কারো ভালতেও নেই মন্ধতেও নেই, অন্যায় হলেও ঠিক ন্যায় হলেও ঠিক আছে। যেটাই হোক দর্শক হয়ে দেখে দেখে উপভোগের মজাটাই তাদের কাছে বেশ কাজের মনে হয়। অলসতাই তাদের যৌবনকে বেধে রেখেছে ঘর কোণ করে।
তারুণ্যের আলো যারা জীবন যুদ্ধে জয় পরাজয় মেনে নিজেকে দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য নিয়োজিত করেছে, যারা তাদের সফল কর্মের জন্য উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছে। তাদের প্রতিবিন্দু যৌবন জীবন সাজাতে ব্যয় করে তারাই হলো তারুণ্যের আলো। হয়ত তারাই আমাদেরকে একটি উন্নত জাতি উপহার দেবে। “যে জাতির ছাত্র সমাজ যত উন্নত, সে জাতির ভবিষ্যৎ তত আলোকিত।”